প্রবাস
দুঃসাহসী তরুণ আহবাবের অদম্য যাত্রা: যুক্তরাষ্ট্রে সাইকেলে ৬,৪০০ কিলোমিটার পাড়ি
মাত্র ২১ বছর বয়সে যা অনেকের কল্পনারও বাইরে, তা বাস্তব করে দেখালেন প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ আহবাব। দীর্ঘ ৬৩ দিনের কঠিন লড়াই, প্রায় ৪,০০০ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তিনি পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থল ওয়াশিংটন ডি.সি.-র ক্যাপিটল হিলে।
এই ক্রস-কান্ট্রি সাইকেল অভিযান ছিল কেবল একটি ভ্রমণ নয় — ছিল এক অদম্য মানসিক শক্তির পরীক্ষা, আত্ম-আবিষ্কারের যাত্রা, এবং সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর এক জীবন্ত উদাহরণ।
রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রের কাছে এটি নিঃসন্দেহে এক জীবনের সেরা অর্জন।
দুর্গম পথে লড়াই-
এই অভিযান তারা শুরু করে যুক্তরাষ্টের সানফ্রান্সিসকো থেকে। ‘Disability experience’ নামক সংগঠন আয়োজিত প্রোগ্রামটির নাম ছিল ‘Journey of Hope’। এই সংগঠন প্রতিবন্ধী মানুষদের সাহায্য করে। এই অভিযান থেকেও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৬.৪ লাখ ডলার ফান্ড কালেকশন করে।
আহবাব ছিলো এই ক্যামপেইনে অংশগ্রহণকারী একমাত্র এশিয়ান। আহবাব মোট ৬০ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গঠিত দুটি দলের সঙ্গে ছিলেন। প্রতিটি দলে ৩০ জন করে সদস্য দুটি ভিন্ন রুট ধরে এই কঠিন সাইকেল ক্যাম্পেইনটি সম্পন্ন করে। যাত্রাপথে তাদের আবহাওয়ার চরম বৈপরীত্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে—কখনও প্রচণ্ড গরম, আবার কখনও তীব্র ঠান্ডা। ছিল চড়াই-উতরাই ও বৃষ্টি-রোদ। দলটি প্রায় ১২,০০০ ফুট উচ্চতা অতিক্রম করে এবং রাতে আশ্রয় নেয় বিভিন্ন চার্চ ও স্কুলে। দলবদ্ধভাবে কাজ করার এটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হলেও, দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে তা ছিল অত্যন্ত কঠোর।
আহবাবের এই যাত্রা আরও কঠিন ছিল কয়েকটি ব্যক্তিগত কারণে। পুরো অভিযানে তিনি দু'বার আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং হালাল খাবারের অভাবে তাঁকে বেশ কষ্ট পেতে হয়। এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি হাল ছাড়েননি, যা তাঁর দৃঢ় মনোবল এবং সহনশীলতার প্রমাণ।
তারুণ্যের পথচলা-
আহবাব বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রয়, নিউইয়র্কের রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (RPI)-এ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পঞ্চম সেমিস্টারে (তৃতীয় বর্ষ) পড়ছেন। তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশে নবম শ্রেণী শেষ করার পর যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং এখানকার হাই স্কুল থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পাস করেন।
বাংলাদেশে থাকাকালীন তিনি ধানমন্ডির ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুল-এ পড়াশোনা করতেন এবং ঢাকার আবাহনী মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট খেলতেন।
৬৩ দিনের প্রতিটি ধুলোমাখা সকাল, প্রতিটি ক্লান্ত বিকেল, আর হাজারো মাইলের প্রতিটি প্যাডেল যেন গড়ে তুলেছে এক তরুণের স্বপ্নের মূর্তি। আহবাবের এই যাত্রা ছিল না শুধুই এক সাইকেল ট্রিপ—এটি ছিল নিজের সীমা ভাঙার, ভয়কে জয়ের, আর ভবিষ্যতের পথে সাহস নিয়ে এগিয়ে চলার এক নির্ভীক ঘোষণা। এই বিশাল অর্জন তাঁর জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।