মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান

তার চুল কাটার ধরনে নানির জন্য অবশ্যই চমক একটা ছিল বটে। নানি তাকে আপাদমস্তক এক নজর দেখে তার ওই অপূরণীয় বিপর্যয় সম্পর্কে এক মুহূর্ত চিন্তা করে জ্যাকের সামনেই তার মাকে উদ্দেশ্য করে শুধু বললেন, তোকে এখন আস্ত একটা বেশ্যার মতো দেখাচ্ছে। কথাগুলো বলেই নানি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন। ক্যাথরিন করমারির মুখ থেকে হাসি উবে গেল।

সমস্ত পৃথিবীর দুঃখ আর ক্লান্তি এসে জমা হলো তার মুখে। জ্যাকের প্রকাশ-উদ্যত মুখের দিকে তাকিয়ে একটুখানি হাসার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তার ঠোঁট কাঁপতে থাকায় মা যেন নিভে গেলেন। কাঁদতে কাঁদতে নিজের শোয়ার ঘরের দিকে দৌড়ে চলে গেলেন। ওটাই তার বিশ্রামের জায়গা, নৈঃসঙ্গের জায়গা, দুঃখ বিলাসের আশ্রয়।

হতবিহ্বল জ্যাক মায়ের পিছে পিছে শোয়ার ঘরে গিয়ে দেখল, মা বালিশে মুখ ডুবিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। তার হালকা পলকা পিঠ কান্নার দমকে দমকে ওঠানামা করছে। চুল ছোট করে ফেলার কারণে মায়ের ঘাড়ের অনেকখানি অনাবৃত।

মাকে হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে জ্যাক ডাক দিল, মামণি, মা। তুমি চুল কাটলেও খুব সুন্দর, মা।

কিন্তু মা মনে হলো শুনলেন না। হাতের ইশারায় তাকে চলে যেতে বললেন। জ্যাক ফিরে এসে দরজার বাজুতে হেলান দিয়ে মায়ের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের অসহায়ত্ব নিয়ে নীরবে কাঁদতে শুরু করল।

পরবর্তী কয়েক দিন নানি তার মেয়ের সঙ্গে একটা কথাও বললেন না। আঁতোই লোকটাকেও কেউ আর তেমন উষ্ণতায় গ্রহণ করল না। আর্নেস্ট মামা সদানন্দ স্বভাবের এবং বাচাল হলেও আঁতোইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলল। আঁতোই লোকটা কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছিল হয়তো: কী হচ্ছে? জ্যাক বেশ কয়েকবার তার মায়ের সুন্দর চোখ জোড়ায় অশ্রু দেখতে পেয়েছে। আর্নেস্ট সব সময় চুপচাপ নীরবতায় ডুবে রইল এবং কারণে অকারণে ব্রিলিয়ান্টকে মারপিট করতে লাগল। গ্রীষ্মের এক বিকেলে জ্যাক খেয়াল করল, মামা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে।

বালক জ্যাক জিজ্ঞেস করল, ডানিয়েল আসছে না কি?

মামা মুখে কিছু না বলে রাগে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে লাগল। জ্যাক দেখতে পেল, আঁতোই আসছে। বেশ কয়েকদিন আসেনি লোকটা। আর্নেস্ট দ্রুত বের হয়ে গেল এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ির দিক থেকে ধ্বস্তাধ্বস্তির শব্দ আসতে লাগল। জ্যাক তাড়তাড়ি এগিয়ে গিয়ে দেখল, দুজন অন্ধকারের মধ্যে মারামারি করছে। নিজের দিকে কীভাবে কেমন আঘাত আসছে সেদিকে বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে আর্নেস্ট তার লোহাদণ্ডের মতো শক্ত মুষ্টিতে সমানে ঘুষি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই আঁতোই সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে গেল। সে উঠে দাঁড়াতেই দেখা গেল, তার সারা মুখে রক্ত। পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছে নিল সে।

তবে এতক্ষণ আর্নেস্টের ওপর থেকে এক পলকের জন্যও দৃষ্টি সরানোর সাহস পায়নি লোকটা। তখনও আর্নেস্ট উন্মাদের মতো রাগে ফেটে পড়ছে। ভেতরে গিয়ে জ্যাক দেখল, মা নিথর মুখে খাবার টেবিলে বসে আছেন। জ্যাকও চুপ করে বসে রইল তার পাশে। জোরে জোরে গালিগালাজ ঝাড়তে ঝাড়তে আর্নেস্ট ভেতরে চলে এল। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বোনের দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেল শুধু। মুখে কিছু বলল না। রাতের খাবার যথারীতি শেষ হয়ে গেল। মা কিছুই খেলেন না। নানি তাকে খেতে বললে মা শুধু বললেন, আমার ক্ষিধে নেই। সবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে মা উঠে শোয়ার ঘরে চলে গেলেন। রাতে ঘুম ভেঙে গেলে জ্যাক বুঝতে পারল, মা নির্ঘুম বিছানায় এপাশ ওপাশ করছেন। পরদিন সকালেই মা কালো পোশাক পরে নিলেন, শুধু গরীবের পোশাক, আর কিছু নয়। জ্যাকের মনে হলো, মায়ের সৌন্দর্যে ঘাটতি পড়েনি; বরং গরীবের পোশাকে তার সৌন্দর্য আরো বেশি করে ফুটে উঠেছে। কারণ মা আরো দূরবর্তী হয়ে গেছেন, নিজের আত্মার ভেতর গুটিয়ে গেছেন। দারিদ্র, নৈঃসঙ্গ আর আসন্ন বার্ধক্যে থিতু হয়ে গেছেন মা।

আর্নেস্ট মামার প্রতি জ্যাক বেশ কিছুদিন অসন্তোষ পুষে রেখেছিল; তবে কেন পুষে রেখেছিল তার উত্তর জানা ছিল না। আবার এরকমও মনে হয়েছে, মামাকে কিছুতেই দোষ দেয়া যায় না। তাদের পরিবার দারিদ্র, দুর্বলতা আর অতীব প্রয়োজনীয়তার ভেতর জীবন অতিবাহিত করত। সেগুলো যদি কোনো কিছুর সঙ্গেই আপোষ না করত তাহলে পরিবারের যে ব্যক্তিটি ওই অসুবিধাগুলোর শিকার হতো তাকে তারা নিশ্চয়ই বিচারাধীন করতে পারত না কিছুতেই।

তাদের পরিবারের লোকেরা একে অন্যকে আঘাত দিতে বাধ্য হয়েছে নিরুপায় হয়েই। তারা প্রত্যেকেই অন্যকে কষ্ট দিয়েছে শুধু যখন আপাত দায়ী ব্যক্তির প্রতিনিধিত্ব দেখতে পেয়েছে জীবনের অতীব প্রয়োজনীয়তার ভেতর। প্রথমত নানির প্রতি, তারপর তার মায়ের প্রতি এবং তাদের প্রতি মামার গভীর অনুরক্তিতে জ্যাক কখনওই সন্দেহ পোষণ করতে পারেনি। তার প্রতি মামার গভীর অনুরক্তি দেখতে পেয়েছে বিশেষ করে যেদিন মামার কারখানায় সে একটা দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল সেদিন। জ্যাক প্রতি বৃহষ্পতিবার মামার কারখানায় যেত। অন্যান্য দিন রাস্তায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলার জন্য জ্যাক উৎফুল্ল হয়ে ছুটে যেত।

বৃহষ্পতিবার বাড়ির কাজ থাকলে সেগুলো তাড়াতাড়ি গুছিয়ে রেখে মামার কারখানাতেও সেরকম উৎফুল্ল হয়ে ছুটে যেত সে। কারখানাটা ছিল প্যারেড গ্রাউন্ডের পাশেই। কারখানাটা উঠোনের মতো একটা ফাঁকা জায়গায়। ময়লা আবর্জনা, পুরনো চাকার বলয়, ধাতুমল আর নিভিয়ে ফেলা আগুনের ছাইয়ে ভরা। একদিকে সমান দূরত্বের বড় বড় পাথরের থামের মাথার ওপরে তৈরি ইটের ছাদ। পাঁচ ছয়জন কারিগর ওই ছাদের নিচে কাজ করত।

ওইটুকু জায়গার মধ্যেই প্রত্যেকের কাজের আলাদা আলাদা সীমানা ছিল: দেয়াল ঘেঁষা একটা বেঞ্চ, তার সামনে ফাঁকা জায়গা, সেখানে পিপা কিংবা মদের জালা জড়ো করে রাখা যেত এবং পাশের কারিগরের এলাকা থেকে আলাদা করা যায় এমনভাবে খাঁজকাটা বেঞ্চের মতো ছিল। সেটার মধ্যে পিপার মাথা ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। তারপর চাকুর মতো একটা অস্ত্র দিয়ে হাতে সেটার আকার দেওয়া হতো।

তবে এর ধারালো পাশটা থাকত কারিগরের দিকে মুখ করা এবং এর হাতল ধরা থাকত কারিগরের হাতে। আসলে এরকম বিন্যাস প্রথম দর্শনে চোখে পড়ার মতো ছিল না। প্রথম থেকে পরিকল্পনা অবশ্য এরকমই ছিল। তবে আস্তে আস্তে বেঞ্চগুলো চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। বেঞ্চের মাঝখানের জায়গা ভরে উঠেছে চাকার বলয় জমা হয়ে। এখানে ওখানে নাটবল্টুর কেনেস্তারা পড়ে আছে। প্রত্যেক কারিগর নিজ নিজ জায়গার মধ্যে যে সব কাজকর্ম সম্পাদন করছে সেগুলো খুটিয়ে দেখতে গেলে অনেক সময়ের দরকার। মামার খাবার নিয়ে তার কাছে পৌঁছনোর আগে দূর থেকেই জ্যাক চাকার বলয়ের ড্রাইভারের ওপরে হাতুড়ির শব্দ শুনে চিনতে পারত।

কাঠের টুকরোটা ঠিক জায়গায় বসানোর পরে ড্রাইভার যন্ত্রটা দিয়ে ধাতব বলয় পিপার গলায় নামিয়ে দেওয়া হতো এবং কারিগর ড্রাইভার যন্ত্রটির এক প্রান্তে বাড়ি মারতে থাকত এবং অন্য প্রান্ত দক্ষতার সঙ্গে বলয়ের চারপাশে ঘোরাতে থাকত। দূর থেকে আরো বেশি ভারী এবং ধীর পৌনঃপুনিকতার শব্দ শুনে জ্যাক আরো বুঝতে পারত, হয়তো কোনো কারিগর দোকানের বাইসের সঙ্গে আটকানো কোনো বলয়ের সঙ্গে নাটবল্টু সেট করছে। হাতুড়ির কোলাহলের মধ্যে জ্যাক ওখানে গিয়ে পৌঁছনোর সময় তাকে সানন্দে গ্রহণ করা হতো এবং এরপর হাতুড়িগুলোর নাচ আবার শুরু হতো। আর্নেস্টের পরনে থাকত পুরনো তালি মারা নীল ট্রাউজার, ঘুণঢাকা কাপড়ের তৈরি দড়ির তলাঅলা জুতা, হাতাছাড়া ধূসর রঙের শার্ট আর একটা রঙচটা পুরনো কিনারাবিহীন টুপি। টুপিটা তার সুন্দর চুলকে ধূলি আর চাঁচনি থেকে রক্ষা করত।

ওখানে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে মামা জ্যাককে বুকে জড়িয়ে নিত আর মামার কথাবার্তায় জ্যাক বুঝতে পারত, মামার কাজে হাত লাগালে ভালোই হয়। মাঝে মাঝে জ্যাক নেহাইয়ের ওপরে বলয়টাকে ধরে থাকত। আর মামা সেটার সঙ্গে বল্টু লাগানোর জন্য জোরে জোরে বাড়ি মারত। বলয়টা জ্যাকের হাতের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠত। হাতুড়ির প্রত্যেকটা বাড়ির সঙ্গে সেটা তার তালুতে বসে যেত। কখনও কখনও মামা বেঞ্চের এক প্রান্তে দুপা দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে বসে পড়ত। জ্যাকও একই ভঙ্গিতে অন্য প্রান্তে বসত। জ্যাক পিপার নিচের পাশটা ধরত। আর মামা সেটার আকার দিতে থাকত।

তবে জ্যাকের সবচেয়ে মজা লাগত কাঠের টুকরোগুলো উঠোনের মাঝখানে এনে জড়ো করতে যাতে মামা সেগুলো মোটামুটি চাকার একটা বলয়ের কাছাকাছি সাজিয়ে রাখতে পারে। দুপাশ খোলা পিপার মধ্যে আর্নেস্ট একগাদা চাঁচনি ঢুকিয়ে দিত। আর জ্যাকের দায়িত্ব ছিল সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। আাগুনের তাপে লোহা আকারে আরো বেশি বিস্তৃতি লাভ করত এবং আর্নেস্ট সে সুযোগে হাতুড়ির সজোর আঘাতে বলয়টাকে বসিয়ে দিত।

এই কাজে ধোঁয়ার কারণে দুজনেরই চোখ জুড়ে অশ্রু নামতে থাকত। বলয়টা জায়গা মতো বসিয়ে দেওয়া হয়ে গেলে জ্যাক উঠোনের কোণের কল থেকে পানি ভরে রাখা কাঠের বালতি নিয়ে আসত। বালতি নামিয়ে দিয়ে জ্যাক খানিকটা সরে দাঁড়াত এবং আর্নেস্ট পিপার ওপরে সজোরে পানি ঢেলে দিত। বলয় ঠাণ্ডা হতে হতে সংকুচিত হয়ে কাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ত। সঙ্গে সঙ্গে ওপরের দিকে বাষ্পের কুণ্ডলী উঠে আসত।

চলবে...

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন