শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক

‘আমরা নয়াপাড়ার ক্যাম্প দিয়ে নদীতে নামব। বিজিবি’র হাতে ধরা পড়ে গেলে বলব, আমরা এই নয়াপাড়া ক্যাম্পে ছিলাম, আমরা এখন আমাদের দেশে ফিরে যাচ্ছি, আমাদের যেতে দিন। সুতরাং ওদের আর আটকানোর কোনো কথা নয়।’ ‘কাজটা যত সহজ ভাবছিস, তত সহজ নয়। যথেষ্ট জটিল এবং রিস্কি।’ নবীর কথাটা শুনে আতিফের মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া আরও কালো হয়ে উঠলে, নবী তাকে আশ্বস্ত করল, ‘তুই চিন্তা করিস না। চাচাদের উদ্ধার করবই। প্রহরা যতই কড়া হোক, ফাঁকফোকর কিছু থাকবেই। কথায় আছে না, বজ্রআঁটুনি ফস্কা গেরো।’

নবীর কথায় আতিফের দুশ্চিন্তার ছায়া ঢাকা মুখে চিরিক করে খুশি খেলে উঠল। যেন মনের ঝিম মেরে থাকা সেতারে নবী যেন আলতো করে ছোঁয়া দিয়ে খুশির মিহি ধুন তুলে দিল। সে ধুনের চিকন ঢেউ স্পর্শ করল তার কাতর চোখমুখ। যেভাবে বৃষ্টির ছাটে কাত হয়ে যাওয়া ঘাসের পাতা ঠিকরে পড়া রোদ পেতেই আনন্দে ঝলমল করে ওঠে, নবীর শেষ কথাটায় আতিফের মন’টাও আলতো করে ঝলমলিয়ে উঠল। ‘নবী, তুই খোঁজ নে তো, নয়াপাড়াতে আমাদের কোন কোন লোক আছে।’ ঘুটি সাজাতে লাগল আতিফ।

‘সে না হয় খোঁজ নিচ্ছি, ওখানে আমাদের অনেক লোক আছে, লোক পেতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু…।’
‘কিন্তু কী?’
‘এখন তো তুই বেরোতে পারবি না। কালকেই তো আইএসআই’এর লোক আসবেন। তাছাড়া পরশুই তো আমার “লিটিল বার্ড অ্যাক্সান’। সে অ্যাক্সেন তো আমার নেতৃত্বেই হবে।’ ‘তাহলে তুই থাক, আমি একাই নয়াপাড়া যাব।’

‘দেখ, আমি বুঝছি, তোর নয়াপাড়া যাওয়াটা সত্যিই এখন দরকার। খুবই দরকার। কিন্তু আমি তো নিরুপায়। তাছাড়া আর জে এফ’এর লেফটানেন্ট তোকে এই মুহূর্তে ছাড়বে কি না সন্দেহ আছে।’

‘ছাড়বে না মানে? আলবাত ছাড়তে হবে। ওরা না ছাড়লে, আমিই আর জে এফ ছেড়ে চলে যাব।’ ‘তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে আতিফ। আবেগ সংবরণ কর। তুই ভাল করেই জানিস যে, এখানে একবার কেউ ঢুকলে আর বেরোতে পারে না। আর বেরোলে লাশ বের হয়।’

‘ওহো, তাহলে আমি এখন কী করব?’ মাথা খুঁটে আতিফ। নবী তাকে বোঝায়, ‘দেখ, আমরা এমন জগতে ঢুকেছি, এখানে কোন পরিবার, আত্মীয়স্বজন বলে কিচ্ছু নেই। একাজে আবেগের বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। চোখের পানি এখানে হারাম। কান্না কাপুরুষের লক্ষণ। মুজাহিদ’দের ওসব থাকতে নেই। আমরা তো এই ঠুনকো জীবন আল্লাহকে মহৎ এবাদতের জন্য উৎসর্গ করেছি।’

‘আমরা যত বড় মুজাহিদই হই না কেন, এ শরীরের রক্ত-মাংস তো আর পাথর হয়ে যায়নি? হৃদয়ের অনুভূতিগুলোও ঝেটে মরে যায়নি। এখনো চোখ বুজে আসলে চোখের পাতা দিয়ে নেমে আসে প্রেম। মায়ের আঁচলের হাওয়া। আর চোখ খুললে আমি দেখতে পাই, আমার মা আমার জন্যে থালায় ভাত বেড়ে বসে আছে। এসব কি কখনও শরীর মন থেকে আলাদা হয়? না হবে কোনোদিন? যতক্ষণ দেহে শ্বাস থাকবে, ততক্ষণ থাকবে এসব। তুই বা কেন ঘুমের মধ্যে মাঝে মধ্যে ‘মা’ বলে চিৎকার করে উঠিস?’

‘মা’র কথাটা বলায় নবীর ভেতরটা ধড়াক করে ওঠে। কিচ্ছু বলল না। মূর্তির মতো ঠাই দাঁড়িয়ে থাকল। থুতনিটাকে উপরে তুলে জানালার দিকে চোখ ফেলে চুপ হয়ে গেল। তার আবেগের দরজাটাও শিমুল ফলের মোড়কের মতো খুলে যাচ্ছে। মনের ভাবনাগুলো শিমুল তুলোর মতো ফিনফিন করে উড়ে বেরোচ্ছে। নিশ্চল মূর্তিমানব নবীর চোখ থেকে টপাস করে ঝরে পড়ল অশ্রু। মানুষ নয়, যেন মূর্তি কাঁদছে!
‘আবেগ’ কি আর মাথার উকুন, যে আঙুলের নখের ওপর রেখে ‘পটাস’ করে গেলে মেরে ফেলা যায়? ‘আবেগ’ই তো হল আত্মার শ্বাস। জীবনের স্পন্দন। ‘আবেগ’ না থাকলে একজন মানুষ কীভাবে রক্তের যন্ত্রণা টের পাবেন? প্রকৃতির রঙে মিশিয়ে নেবেন নিজেকে? প্রকৃতিরও ‘আবেগ’ আছে। তাইতো, মেঘ ওঠে, ঝড় বয়, বৃষ্টি পড়ে আবার রোদ ছিটিয়ে ঝলমল করে হাসে। মানুষ তো প্রকৃতির থেকে আলাদা কিছু নয়? মানুষ প্রকৃতিরই সন্তান। প্রকৃতির কোলেই তো তার বড় হয়ে ওঠা। মানুষের মনে ঝড় ওঠে, বৃষ্টি হয় বলেই তো মানুষ এত সৃষ্টি করতে পেরেছেন। সৃষ্টির আহ্লাদে নিজেকে রোদ্দুর বানাতে পেরেছেন।

‘চোখের পানি মোছ। যুদ্ধের পোশাক পরে চোখের পানি ফেলা বড্ড বেমানান।’ আতিফ নবীকে হেস মারে। নবী চুরি করে হাত দিয়ে চোখ মোছে। ভেজা ঢোক গিলে মিনমিন করে, ‘যতই বলি, কষ্ট কি আর শীলনুড়া পিটে বের করা যায়? আনন্দ যেমন রগে রগে বয়, কষ্টও রগে রগে ছোটে। তড়পায়। ফোঁপায়। হু হু করে কাঁদে।’
‘ঠক’ করে দরজায় একটা শব্দ হল। নবী আতিফ থড়বড় করে চোখ মুছে নিল। নবী ঘাড় উঁচু নিচু করে পরনের খাঁকিটা ফিটফাট করে, কোমরে ঝোলানো ছাই রঙের পিস্তলের খোলে রূপোলী রঙের পিস্তলটা পুরে নিল। আতিফ ‘খক’ করে একবার চোরা কাসি কেসে কণ্ঠটাকে ঝালিয়ে নিল। সকালের তেরছা রোদ জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরের মেঝেতে ঠিকরে পড়ছে। আলোর সাথে সাথে গা এলিয়ে ঢুকে পড়ছে গাছের শাখা-পাতার ঝিলমিল ছায়া। ঘরের কাঠের মেঝেতে সে ছায়া ছড়ানাচ নাচছে। পাখির কূজন বাতাস ফুঁড়ে ঘুঙুরের মতো ঢুকছে। আতিফের ঠোঁট ফিসফিস করে উঠল, ‘এত সকালে’!
‘তাই তো!’ নবীর চোখে বিস্ময়ের ঘোর। ফিসফিসিয়ে বলল, ‘উপর মহল থেকে খুব তাড়া আছে মনে হয়।’

‘মরতে তো ওদেরকে হয় না। বুদ্ধি দিয়েই খালাস। ঠ্যালা বুঝবে কী করে।’ ঠোঁট বাঁকায় আতিফ। কানের লতিকা লাল হয়ে উঠছে তার। ‘ঠক’। আবারও দরজায় টোকা। আতিফ নবীকে চোখের ইশারা করে। নবী পা টিপে টিপে দরজার দিকে এগোতেই আবারও ‘ঠক’ শব্দটা হল। কাঠের দু-ফালি দরজা। পোক্ত করে ভেজানো আছে। লোহার ছিটকেনির সঙ্গে কাঠের একটা শক্ত হুড়কেও ঠেসে লাগানো আছে। ‘হড়াম’ করে হুড়কেটা খুলল নবী। বাদামী রঙের হুড়কেটা পাশের কোণে হেলান দিয়ে, দরজার মাথার উপরে লাগানো ‘খট’ করে ছিটকেনিটা নিচের দিকে টেনে, ‘ক্যাঁ-অ্যা-চ’ করে দরজাটা খুলল নবী। একমুখ চাপ দাড়ি নিয়ে দরজার একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ‘রোহিঙ্গা জেহাদি ফৌজ’ অর্থাৎ আর জে এফ’এর জুনিয়ার কমিশন্ড অফিসার, জে সি ও, মেজর জেনারেল জুনাইদ মোল্লা। তার পেছনে তার মাথা টপকে একজন লম্বা চিকন বডির ফিটফাট লোক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি। গোঁফটা ঘন নয়। ফিনফিনে। গায়ে কালো রঙের কোর্ট। তালগাছের গুঁড়ির মতো লম্বা পা’দুটোয় ছাইরঙা স্যুট। বোদাম খোলা কোর্ট’টার ভেতর থেকে উঁকি মারছে নীল রঙের সার্ট। ভাসা ভাসা চোখের নিচে একটা ঢেঁড়স ফালি নাক। লোকটার চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, তার ব্যক্তিত্বকে চাগান দিচ্ছে। লোকটার হাতে কালো রঙের ছোট সাইজের একটা স্যুটকেস।

‘আসসালামো ওয়ালাইকুম, হুজুর।’ সালাম দিল নবী। আগন্তুক দুজনেই ঠোঁট নড়ালেন, ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’ ‘আসুন, আসুন, ভেতরে আসুন।’ মাথা ঝুঁকিয়ে পথ দেখাল নবী। তারা অন্দরে ঢুকতেই, আতিফ সালাম দিল। আগত অতিথিরাও প্রত্যুত্তরের সালাম দিলেন।
‘জনাব তশরিফ রাখুন।’ একটা তুলোর গদি লাগানো কাঠের চেয়ার এগিয়ে দিয়ে লম্বা লোকটিকে বসতে বলল নবী। ‘শুকরিয়া’ বলে লম্বা লোকটি চেয়ারে ‘দ’ হয়ে বসলেন। মেজর জেনারেল জুনাইদ মোল্লা শোফাটার ওপরে হেলান দিয়ে বসলেন। ‘আলাপ করিয়ে দিই, ইনি হলেন আই এস আই’এর জুনিয়র ফিল্ড ব্রাঞ্চ অফিসার লেফটেন্যান্ট মজিদ ভাট।’ আতিফ আর নবী একসঙ্গে ‘আদাব’ জানাল। তারপর মজিদ ভাট’এর দিকে চোখ ফেলে আতিফ আর নবীকে দেখিয়ে জুনাইদ মোল্লা বললেন, ‘হুজুর, এ হল আতিফ ইসলাম আর এ হল নবীউল আলম, সবাই নবী বলে ডাকে।’ লেফটেন্যান্ট মজিদ ভাট হাতের তালু পেতে ‘আদাব’ জানালেন।
‘তা নবী তোমার ‘লিটলবার্ড’ এর খবর কী? প্রস্তুতি সব কমপ্লিট তো?’ জানতে চায়লেন মেজর জেনারেল জুনাইদ।
‘জি, হুজুর।’ ঘাড় হেলাল নবী।
‘বালুখালি চৌকি’র রুটম্যাপ পেয়েছ তো?’
‘জি।’
‘বালুখালি চৌকি’ উড়িয়ে দেওয়াটা আমাদের সব থেকে ফরজ কাজ। ওটা যে এই দুনিয়ার একটা দোযখ। ওকে ধুলোতে মিশিয়ে দাও। ‘দাঁত কটমট করে ওঠেন জুনাইদ মোল্লা। কানের গোড়ার রগটা রাগে টনটন করছে।’

‘জি হুজুর, বালুখালি চৌকিই জেনারেল লুন সান’এর ষড়যন্ত্রের মূল জায়গা। ওটাকে ওড়াতে পারলেই, লুন সান’এর একটা ডানা ভেঙে দেওয়া যাবে। হারামখোর অত সুন্দর স্পটটাকে মানুষ মারার কসাইখানা বানিয়ে ফেললেন!’ রাগে টগবগ করে ওঠে নবী। ‘খট’ করে টি-টেবিলটার ওপর দুটো গ্লাস রাখল আতিফ। কাঁচের ঝাঁ চকচকে গ্লাস। জানালার আলো ঠিকরে হীরের মতো ঝলমল করছে। গ্লাসের গায়ে হিজিবিজি প্রতিবিম্ব।

‘হুজুর, সরবতটা পান করে নিন।’ বলল আতিফ। জুনাইদ মোল্লা একটা গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে ‘ঢকঢক’ করে খেয়ে নিলেন। ‘আহ! বেশ বানিয়েছ তো!’ বলে একটা স্বস্তির ঢেকুর তুলে সরবতটার সুনাম করলে, আতিফ মুখ কাঁচুমাচু করে বলল, ‘ওই আর কি।’ মজিদ ভাট সরবতটা এখনো খাননি দেখে জুনাইদ বললেন, “হুজুর, মেহেরবানি করে সরবতটা গ্রহণ করবেন।’

চলবে…

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

 

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত

করোনাভাইরাস শনাক্ত। ছবি: সংগৃহীত

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ জনে। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। ফলে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৯৪ জনে অবস্থান করছে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে উপসর্গবিহীন রোগীসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৭ হাজার ২৯৪ জন। সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৮৫টি ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৮৮টি। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৩টি।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার চার দশমিক ১২ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৪ শতাংশ।

এতে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ আইসোলেশনে আসেনি এবং আইসোলেশন থেকে কেউ ছাড়পত্র পায়নি। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে এসেছেন চার লাখ ৫২ হাজার ৯৬৬ জন এবং আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন চার লাখ ২৩ হাজার ৭১৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ২৯ হাজার ২৫১ জন।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, হিট অ্যালার্ট জারি

বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে তীব্র তাপদাহ। টানা চারদিন ধরে ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩ টার সময় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তীব্র তাপপ্রবাহে শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানি। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপদাহে হিট ওয়েভ অ্যালার্ট জারি করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। মাইকিং করে বলা হয়, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হতে।

দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের তাপে চরম গরম অনুভূত হচ্ছে। রোদে যেন আগুনের ফুলকি ঝরছে। রোদের তীব্র প্রখরতায় উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশ। নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, ইজিবাইক চালক ও ভ্যান-রিকশা চালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হা-হুতাশ করতে দেখা গেছে তাদেরকে। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা। তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা।

গরম থেকে বাঁচতে পানিতে নেমেছেন শিশু-কিশোররা। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘তীব্র তাপদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে, আপাতত বৃষ্টির সম্ভবনা নেই। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনও পর্যন্ত কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না।’

২০২৩ সালে ১৯ ও ২০ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

গাছের ছায়ায় বসে আরাম করছেন ক্লান্ত মানুষজন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের আশু মিয়া ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, প্রচণ্ড গরমে মাঠে জমিতে কাজ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। ভ্যাপসা গরমে বেশিক্ষণ মাঠে অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছেনা। ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দেওয়ার পরও মাটি শুকিয়ে যাচ্ছে।
কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুজন আলী বলেন, সকালে কাজের জন্য অফিসে আসতে হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে। সড়ক থেকে গরম উঠে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বাইরে বেশি সময় অবস্থান করা যাচ্ছে না।

উথলী গ্রামের শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, বারবার পানি পান করেও তৃষ্ণা মেটানো যাচ্ছে না। বৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। পরিবেশের ভারসাম্য বাজায় রাখতে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে প্রতিদিন।

এদিকে চুয়াডাঙ্গাতে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শক্রমে চুয়াডাঙ্গাতে বৃহস্পতিবার ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট ওয়েভ অ্যালার্ট (তীব্র তাপদাহের সতর্কতা) জারি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় তথ্য অফিসের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।

জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের ঈদ পুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধন করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই গণসংযোগ চলবে আগামী ৩ মে পর্যন্ত।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজপথের আন্দোলনে বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ইসলামের সুমহান আদর্শের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন কেউই আমাদের দাওয়াতের বাইরে থাকবে না। আর সর্ব প্রথম দাওয়াত হবে নিজের নফসের প্রতি। আমাদের কথা ও কাজে যেন অমিল না থাকে। যেটা মানুষকে করতে বলব, সেটা যেন আমি নিজে আগে আমল করি।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি জনশক্তির কথাবার্তা, লেনদেন, সামাজিক কাজকর্ম আল্লাহর দ্বীন বা কোরআন অনুযায়ী হতে হবে। যতই বাঁধা আসুক আমরা ইকামাতে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যাব। মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে। জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই আমাদের দাওয়াত কার্যকর হবে।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে অনলাইন মাধ্যম জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইভ-এ ঈদপুনর্মিলনী ও গণসংযোগ পক্ষের উদ্বোধনে এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মনজুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ।

এসময় সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রমজানের প্রকৃত শিক্ষাকে আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। যারা রমজানে তাকওয়া অর্জনের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন মূলত তাদের জন্যই ঈদের আনন্দ। আমীরে জামায়াতের ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে ১৫ দিনব্যাপী গণসংযোগ পক্ষ চলবে।

সর্বশেষ সংবাদ

২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা, হিট অ্যালার্ট জারি
জামায়াতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
শহরে কৃষক লীগের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না: ওবায়দুল কাদের
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে কেনিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ১০
পালিয়ে আসা ২৮৫ সেনা সদস্যকে ২২ এপ্রিল ফেরত নেবে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন: ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
সারাদেশে ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
বিমানবন্দরের বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে পড়ল বাস, প্রকৌশলী নিহত
১০ হাজার টাকা চেয়ে না পেয়ে বাবাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুলকে শোকজ করল আওয়ামী লীগ
হামলার পর ইসরায়েলকে যে হুমকি দিল ইরান
আওয়ামী লীগ দেশকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে: মির্জা ফখরুল
স্বচ্ছতার সাথে অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাই করা হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
তীব্র গরমের মধ্যেই ঢাকাসহ তিন বিভাগে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আভাস
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, সন্দেহের জেরে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহত
রাজধানীর শিশু হাসপাতালে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস মারা গেছেন