আইন আদালত

মেজর সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টেও বহাল


ঢাকাপ্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশ :০২ জুন ২০২৫, ০৬:৩১ এএম

মেজর সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টেও বহাল
মেজর সিনহা হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড হাইকোর্টেও বহাল। ছবি: সংগৃহীত

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাকি ছয় আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও শামীমা দিপ্তি। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহাজাহান।

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় যথার্থ ছিল। আমরা চাই মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকুক।”

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তিনি সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ভ্রমণবিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন।

ঘটনার পাঁচ দিন পর, ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এরপর তদন্তের দায়িত্ব নেয় র‌্যাব। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে র‌্যাব, যেখানে হত্যাকাণ্ডটিকে ‘পরিকল্পিত’ বলা হয়।

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের আরও তিন সদস্য—এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব—ও পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করা তিনজন—নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বাকি সাত আসামি—চার পুলিশ সদস্য ও তিনজন এপিবিএন সদস্য—বেকসুর খালাস পান।

রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা কার্যকরের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। একইসঙ্গে কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।

প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় ২০২৪ সালের ২১ এপ্রিল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়। এরপর ২৩ এপ্রিল থেকে টানা শুনানি শুরু হয়, যা শেষ হয় ৩০ মে।

আজকের রায়ের মাধ্যমে উচ্চ আদালতও এই হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত ও দৃষ্টান্তমূলক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ রায় দেশের আইন ও বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থার প্রতিফলন বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।