শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৫

বিষাদ বসুধা

শাহবাজ খান সকালে অফিসে এসেই আসিফ আহমেদকে ডেকে পাঠান। আসিফ আহমেদ পড়িমরি করে তার অফিসে গিয়ে হাজির হন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এমডি সাহেব চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ওখানে বৈঠক শেষ করেই অফিসে আসবেন। কাজেই অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার সময় কতক্ষণ তা কেউ জানে না।

আসিফ আহমেদ অতিথি কক্ষে অপেক্ষা করছেন। আর সেখান থেকে ফোনে ফোনে অফিস করছেন। সম্পাদকীয় বিভাগের প্রধানের সঙ্গে কথা বলে সম্পাদকীয় বিষয় চূড়ান্ত করার পাশাপাশি উপ-সম্পাদকীয়তে কার লেখা যাবে না যাবে তা ঠিক করে দেয়। তারপর চিফ রিপোর্টার এবং বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে সকালের পরিকল্পনা বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের যথাসময়ে বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ভালো রিপোর্টের আইডিয়াও দিয়েছেন তিনি। এরপর তিনি মোবাইলে বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইনগুলো দেখতে শুরু করেন। কোন পত্রিকায় কি রিপোর্ট এসেছে তা দেখেন। এরমধ্যে দুই ঘণ্টা সময় চলে যায়।
আসিফ আহমেদকে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে তা নিয়ে ভাবেন। তারপর এমডি সাহেবের পিএসের কাছে গিয়ে জানতে চান, আর কতক্ষণ তাকে অপেক্ষা করতে হবে।

পিএস হাসি হাসি মুখ করে বলল, সরি স্যার। বুঝতে পারছি না। স্যার না বলা পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতেই হবে। কিছু করার নেই।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন আসিফ আহমেদ। আবার অতিথি কক্ষে গিয়ে বসেন তিনি। অপেক্ষা করেন। এ রকম অপেক্ষা তাকে প্রায়ই করতে হয়। আজও করছেন। অপেক্ষা করিয়ে এমডি সাহেবকে বোঝাতে হয়, তিনি মহাব্যস্ত একজন মানুষ। তার সঙ্গে দেখা হওয়া অতো সোজা কথা না! এর নাম নাকি করপোরেট বিজনেস। একটি অফিসের প্রধান তো বটেই; সম্পাদকও। রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করেন তারা পর্যন্ত সমীহ করে চলেন। অথচ পত্রিকা মালিকদের কাছে (তবে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা যাবে না) সম্পাদকরা অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের মতোই। তারা মনে করেন, আমি নিয়োগকর্তা। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে বাধ্য।

অপেক্ষার সময় যেন কিছুতেই শেষ হয় না। এরমধ্যে আরও এক ঘণ্টা চলে যায়। হঠাৎ পিএস অতিথি কক্ষে এসে আসিফ আহমেদকে উদ্দেশ করে বলে, স্যার আপনাকে কাল সকালে আসতে বলেছেন। আজ এখনো চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে তার বৈঠক চলছে। ওখানেই তিনি লাঞ্চ করবেন। কাজেই আজ আর হচ্ছে না।
ঠিক আছে। আমি আসছি।

আসিফ আহমেদ নিজের অফিসের দিকে রওয়ানা হওয়ার সময় মনে মনে ভাবেন, কি সিদ্ধান্ত হয় কে জানে। এরা শুধু লাভ-লোকসান চিন্তা করে। প্রতিষ্ঠানের সুনামের কথা ভাবে না। কাজেই যে কোনো ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারে। নেয় নেক। কিছুই করার নেই। তাদের প্রতিষ্ঠান তারা ধ্বংস করবে নাকি বাঁচাবে সেটা তারাই ঠিক করুক। আমার দায়িত্ব বলার আমি বলেছি।

আসিফ আহমেদ অফিসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন বিভাগীয় প্রধান এসে হাজির হয়। তারা উদ্বিগ্ন। কি সিদ্ধান্ত হলো তা জানার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে আছে। একজন বলল, ঈদের আগে বেতন হবে তো! আরেকজন বলল, ছাঁটাই কি ঠেকানো যাবে? আরেকজন বলল, বোনাসের কথা তো চিন্তাও করা যায় না; তাই না।

আসিফ আহমেদ পিওন ডেকে সবাইকে চা দিতে বললেন। নিজে চায়ে চুমুক দিলেন। কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে রইলেন। কীভাবে কথা শুরু করবেন তা নিয়ে ভাবেন। তারপর বললেন, ঈদে আগে তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে পারলেই আমি খুশি। এখন বোনাস নিয়ে আমি ভাবছি না।
সহকারি সম্পাদক মামুন রশিদ বলল, আপনার ভাবনাই ঠিক আছে। আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে ঠিকমতো মাস চলে না। অথচ টানা তিন মাস বেতন নেই। এভাবে কি চলা যায়! আসিফ আহমেদ বললেন, তোমরা কীভাবে চলবে? আমি নিজেই তো প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে লোন নিয়েছি। তা নাহলে ঠিক মতো চলতে পারতাম না। এরমধ্যে দুই বাচ্চার পেছনে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। পিওনদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। আমি নিজে মাঝেমধ্যে দুইচার পাঁচশ’ টাকা দিয়ে সাহায্য করি। কিন্তু বেতন না পেলে কাজ করবে কি?

চিফ রিপোর্টার একটু তোতলায়ে কথা বলে। সে কথা শুরু করলে শেষ করতে পারে না। তার কথার ফাঁকে অন্যরা ঢুকে পড়ে। সে দুইতিনবার প্রস্তুতি নিয়েও কথা শেষ করতে পারেনি। এবার সে হাত তুলে বসে আছে। আসিফ আহমেদ তাকে বলার সুযোগ দিয়েছে। সে আগেই বলে দিয়েছে, চিফ রিপোর্টার শেষ না করা পর্যন্ত অন্য কেউ কথা বলবে না।

চিফ রিপোর্টার বলল, ভাই এই সপ্তাহে আমি বেতন না পেলে আর চলতে পারব না। আমার পক্ষে অফিসে আসাও সম্ভব না। ধার করে চলতে চলতে একেবারে শেষ হয়ে গেছি। আর পারছি না। আমার কথা হয়ত একটু বেশি কড়া হয়ে গেছে। এজন্য আমি দুঃখিত।
আসিফ আহমেদ মাথা ঝাঁকালো। তারপর বলল, এই সপ্তাহের মধ্যেই আপনারা যাতে বেতন পান সে চেষ্টা আমি করছি। আপনারা এখন যান। কাজ করেন। কাজ তো আর বন্ধ রাখা যাবে না!

বিভাগীয় প্রধানরা চলে যাওয়ার পর দুপুরের খাবার খেয়ে বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধানকে ডেকে পাঠান আসিফ আহমেদ। তার সঙ্গে বিজ্ঞাপনের কলেকশনের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তার পরামর্শ মোতাবেক বেশ কয়েক জায়গায় ফোন করেন। তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন। তারপর হিসাব কষে তিন মাসের বেতন টাকা দিতে হলে কত টাকা প্রয়োজন। সে অনুযায়ী কলেকশন যাতে হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এরমধ্যে হিসাব বিভাগীয় প্রধানকে টেলিফোনে তিনি বলে রাখেন যে, ঈদের আগে বেতনের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য। কোথা থেকে কি পরিমাণ টাকা আসছে সে বিষয়েও তিনি সব সময় খোঁজ রাখছেন।

সম্পাদকের কথা হিসাব বিভাগ শুনবে, নাকি শুনবে না সেটা তার এখতিয়ার। এটা একমাত্র পত্রিকা; যার হিসাব বিভাগ সম্পাদকের কথায় চলে না। সম্পাদক একশ’ টাকাও হিসাব বিভাগ থেকে বের করতে পারে না। তার জন্য এমডি সাহেবের সই-সাবত লাগে। যদিও আয়-ব্যয়ের হিসাব সম্পাদককেই দিতে হয়। প্রতি মাসে পাঁচ কোটি টাকা সম্পাদককেই আয় করতে হয়।

পরদিন সকালে আবার আসিফ আহমেদ দৌড়ালেন এমডি সাহেবের কার্যালয়ে। আবার যথারীতি তাকে অপেক্ষায় থাকতে হলো। তাকে বলা হলো, বসতে হবে। স্যার ব্যস্ত আছেন।
এক দুই ঘণ্টা নয়, তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর একজন দৌড়ে এসে বলল, স্যার আসেন। আপনাকে স্যার ডাকছেন।
আপনাকে তো আগে দেখিনি! আপনি কে?
আমি স্যার পিএস। নতুন যোগ দিয়েছি।
মানে! সবুজ নেই?
না স্যার। ওনার পরিবর্তে আজ আমি যোগ দিয়েছি। আমার নাম সাইদুল।
আচ্ছা আচ্ছা। কাল পর্যন্ত আছেন তো?
সাইদুল হাসলো। তারপর বলল, সবই আল্লাহর ইচ্ছা স্যার।

আসিফ আহমেদ এমডি সাহেবের কক্ষে গেলেন। যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শাহবাজ খান বললেন, আপনি চেয়ারম্যান সাহেবের সঙ্গে বেতনের বিষয়ে মনে হয় কথা বলেছিলেন।
আসিফ আহমেদ মাথা নেড়ে সায় দিলেন।
শাহবাজ খান বললেন, তাকে বলতে গেলেন কেন? উনি কোত্থেকে দেবেন? ওনাকে এ সব বিষয়ে জানানোর দরকার নেই। যাকগে শোনেন, ঈদের আগে আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। আমি এক মাসের বেতন দেব। বাকিটা আপনারা জোগাড় করেন। আর ঈদের পর ছাঁটাইয়ের তালিকা নিয়ে আসবেন। এতে আর গড়িমসি চলবে না। ঈদের পর ছাঁটাই করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

আসিফ আহমেদ কোনো মন্তব্য করলেন না। শাহবাজ খানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা হন। মনে মনে ভাবেন, ছাঁটাইয়ের ভূত মাথা থেকে গেলোই না!

হিসাব বিভাগ প্রধান মনির হোসেনের ফোন পেয়ে নড়েচড়ে বসলেন আসিফ আহমেদ। তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, এমডি সাহেব এক মাসের বেতন দেবেন না! কেন? তাহলে কত দেবেন?
মনির হোসেন বলল, উনি দেবেন পঁয়ষট্টি লাখ। সেটাও আপনাদের বিজ্ঞাপন বাবদ পাওনা টাকা। নিজের থেকে এক পয়সাও দেবেন না।
বলো কী! তাহলে উপায়?
স্যার, আপনি চেষ্টা করে দেখেন। ঈদের আগে বেতন ক্লিয়ার করতে না পারলে তো আসলেই সমস্যা স্যার।
হঠাৎ তোমার মুখে এই কথা! তুমি তো এক সময় সুর মিলিয়ে বলতে, সাংবাদিকরা বেতন না হলেও চলতে পারে।
সরি স্যার। ভুল হয়ে গেছে। আমার ভুল ধারনা ছিল।
এজন্যই না জেনেশুনে কোনো মন্তব্য করা উচিত না। যাহোক, ঠিক আছে আগে এমডি সাহেবের কাছ থেকে টাকাটা নাও। আমরা এদিকে দেখছি কি করা যায়।
জি। উনি কাল যেতে বলেছেন।

আসিফ আহমেদ ফোন রেখে স্থির হয়ে বসলেন। তিনি উদ্বিগ্ন। কী করবেন তা নিয়ে ভাবেন। মনে মনে বললেন, এমডি সাহেব এক মাসের টাকাও দেবে না! এটা কেমন ধরনের কথা হলো! আমরা তো আমাদের বিজ্ঞাপনের টাকা চেয়েছি। তার মানে মার্কেট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা জোগাড় করতে হবে। তা না হলে তিন মাসের বেতন শেষ করা যাবে না।

আসিফ আহমেদ দেরি না করে বিজ্ঞাপন বিভাগের প্রধান নূরুজ্জামানকে ডাকলেন। সে তখন কালেকশনের কাজে ব্যস্ত। সম্পাদকের ডাক পেয়ে সে ছুটে যায় তার কাছে। সম্পাদকের কাছ থেকে সবকিছু জানার পর সেও বিরক্তির সঙ্গে বলল, আপনি জানেন স্যার, এই সময় হাতেপায়ে ধরে মানুষের কাছ থেকে টাকা আনছি। কেউ অফিসেই যাচ্ছে না। কারো বাসায় গিয়ে, আবার কাউকে কাউকে অফিসে ডেকে এনে চেক লিখিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। মালিকদের কাছ থেকে এইটুকু সাপোর্ট না পেলে আমরা চলব কি করে?

আর বোলো না। আমি আর পারছি না। তুমি দেখ। হিসাব করো। আমার প্রায় তিন কোটি টাকা লাগবে। কার কাছ থেকে কত পাওয়া যাবে। আমার আরও কাকে কাকে ফোন করতে হবে তার তালিকা দাও। যা করার এই সপ্তাহের মধ্যেই করতে হবে। আর কিন্তু সময় নেই!
জি স্যার। আমি আপনাকে তালিকা দিচ্ছি। স্যার, আপনি বেশি চিন্তা করবেন না। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদের জন্য সমস্যা।
তুমিই বলো; এতো চাপ নেওয়া যায়?
নূরুজ্জামান বিরক্তির সঙ্গে বলল, এই রকম আজব প্রতিষ্ঠান আমি কোথাও দেখি নাই স্যার।
ঠিক তখনই প্রশাসনের রাকিব সম্পাদকের কক্ষে ঢুকে বলল, স্যার এমডি স্যারের অফিস থেকে উপস্থিতির তালিকা চাচ্ছে। এক ঘণ্টার মধ্যে ওই অফিসে পাঠাতে হবে।
বিস্ময়ের সঙ্গে আসিফ আহমেদ বললেন, মানে!
করোনার সময় কে কে অফিস করেছে তাদের তালিকা চাচ্ছে। যারা অফিস করেনি তাদের বেতন নাকি দেবে না! রাকিব বলল।
রাকিবের কথা শুনে সম্পাদকের মাথায় যেন বাজ পড়ল।

চলবে…
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>
বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ২০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৯

আরএ/

Header Ad
Header Ad

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা

তারেক রহমান ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীতে প্রধান উপদেষ্টার অফিসে বিএনপির চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুল ও কেক পৌঁছে দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান সেলিম ফুলের তোড়া ও শুভেচ্ছা সামগ্রী গ্রহণ করেন।

ফুলেল শুভেচ্ছা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তার সুস্বাস্থ্য ও সফলতা কামনা করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তার এই অনন্য অবদানের জন্য ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।

Header Ad
Header Ad

পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রস্তাবিত পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনের দাবিকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে জিয়াউর রহমান স্মরণে আয়োজিত এক স্মারক প্রকাশনা ও আর্কাইভ উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন বলেন, “যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট—তারা নির্বাচন বিলম্ব কিংবা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে চায়। পিআর পদ্ধতি বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগযোগ্য নয়।”

তিনি আরও বলেন, “সংস্কার মানে বাইবেল নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কারের মূল প্রবক্তা বিএনপি নিজেই। আমরা এরইমধ্যে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। তাই জাতীয় ঐক্যের নামে একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।”

সালাহউদ্দিন আহমদ জোর দিয়ে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন সবাইকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মত মেনে নিতেই হবে, তাহলে ঐকমত্য কখনোই সম্ভব নয়। একতরফা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় বাস্তবতাকে বুঝতে হবে।”

বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত নির্দিষ্ট দিন-তারিখ ঘোষণা না করায় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“সরকার যদি সত্যিই নির্বাচন চায়, তাহলে তাদের উচিত দ্রুত সময়সূচি ঘোষণা করা। বর্তমানে স্থানীয় নির্বাচনের মতো আয়োজন উপযুক্ত নয়; জাতীয় নির্বাচনই এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি দলগুলোর পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তাদের মহাসমাবেশে এ পদ্ধতি চালুর দাবি তোলে। বিএনপি এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে বলছে, এটি বাস্তবসম্মত নয় এবং এতে নির্বাচনের স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা আগামী নির্বাচনের আগে একটি বড় রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম । ছবি: সংগৃহীত

ইসলামপন্থীদের ঐক্যের প্রতি গণমানুষের প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, “যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে জোটবদ্ধ ইসলামি দলই হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। ইনশাআল্লাহ, রাষ্ট্রক্ষমতা আমাদের হাতেই আসবে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে বহু রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখেছি, কিন্তু ইসলামি দল আজও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারেনি। এর বড় কারণ—আমরা বারবার নেতৃত্ব ও নীতির বাছাইয়ে ভুল করেছি। এবার আর সে ভুল নয়, এবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হবো।”

তিনি জানান, শুধু ইসলামি দলগুলো নয়, বরং দেশপ্রেমিক আরও কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রে নিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। সেই ঐক্যই হতে পারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সেতুবন্ধ।

চরমোনাই পীর বলেন, “আমি বহু আগেই বলে আসছি—ইসলামপন্থী ভোট এক বাক্সে আনতে হবে। আমরা যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তাহলে জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে এবং ইসলামি শক্তিই হবে এই দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব।”

তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আগামী নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ চালু করতে হবে। যে দল যত ভোট পাবে, তারা তত আসনে প্রতিনিধিত্ব পাবে। এটা এখন জনদাবি—বহু রাজনৈতিক দল এই দাবিতে একমত।”

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিএনপির উচিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা করা। এতে করে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে।”

এ সময় তিনি ইসলামী আন্দোলনের সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোর প্রতি দলটির অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “সংস্কার প্রশ্নে আমরা আপসহীন। দেরি করা মানেই ২০২৪-এর গণ-আন্দোলনের সঙ্গে বেইমানি। আমরা বিশ্বাস করি, ৭২-এর সংবিধান জনআকাঙ্ক্ষার প্রতি বধির ছিল, তাই সেটিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন অপরিহার্য।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনমত গঠনে বিশ্বাসী। তবে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে দেশজুড়ে নতুন গণজাগরণ শুরু হবে।”

মহাসমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে এই বক্তব্য নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় ও সংগঠিত ভূমিকাই যে এখন আলোচনার কেন্দ্রে, সেটাই যেন প্রতিফলিত হলো এই বক্তব্যে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ড. ইউনূসের জন্মদিনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা
পিআর পদ্ধতির নামে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
জোটবদ্ধ ইসলামি দল হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি: চরমোনাই পীর
খামেনির প্রাণ বাঁচালাম, ধন্যবাদটুকুও দিলো না: ট্রাম্প
পুরস্কার না নিয়ে মনু মিয়ার জানাজায় অভিনেতা খায়রুল বাসার
মা হারালেন ব্যান্ড তারকা তানজির তুহিন
ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে ১ কোটি কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে বিএনপি: আমীর খসরু
ফিলিস্তিনের মতো সাইপ্রাসও দখলে নিচ্ছে ইসরায়েল!
কালও চলবে এনবিআরের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’
‘এনবিআরের প্রশাসনিক আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই’
সিইসির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক নিয়ে যা বললেন প্রেস সচিব
নওগাঁয় ছাত্রদলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নব গঠিত কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত
করোনায় আরও দুইজনের মৃত্যু,  শনাক্ত ৭
এক সপ্তাহের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে: ট্রাম্প
ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে ১৬ দফা ঘোষণা
নতুন রক্তের গ্রুপের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান