শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫ | ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৮

বিষাদ বসুধা

সাত-সকালে আসিফ আহমেদের ফোন পেয়ে বিস্মিত মোহিনী। তিনি ফোনের স্ক্রিনের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর ফোনের সাউন্ড টোন অফ করে দিলেন। ফোন ধরলেন না। পরে কথা বলবেন ভেবে রেখে দিলেন। কেন ফোন করেছে তা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। পত্রিকার বিলটা কি এখনো দেয়নি! আমি বারবার বলার পরও কেন বকেয়া রাখা হলো? নাকি অন্য কোনো কারণে ফোন করেছে!

মোহিনী মোবাইল হাতে নিয়ে তার প্রশাসন বিভাগের জিএম আবুল কালামকে ফোন করলেন। তাকে বললেন, আচ্ছা আসিফ সাহেবের পত্রিকার বিলটা কি দেওয়া হয়নি?
জি ম্যাম, দিয়েছি তো! কেন, আপনাকে কিছু বলেছে নাকি?
না না! কোনো বকেয়া নেই তো?
জি না। আপনি বললেন না, যা পাওনা আছে সব দিয়ে দিতে!
হুম। ঠিক আছে। ভালো করেছেন। আচ্ছা শোনেন, আমি অফিসে আসছি। আপনারা একটা কাজ করেন।
জি ম্যাম।
ঈদে আমরা দশ হাজার মানুষকে সহায়তা দিতে চাই। আপনি দশ হাজার প্যাকেট তৈরি করেন। এতে থাকবে, দশ কেজি চাল, দুই কেজি আটা, এক লিটার সয়াবিন তেল, পেয়াজ এক কেজি, আলু দুই কেজি এবং লবণ এক কেজি।
জি আচ্ছা।
এখনই আপনি কারওয়ান বাজার পাঠিয়ে দেন। আমি অফিসে এসেই যেন দেখি কেনাকাটা হয়ে গেছে। অ্যাকাউন্টস থেকে টাকা নেন। আমি এসে সই করে দেব।
জি ম্যাম।

মোহিনী আবুল কালামের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে আসিফ আহমেদকে ফোন করলেন। আসিফ ফোন ধরেই বললেন, শুভ সকাল। কেমন আছ?
শুভ সকাল। সাতসকালে সম্পাদক সাহেবের ফোন পেয়ে আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তাই নাকি? সরি। আমি আসলে তোমার সঙ্গে ফ্রিলি একটু কথা বলতে চেয়েছিলাম! ভাবলাম, এখনো তুমি অফিসে যাওনি। কাজের মধ্যে থাকলে কথা বলা মুশকিল!
হ্যাঁ তা ঠিকই বলেছ। তারপর, আমার অফিসের বকেয়া সব পেয়েছ তো?
হ্যাঁ হ্যাঁ। তুমি বলার পর বকেয়া রাখার সাধ্য কার?
সেটা না। তুমি বেতন দিতে পারছ না শুনে আমি বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এর আগেও কি আমাকে ফোন করেছিলে নাকি?
হুম। দু তিন বার তো করেছিলাম। তোমার ফোনটা বন্ধ ছিল। সাধারণত, তোমার ফোন তো বন্ধ থাকে না।
ঠিকই বলেছ। আমার ফোন বন্ধ থাকে না। আমি সাত দিন একদম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। কোথাও যায়নি। বাসায় কাটিয়েছি।
কোনো বিশেষ কারণে?
তোমাকে তো বলা হযনি। আরেফিন মারা গেছে।
কি! এটা তুমি কী শোনালে!
হুম। উহানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
তারপর!
লাশ এসেছে ঢাকায়। দেখারও সুযোগ পাইনি। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কবর হয়েছে।
খুব দুঃখজনক। এই বয়সে একটা মানুষ মারা যাওয়া!
এটাই হয়তো আমার কপালে ছিল। কপালের লিখন তো আর খণ্ডন করার উপায় নেই! যাকগে, তোমার খবর বলো।
না মানে, তোমার এই খবর শোনার পর আর কী বলব? সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে।
এটা জীবনের অংশ। এ নিয়ে আমি মন খারাপ করছি না। আমি ভাবছি, কাজের মধ্যে ডুবে থাকব। তাহলে আর এসব ভাবনা মাথায় আসবে না।
সেটাই ভালো। তুমি কাজের মানুষ। তোমার একটা গুডউইল আছে। এটা শুনলেও ভালো লাগে। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার বিরাট উপকার হয়েছে। আশা করছি ঈদের আগে সব পাওনা মিটিয়ে দিতে পারব।
বাহ! তাহলে তো খুবই ভালো। আর খবর কী বলো তো? ছাঁটাই কি করতেই হচ্ছে।
এখনো কাউকে করা হয়নি। তবে ব্যাপক চাপ। আমি হয়তো থাকব না।
সে কী!
কী করব বলো? আমি বিকল্প প্রস্তাব দিলাম। সেগুলো তাদের পছন্দ হচ্ছে না। ছাঁটাই না করেও কী করে খরচ মিনিমাইজ করা যায় সে বিষয়ে আমি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। প্রস্তাবটা ভালো কী মন্দ তাও তারা দেখেনি। তাদের এক কথা ছাঁটাই করতেই হবে। আমি নিজের চাকরি বাঁচাতে ছাঁটাই করব? সে মানুষ আমি নই।
তা তো জানি। আচ্ছা, আমি কি কথা বলে দেখব?
তুমি কথা বলবে! সেটা কি ঠিক হবে?
আমি তো আর তোমার বিষয়ে কিছু বলব না! ওর পত্রিকার বিষয়ে জানতে চাইব। কী করবে না করবে সে বিষয়ে। মনোভাবটা তো বোঝা যাবে!
হুম। আচ্ছা সে কি জানে তুমি আমার বন্ধু?
আমি একবার কথায় কথায় বলেছিলাম। নিশ্চয়ই সেটা মনে আছে। থাকার কথা আর কি!
আচ্ছা আচ্ছা। তুমি আমার বিষয়ে কিছু বোলো না। তুমি অন্যভাবে জানার চেষ্টা করো।
তা তো অবশ্যই। আমি একটা কথা বলব?
প্লিজ!
তুমি হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নিও না। জানোই তো সময়টা এখন খুব খারাপ।
তা তো জানি। কিন্তু কী করব বলো। প্রত্যেকটা মানুষেরই তো একটা নীতি থাকে। তাই না? আমি জানি, আমি যদি এখন ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে তারা আমাকে মাথায় করে রাখবে। কিন্তু আমার পক্ষে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। ছাঁটাইয়ের আগে আমার নিজের ইস্তফা দিতে হবে। তা না হলে আমি মনপীড়ায় ভুগব। তা ছাড়া, আমার ক্যারিয়ার আছে না! সাংবাদিক মহলে আমি মুখ দেখাতে পারব? সবাই ছি ছি করবে। তুমিও বলবে, সম্পাদক হয়ে তুমি এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে! তখন কী জবাব দেব?
হুম। বুঝতে পারছি। মুনমুন ভাবি কী বলেন?
সেও তো চাকরি করে। বোঝে বিষয়টা। তা ছাড়া, সেও বলে দিয়েছে, ছাঁটাই করে তুমি নিজেও চাকরি করতে পারবে না। মানসিক যন্ত্রণায় তুমি শেষ হয়ে যাবে। তারচে’ তুমি ছেড়ে দাও। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এই সময় তো কোথাও চাকরিও পাবে না।
শোনো, চাকরি তো অনেক করলাম। এবার কিছু সময় রেস্ট নিই। তারপর দেখি কি করা যায়।
যা-ই করো আমাকে জানিও।
তা তো বটেই। এই দেখ, সকাল থেকে শুধু নিজের কথাই বলছি। তোমার কথা তো কিছু শোনা হলো না। তুমি কেমন আছ?
আমার কথা আরেকদিন শুনো। এখন আমার অফিসে যেতে হবে। গত সাত দিন বাসায় কাটিয়েছি। অফিসের কী অবস্থা জানিও না। তুমি ভালো থেকো। মন খারাপ করো না।
তুমিও ভালো থেকো।
মোহিনী ফোন রেখে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলেন। তারপর অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন।

মোহিনীর অফিসে খাদ্যদ্রব্য প্যাকেট করা হচ্ছে। কে কোন পদে চাকরি করছে সে কথা ভুলে গিয়ে সবাই প্যাকেট করার কাজে হাত লাগিয়েছে। এ দৃশ্য দেখে মোহিনী অফিসের সামনে থমকে দাঁড়ালেন। তিনি দাঁড়িয়ে থেমে কর্মযজ্ঞ দেখছেন। যেন এক মহাযজ্ঞ চলছে। দেখে তার মনটা আনন্দে ভরে গেল।

মোহিনী কখন এসে দাঁড়িয়েছেন তা অফিসের কেউ টেরও পায়নি। মোহিনী এমনই। কোনো রকম ভাব নেই। কোনো রকম আত্ম-অহমিকা নেই। অতি সাধারণ একজন চাকরি জীবীর মতোই তার আচরণ, চলাফেলা। একেবারে সাদামনের মানুষ যাকে বলে! এ রকম মানুষ জগতে খুব কমই মেলে। মোহিনীর অফিসের লোকরা সে কথাই বলে। তাকে নিয়ে সবাই গর্ব করে। সবাই মনে করে, নিজের অফিসেই তারা কাজ করছে। তারা আর দশটা অফিসের চাকরিজীবীদের মতো নয়। ঘড়ি দেখে কিংবা ঘণ্টা হিসাব করে তারা কাজ করে না। সেভাবেই মোহিনী অফিসটাকে গড়ে তুলেছেন।

আবুল কালাম নানা কাজের তদারকি করছিল। কাজ করতে করতেই সে দেখল, মোহিনী অফিসের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। সে তার কাছে ছুটে গিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে মোহিনী থামিয়ে দিয়ে বলেন, আমি শুনব। তার আগে আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমার অফিস এত চমৎকারভাবে কাজ করছে এ জন্য একটা ধন্যবাদ তো আগে দিই!
আবুল কালাম কাচুমাচু করে বলল, জ্বি ম্যাম, জি ম্যাম।

কাজে ডুবে থাকা মানুষগুলোর উদ্দেশ করে মোহিনী বললেন, আপনারা সবাই যেভাবে মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন তাতে আমি খুবই আশাবাদী। এই দেশ অবশ্যই সব সংকট মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।
মোহিনীর কথায় সবাই আরও বেশি উৎসাহ পেল। সবাই আরও বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে কাজ শুরু করল। আনন্দে মোহিনীর বুকটা অনেক চওড়া হয়ে গেল। তিনি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আবুল কালামকে দিয়ে বললেন, দুপুরে এদের সবাইকে খাইয়ে দেবেন।
আবুল কালাম উদ্বেলিত কণ্ঠে বললেন, জি ম্যাম. জি ম্যাম।

মোহিনী এবার অফিসের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে আবুল কালামকে বললেন, আপনি আসেন। কি যেন বলতে চেয়েছেন!
আবুল কালাম আর কোনো কথা না বলে মোহিনীর পেছনে পেছনে এগিয়ে গেল। মোহিনী তার অফিসে পৌছার পর আবুল কালাম কিছুটা দ্বিধা এবং সংকোচের ভঙ্গিতে বলল, ম্যাম আমরা সবই কিনতে পেরেছি। কিন্তু একটু সমস্যা হয়ে গেছে।
কী সমস্যা?
চাল কিনতে গিয়ে আমাদের গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছে। কারওয়ান বাজার, বাদামতলী এবং আমিনবাজার ঘুরেও আমরা পুরো চাল কিনতে পারিনি। পাইকাররা বলল, চাল নেই। এই অজুহাতে তারা দামও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পুরো চাল কিনতে পারি কি না..
এসব নেগেটিভ কথা বলবেন না তো! আমি পছন্দ করি না। অবশ্যই চাল পাওয়া যাবে। যা পেয়েছেন তা দেওয়া শুরু করুন। বাকি চাল দু’তিন দিন অপেক্ষা করে কিনে ফেলেন। দামের কথা বলার দরকার নেই। এই সময় দাম তো কিছু বেশি হবেই। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভালো মন্দ আছে না! সুযোগসন্ধানী আছে না! তারা তো সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সেনিটাইজার নিয়ে কী হলো মনে নেই!
আবুল কালাম নীচু গলায় বলল, সরি ম্যাম।

চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৭

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৬

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৫

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৪

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২৩

বিষাদ বসুধা: পর্ব-২২

বিষাদ বসুধা: পর্ব ২০

বিষাদ বসুধা: পর্ব ১৯

 

 

Header Ad
Header Ad

বিজ্ঞানীদের রক্তের নতুন গ্রুপের সন্ধান

গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছে—গোয়াডা নেগেটিভ। ছবি: সংগৃহীত

রক্তের নতুন একটি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় রক্ত সঞ্চালন সংস্থা ‘দ্য ফ্রেঞ্চ ব্লাড এস্টাবলিশমেন্ট’। ফরাসি এক নারীর শরীরে থাকা রক্তের নতুন গ্রুপটির নামকরণ করা হয়েছে—গোয়াডা নেগেটিভ।

১৫ বছর আগে সংগ্রহ করা নমুনা বিশ্লেষণ করে এই রক্তের গ্রুপের খোঁজ মিলেছে। এ মাসে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ব্লাড ট্রান্সফিউশন আনুষ্ঠানিকভাবে রক্তের নতুন গ্রুপটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, প্রায় ১৫ বছর আগে ক্যারিবীয় দ্বীপ গুয়াদেলুপ থেকে আসা এক ফরাসি নারীর অস্ত্রোপচারের আগে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই রক্ত পরীক্ষা করেই গোয়াডা নেগেটিভ নামের রক্তের নতুন গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে। নতুন রক্তের গ্রুপ শনাক্তের বিষয়ে দ্য ফ্রেঞ্চ ব্লাড এস্টাবলিশমেন্টের বিজ্ঞানী থিয়েরি পেয়ারার্ড জানিয়েছেন, ২০১১ সালে এক নারীর রক্তে বিরল এক অ্যান্টিবডি শনাক্ত করা হয়েছিল। সে সময় রক্তের তথ্য বিশ্লেষণ করতে বিলম্ব হয়। এরপর ২০১৯ সালে ডিএনএ সিকোয়েন্স করে বিরল জেনেটিক মিউটেশন পাওয়া যায়।

মানুষের রক্তের গ্রুপকে চারটি বিস্তৃত ভাগে ভাগ করা হয়। এসব গ্রুপের নাম এ, বি, এবি আর ও গ্রুপ। এদের পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যদিও মানুষের রক্তের গ্রুপ আসলে অনেক জটিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বিরল কোনো রোগের কারণেই সেই নারীর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। মা–বাবা উভয়ের কাছ থেকে পরিবর্তিত জিন বহন করছেন সেই নারী।

প্রথম রক্তের গ্রুপ প্রায় এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে শনাক্ত করা হয়েছিল। জেনেটিক সিকোয়েন্সের সাম্প্রতিক অগ্রগতির ফলে নতুন ধরনের গ্রুপ আবিষ্কারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে অনেক বিরল রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে।

 

Header Ad
Header Ad

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা

ছবি: সংগৃহীত

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের চূড়াইন গ্রামে এক ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হলো এলাকাবাসী। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলী হোসেন মৃধা (৪৮) গোলাপ জলে গোসল করে জনসমক্ষে ঘোষণা দিলেন— তিনি রাজনীতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিচ্ছেন।

শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে নিজ বাড়ির উঠানে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেন তিনি। এই ঘোষণার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন, অন্যদিকে নিজ গ্রামে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

আলী হোসেন মৃধা ছিলেন বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে তিনি ওই ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চূড়াইন গ্রামের প্রয়াত আব্দুল খালেক মৃধার সন্তান আলী হোসেন মূলত পেশায় একজন ডেকোরেটিং ব্যবসায়ী।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং তখনই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

গোলাপ জলে গোসল করে রাজনৈতিক জীবনের ইতি টেনে আলী হোসেন মৃধা বলেন, “আমি মূলত ব্যবসায়ী মানুষ। রাজনীতি আমাকে কখনো খুব টানেনি। তবে এলাকার মানুষের অনুরোধে ও সময়ের প্রেক্ষাপটে আমি যুক্ত হয়েছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতনের পর আমার ভেতরে একটি পরিবর্তন আসে। আমার মনে হয়েছে, রাজনীতি আমার পথ নয়। অনেকেই পালিয়ে গেছেন, কিন্তু আমি এলাকায় থেকে গেছি। আমি কখনো দুর্নীতি বা অনিয়মে জড়াইনি।”

আলী হোসেন মৃধার ভাষায়, এটি ছিল তাঁর ‘বোধোদয়’—একটি আত্মচিন্তার ফল। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “আমি আর রাজনীতি করবো না। আওয়ামী লীগও করবো না। এখন থেকে শুধু ব্যবসা নিয়েই থাকতে চাই।”

স্থানীয়ভাবে এই ঘোষণা বেশ আলোড়ন তুলেছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি হয়তো রাজনৈতিক কৌশল, আবার কেউ বলছেন এটি একজন সাধারণ কর্মীর বিবেকের জাগরণ।

অনেকেই মনে করছেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি পর্যায়ে এমন অবস্থান নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়ার ঘটনা হয়তো বিরল, কিন্তু তা কেবল এক ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নয়—বরং এটি একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি, যেখানে রাজনীতি নিয়ে মানুষের দ্বিধা, আস্থা ও প্রত্যাশার জায়গাগুলো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।

Header Ad
Header Ad

সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন

ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন ছয় বছর বিলম্বে উদ্বোধন করলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ পর্যটন প্রকল্প— ওনসান কালমা সমুদ্র সৈকত রিসোর্ট। পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্টটি আগামী জুলাই মাস থেকে দেশীয় পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ। তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কবে উন্মুক্ত হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।

গত ২৪ জুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম জং উনের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী রি সল জু এবং কন্যা কিম জু এ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে এটি ছিল রি সল জুর প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ম্যাটসেগোরাসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও, যা উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এক সময় ওনসান শহরটি পরিচিত ছিল উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘাঁটি হিসেবে। কিন্তু কিম জং উন এখন সেই শহরকেই রূপ দিচ্ছেন পর্যটন নগরীতে। নিজের শৈশব কাটানো এলাকা ওনসানে অভিজাতদের ব্যক্তিগত বাড়ি থাকলেও এবার সাধারণ পর্যটকদের জন্যও খুলে দেওয়া হলো সমুদ্রতীরবর্তী বিলাসবহুল রিসোর্টটি।

কেসিএনএর দাবি অনুযায়ী, রিসোর্টটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং এতে প্রতিদিন ২০ হাজার পর্যটক অবস্থান করতে পারবেন। এতে থাকছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, ওয়াটার পার্ক, শপিং মলসহ নানা বিনোদন সুবিধা। তবে এই তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ওনসান রিসোর্টের উদ্বোধন কিম সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন কৌশলের অংশ হতে পারে। যদিও উত্তর কোরিয়ায় পর্যটন নিয়ন্ত্রণের কড়াকড়ি রয়েছে, তবুও বিদেশি পর্যটক বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া থেকে আসা পর্যটকদের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে দেশটি।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার পর কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে পিয়ংইয়ং। প্রায় তিন বছর পর, ২০২৩ সালে কিছুটা শিথিলতা আসে এবং ২০২৪ সালে রাশিয়ার পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলা হয়। তবে ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলিয়ান পর্যটকদের জন্য সীমান্ত খোলার ঘোষণা এলেও কিছু সপ্তাহ পরেই সেটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা উত্তর কোরিয়ার পর্যটন নীতির অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।

কেসিএনএ জানিয়েছে, ওনসান রিসোর্ট উদ্বোধন “সমগ্র দেশের জন্য একটি মহান ও শুভ ঘটনা” এবং এটি উত্তর কোরিয়ার পর্যটনে “একটি নতুন যুগের সূচনা”।

প্রথমে ২০১৯ সালের অক্টোবরে এই রিসোর্ট খোলার কথা থাকলেও, নির্মাণে বিলম্ব ও কোভিডের অভিঘাতের কারণে তা সম্ভব হয়নি।

ওনসান কালমা রিসোর্টের উদ্বোধন কেবল পর্যটকদের জন্যই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টিতে উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত অর্থনৈতিক মনোযোগেরও প্রতিফলন। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এটি কতটা সহজলভ্য হবে এবং আদৌ কি তা বৈদেশিক রাজস্বে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে— তা সময়ই বলে দেবে। তবে রিসোর্টের ছায়ায় লুকিয়ে থাকা রাষ্ট্রীয় ‘নিয়ন্ত্রণ’ ও ‘গোপনতা’ এখনো উত্তর কোরিয়ার পর্যটনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়ে গেছে।

সূত্র: ইনসাইডার, কেসিএনএ

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বিজ্ঞানীদের রক্তের নতুন গ্রুপের সন্ধান
গোলাপ জলে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন আওয়ামী লীগ নেতা
সাগরতীরে বিলাসবহুল রিসোর্ট উদ্বোধন করলেন কিম জং উন
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৬২
কূটনৈতিক অস্ত্র পানি নিয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান, শঙ্কায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান
পশ্চিমবঙ্গে পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত সন্ন্যাসীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে তোলপাড়
দুধ আমদানি করা লজ্জার বিষয়: উপদেষ্টা ফরিদা
পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ সেনা নিহত
ছায়ানটের সভাপতি হলেন ডা. সারওয়ার আলী, কার্যনির্বাহী কমিটিতে নতুন মুখ
জুলাই যোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে চাই: রিজভী
৮ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস, নদীবন্দরে সতর্কতা
সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে হেগে পাকিস্তানের আইনি জয়, রায় প্রত্যাখ্যান করল ভারত
আগস্টে ঢাকার ৩ এলাকায় চালু হবে ই-রিকশা
বিনিয়োগকারীদের জন্য বিডার নতুন ওয়েবসাইট চালু
টাঙ্গাইলে যৌনপল্লীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১২টি ঘর পুড়ে ছাই
আবাসিক হোটেল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীদের খুশির খবর দিল সৌদি আরব
চীন সফর অত্যন্ত ‘সফল’ ও ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে: মির্জা ফখরুল
ইরানে আবারও বোমা হামলার হুমকি দিলেন ট্রাম্প
ইনিংস ব্যবধানে হারের পরই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লেন শান্ত