মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান

চেয়েছিলেন জ্যাকের বড়ভাই হেনরি যেন বেহালা বাজানো শেখে। বেহালা বাজানো শেখার কাজ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য জ্যাক বলেছিল, এই অতিরিক্ত কাজের বোঝা নিয়ে স্কুলে ভালো ফলাফল করতে পারবে না। সুতরাং তার ভাই একটা নিষ্প্রাণ বেহালা থেকে কায়ক্লেশে অতি ভয়ঙ্কর কিছু শব্দ বাজাতে শিখেছিল। সে কয়েকটা নকল সুরে জনপ্রিয় গান বাজাতে পারত। কণ্ঠ ভালো থাকায় জ্যাকও ওই গানগুলো গাইতে পারত। তবে ওই নিষ্পাপ অবসর বিনোদনের ভয়াবহ ফলাফল সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা ছিল না।

নানির বিবাহিত মেয়েদের দুজন তাদের স্বামীদের হারিয়েছিলেন যুদ্ধে। তারা এবং অন্য বিবাহিত মেয়েরা রবিবারে বেড়াতে আসতেন। নানির আরেক বোন ছিলেন। তিনি সাহেলের এক খামারে বাস করতেন এবং স্প্যানিস ভাষার চেয়ে অবলীলায় বরং মাহুন উপভাষায় কথা বলতেন। তারা সবাই রবিবারে কেউ না কেউ আসতেনই। আর তখন নানি তার নাতিদের ডাকতেন তাদের সামনে প্রত্যুৎপন্ন সংগীতের কনসার্টের জন্য। দুরু দুরু বুকে তারা সংগীতের একটা ধাতব স্ট্যান্ড এবং সুপরিচিত সুর সংবলিত খাঁজকাটা দুটো পৃষ্ঠা নিয়ে আসত।

তাদের ওই দায়িত্ব থেকে রেহাই ছিল না বলে হেনরির বেহালার আঁকাবাকা সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে জ্যাক র‌্যামোনার গান গাইত: র‌্যামোনা, আমি একটা অদ্ভূত স্বপ্ন দেখেছি; শুধু তুমি আর আমি চলে এসেছি, শুধু তুমি আর আমি; কিংবা, নাচো, ও আমার প্রিয়তমা, আজ রাতে শুধু তোমাকেই ভালোবাসবো। কিংবা প্রাচ্যে থেকে যাওয়ার গান: চীনের রাত, আদর সোহাগের রাত, প্রেমের রাত, পরমানন্দের রাত, কোমলতার রাত–ইত্যাদি ইত্যাদি। কোনো সময় নানি তাদেরকে জীবনমুখি গান গাইতে বলতেন। জ্যাক গাইত, প্রিয়তম, সত্যিই এই তুমি কি সেই তুমি যাকে আমি এত ভালোবেসেছি, যে আমাকে কথা দিয়েছিলে। খোদা জানেন, তুমি কথা দিয়েছিলে কখনও কাঁদাবে না আমাকে। এই গানটিই জ্যাক খুব দরদ দিয়ে গাইত। কারণ গানের বিষয়বস্তুর নায়িকা একদল লোকের ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে মর্মস্পর্শী ধ্রুবপদ বার বার গাইত: তখন তার সামনে যেন তার অবাধ্য প্রেমিককে ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে।

তবে নানির পছন্দ ছিল আরেকটা গান; সে গানটার বিষাদময় কোমল সুর যেন তার অন্তর ছুঁয়ে যেত। গানটা ছিল টসেলির সেরেনাদ। সে গানটাতে হেনরি এবং জ্যাক তাদের নিজস্ব ভঙ্গির মিশেল দিত। অবশ্য আলজেরীয় উচ্চারণ গানটির নৈশকালীন মুগ্ধ আবহ ফুটিয়ে তোলার জন্য উপযুক্ত ছিল না। রৌদ্রজ্জ্বল বিকেলে এবড়ো থেবেড়ো করে সাদা রং করা দেয়ালের হতদরিদ্র অবস্থায় সজ্জিত রুমে কালো পোশাক পরিহিত চার পাঁচজন মহিলা স্পেনদেশীয় মহিলাদের মাথা এবং কাঁধ ঢাকার কালো ওড়না দিয়ে তাদের মাথা থেকে নামিয়ে হেনরি এবং জ্যাকের গানের কথা আর সুরের সঙ্গে হালকাভাবে মাথা দোলাতে থাকতেন। নানি অবশ্য অন্যদের মতো কালো ওড়না ব্যবহার করতেন না।

সারেগামার প্রথম সা থেকে শেষের সা পর্যন্ত কোনোটাই তিনি উচ্চারণ করেননি কোনোদিন এবং সুরপরম্পরার সংকেতগুলোর নামও জানতেন না। তবু হঠাৎ যখন তিনি কাঠখোট্টাভাবে বলে উঠতেন, এই যে এখানে ভুল হয়ে গেল, তখনই অন্যদের মাথা দোলানো বন্ধ হয়ে যেত। আর গায়ক এবং বাদকের পালের হাওয়া যেত পড়ে। দুরূহ যাত্রা যখন তার রুচিকে সন্তুষ্ট করার পর্যায়ে চলে এসেছে নানি বলে উঠতেন, আমার ওসব জানা আছে। আবার গান শুরু হলে মহিলারা মাথা দোলানো শুরু করতেন এবং গান শেষে দুজন কলাকোবিদকে বাহবা দিতেন। গায়ক বাদকও তাদের সরঞ্জামাদি তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য রাস্তায় বের হয়ে যেত। শুধু ক্যাথরিন করমারি এক কোণে চুপচাপ বসে থাকতেন।

জ্যাকের আজো মনে আছে, একদিন গানের পালা শেষ করে তারা বের হচ্ছে কোনো এক খালা তার গানের প্রশংসায় মাকে কিছু একটা বললেন এবং মা তার জবাবে বললেন, ভালোই পারে। ছেলের বুদ্ধি আছে। কথাটা শুনে জ্যাকের মনে হলো, মায়ের কথাদুটো আলাদা। তবে দুটোর মধ্যে কোথায় যেন একটা সংযোগ আছে। বের হওয়ার সময় পেছন ফিরে তাকিয়ে জ্যাক পরিষ্কার বুঝতে পারল, সংযোগটা কোথায়: মায়ের মুখমণ্ডল জুড়ে শিহরণ, তার শান্ত চোখ জোড়ায় উপচেপড়া ব্যাকুলতা। মায়ের গভীর অর্থময় দৃষ্টি যেন তাকে পিছে টানছে, দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে। এরপর জ্যাক ছুটে বেরিয়ে গেল। মা আমাকে ভালোবাসেন। মা তাহলে ভালোবাসেন আমাকে–সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে নিজেকেই শোনাতে লাগল জ্যাক। একই সময় সে উপলব্ধি করতে পারল, মাকে সেও পাগলের মতো ভালোবাসে, বুঝতে পারল, মায়ের ভালোবাসা পওয়ার জন্য সমস্ত হৃদয় তার ব্যাকুল হয়েছিল এতদিন, আরও বুঝতে পারল, ওই মুহূর্তের আগ পর্যন্ত তার মধ্যে দ্বিধা ছিল, মা সত্যিই তাকে ভালবাসেন কি না।

পাড়ার ছবি ঘরে আরেক আনন্দের উৎস ছিল বালক জ্যাকের জন্য। সেখানেও তার এক বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হতো। এই ভূমিকা পালন করতে হতো রবিবার অথবা বৃহষ্পতিবার বিকেলে। পাড়ার সিনেমা হলটা ছিল তাদের বাড়ির ঠিক নিচের রাস্তায়। সিনেমা হল এবং ওই রাস্তার নাম ছিল একজন রোমান্টিক কবির নামে। সিনেমা হলে ঢোকার পথে থাকত আরব ফেরিঅলাদের এলোপাথারিভাবে সাজানো পসরার প্রতিবন্ধকতা: কেউ কেউ বিক্রি করত চীনাবাদাম, লবণ মাখানো শুকনো মটরদানা, এক ধরনের গোখাদ্যের ফল ভাজা, গাঢ় রঙের চিনি মেশানো জবভাজা এবং আঠালো টক লাড্ডু। অন্য কেউ বিক্রি করত জমকালো পেস্ট্রি; সেগুলোর মধ্যে ছেড়ে দেওয়া থাকত গোলাপী রঙের চিনি ছড়ানো পিরামিড সদৃস কুঞ্চন। অন্য কেউ আবার হয়তো বিক্রি করত আরবীয় কায়দায় তেল আর মধুতে ডোবানো ফলের পাতলা টুকরো। মিষ্টি খাদ্যগুলোর দ্বারা আকৃষ্ট হতো দলে দলে মাছি আর ছোট ছেলেমেয়েরা। একে অন্যকে ধাওয়া করার কারণে ভনভনানি আর চিৎকার চেঁচামেচি একাকার হয়ে মিশে যেত ফেরিঅলাদের খিস্তির সঙ্গে।
ফেরিঅলারা নিজ নিজ পসরার খাবারের নিরাপত্তা বিধানের জন্য মাছি আর ছেলেমেয়েদের দলকে একই রকম অঙ্গভঙ্গির দ্বারা তাড়াতে থাকত। কোনো কোনো ফেরিঅলা সিনেমা হলের একপাশে বর্ধিত তাবুর নিচে জায়গা পেত। অন্যরা তাদের আঠালো খাবারের পসরা কড়া সূর্যালোক আর বাচ্চাদের সৃষ্ট ধূলির নিচে ফেলে রাখতে বাধ্য হতো। জ্যাক তার নানিকে সিনেমা হলে নিয়ে যেত। সিনেমায় যাওয়া উপলক্ষে নানির সাদা চুল পেছনের দিকে টেনে মসৃণ করে বাঁধা থাকত আর তার চিরন্তন কালো পোশাক রূপালি পিন দিয়ে আটকানো থাকত। হাউকাউ করা বাচ্চাদের ভীড় অবলীলায় সরিয়ে নানি এক টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে ‘সংরক্ষিত’ আসনের টিকেট কিনতেন। ‘সংরক্ষিত’ আসন মানে ভাঁজ করে রাখা চেয়ার যেগুলো খুলে বসার সময় বাজে এক ধরনের শব্দ তৈরি হতো। আরেক ধরনের আসন ছিল বেঞ্চ: সেগুলোতে সাধারণত ছোট ছেলেমেয়েরাই বেশি বসত।

শেষ মুহূর্তে পাশের একটা দরজা খুলে দেওয়া হলে তারা নিজেদের আসন নিয়ে ঝগড়া করতে করতে প্রবেশ করত। আসলে ওই দুধরনের আসন ছাড়া আর কোনো রকমের আসন ব্যবস্থা ছিল না। প্রত্যেক বেঞ্চের শেষ মাথায় একজন করে প্রবেশক থাকত। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তার হাতে থাকত চামড়ার চাবুক; প্রায়ই দেখা যেত, সে কোনো বাচ্চাকে কিংবা বয়স্ক কাউকে অমার্জিত আচরণের জন্য সিনেমা হল থেকে বের করে দিচ্ছে। সেকালে সিনেমা থিয়েটারে প্রথমে দেখানো হতো নির্বাকচিত্র, সংবাদচিত্র, তারপর স্বল্পদৈর্ঘ্য কমেডি, সেটাই হতো প্রধান বিষয় এবং সর্বশেষে ধারাবাহিক কাহিনীচিত্র; এরকম কাহিনীর প্রদর্শনী গড়ে সপ্তাহে এক পর্ব দেখানো হতো। নানির বিশেষ পছন্দের ছিল ওই ধারাবাহিকগুলো, বিশেষ করে যেগুলো প্রতিপর্বে শেষ হতো অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। যেমন পেশীবহুল নায়ক আহত সাদাচুলের নায়িকাকে কোলে নিয়ে গিরিখাতের স্রোতের ওপরে তৈরি লতাগুল্মের সেতু পার হওয়া শুরু করেছে; সাপ্তাহিক পর্বে সর্বশেষ আলোক সম্পাতে দেখা যেত, একটা উল্কি আঁকা হাত একটা ভোতা ছুরি দিয়ে ওই সেতু কেটে দিচ্ছে।

সিনেমা হলের ভেতরের বেঞ্চের দর্শকদের সতর্কবাণী সত্ত্বেও নায়ক তার পথে সগর্বে এগিয়ে যেত। নায়ক-নায়িকা ওখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবে কি না সেটা বড় কথা নয়, সন্দেহ নেই পারবেই। আসল কথা হচ্ছে, তারা কীভাবে নিজেদের মুক্ত করবে সেটাই। আর সে কারণেই এত আরব আর ফরাসি দর্শক পরবর্তী সপ্তাহে আসবে এবং দেখবে ঈশ্বর প্রদত্ত কোনো বিশাল গাছ এসে প্রেমিক প্রেমিকাকে ইহপতন থেকে রক্ষা করে দিচ্ছে। গোটা প্রদর্শনী জুড়ে মূল চলচ্চিত্রের সঙ্গে সিনেমা হলের ভেতর থেকে জীবন্ত একজন বয়স্কা অনূঢ়ার পিয়ানো বাদন শোনা যেত। মিনারেল পানির বোতলের মতো পিঠ প্রদর্শন করে সে বেঞ্চে বসা দর্শকদের দাঁত কেলানো হাসির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করত। সে সময় জ্যাকের মনে হতো, প্রচণ্ড গরমের ভেতর মহিলার আঙুলবিহীন দস্তানা পরাটা একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়। তার কাজটা যে যত সহজই মনে করুক না কেন আসলে খুব সহজ ছিল না। যখন যে দৃশ্য দেখানো হতো সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুর বদল করে বাজাতে হতো।

বসন্ত উৎসবের সঙ্গে প্রাণবন্ত চার কিংবা পাঁচ যুগল নৃত্যের জন্য যে সুর সেখান থেকে চোপিনের চীনে বন্যার কারণে দাফন যাত্রার সুরে যাওয়ার সময় কিংবা জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক মানের কোনো ব্যক্তির দাফন দৃশ্যের সুরে যাওয়ার সময় বিশেষ লক্ষণীয় কোনো ক্রান্তি টানত না সে। সে যে সুরই বাজাত সেটাই অবিচলভাবে বাজাত যেন গোটা দশেক ছোট যান্ত্রিক বাদ্যযন্ত্র চিরতরে ক্ষমতা-প্রাপ্ত ঘড়ির যন্ত্রাংশের মতো ওই পুরনো হলুদ হয়ে যাওয়া কীবোর্ডটা যথাযথভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। নামমাত্র দেয়ালঘেরা এবং মেঝেতে চীনাবাদমের খোসা ছড়ানো হলের মধ্যে ক্রেসিলের গন্ধ মিশে যেত মনুষ্য শরীরের কড়া গন্ধের সঙ্গে। হলের মধ্যে কান ঝালাপালা করা হৈচৈ থামানোর জন্য পিয়ানো বাদিকার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ: পূর্ণ প্যাডালে গৌরচদ্রিকায় চলে যেত সে এবং এতেই ম্যাটিনি শোর দর্শকদের মধ্যে ভাব চলে আসত।

চলবে...

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন