শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক

চায়ের দোকানটায় গিজগিজে ভিড়। ফুল ভলিউমে একটা টিভি চলছে। হিন্দি ছবির একটা রংটাপ্পা গান হচ্ছে। লোকজন চোখ ঢুকিয়ে দেখছে। আজকাল রাস্তার ধারের চায়ের দোকানগুলোয় টিভি থাকা মামুলি ব্যাপার। সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের ছ্যাবলামো সিনেমা। বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান সিনেমার রমরমা বাজার। টিভির গানের শব্দ ফুঁড়ে মাঝে মধ্যে চাওয়ালার চা ছাঁকনি দিয়ে চা ছাঁকার ‘খট খট’ শব্দ কানে এসে ঠেকছে। তার মাঝে ঠেলা দিয়ে উঠছে ভিড়ের গুঞ্জন। চাটায়ের দেওয়াল খামচে বাদুড়ের মতো লেজ বের করে ঝুলছে অন্ধকার। রাত এখনো সরের মতো ঘন না হলেও, সর হওয়ার জন্যে উৎলাতে শুরু করেছে। ধোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে গোধূলির শেষ টান। আর ঘণ্টাখানেক গেলেই আলখাল্লার মতো পা অবদি ঝুঁকে নামবে অন্ধকার। গেঁড়ে বসবে রাত। চায়ে একটা ‘সুড়ুৎ’ করে চুমুক দিয়ে নবী বলল, “আমার কিন্তু তোর সঙ্গে যাওয়া হবে না।“
“যাওয়া হবে না, মানে!” ভ্রূ টান করল আতিফ। ফিসফিস করে নবী বলল, “আমি বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাব।“
“কেন? তুই যে বললি, তুই বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাবি না। ওতে জুনাইদ মোল্লার স্বার্থ জড়িয়ে আছে। হিতে ভালোর থেকে খারাপই বেশি হবে।“
“হ্যাঁ, তা বলেছিলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, বালুখালি চৌকি ধ্বংস না করলে, মিয়ানমার সেনার কাছে আমাদের আর জে এফ’এর শক্তির ঝাঁঝ দেওয়া যাবে না। ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে, আর জে এফ, রাখাইন দখল করেই ছাড়বে। আরে, আর জে এফ তো জুনাইদ মোল্লার বাপের সম্পত্তি নয়? আর জে এফ রোহিঙ্গাদের সংগঠন, রাখাইনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে জীবন বাজি রেখেছে। সুতরাং, আর জে এফ তো আর দোষ করেনি। যিনি দোষ করেছিলেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তলে তলে কু-ফন্দি এঁটেছিলেন, তাকে তো এ দুনিয়া থেকে আউট করে দিয়েইছি। সুতরাং ওই ষড়যন্ত্রের চ্যাপ্টার এখন বাসি। তা ছাড়া, বালুখালি চৌকির উপর আমার ব্যক্তিগত রাগ জড়িয়ে আছে, সেটা তো তুই ভালো করেই জানিস। যেকোনো মূল্যে এই চৌকিটাকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতেই হবে।“
“শুধু কি তোর একা, আমারও বংশের রক্ত লেগে আছে ওখানে।“
“সুতরাং তোকে একাই, নয়াপাড়া যেতে হবে। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তবে নিশ্চয় আবার দেখা হবে, ইনশাল্লাহ।“ চায়ের শেষ চুমুকটা দিল নবী। চা’টা পান করার পর শরীরটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আতিফও গ্লাসটায় শেষ চুমুক দিল। চায়ের বিল মিটিয়ে দিয়ে, বেঞ্চ ছাড়ল দুজনে। ট্রাকটার দিকে যেতে যেতে আতিফ বলল, “ট্রাকটার কী করবি?”
“থানচির কাছে লোক অপেক্ষা করছে। ট্রাকটা ওদের হাতে হস্তান্তর করে দেব। তারপর আমরা সাঙ্গু নদী ডিঙিতে করে পেরিয়ে ওপারে অটোরিকশা ধরে চলে যাব বান্দারবান।“

আতিফ একবার ভাবল, জিজ্ঞেস করি, থানচির কাছে যারা ট্রাকটার জন্যে অপেক্ষা করছে, তারা কারা? তাদের পরিচয় কী? আবার পরক্ষণেই ভাবল, কী দরকার অত ঘাঁটাঘাঁটি করার। যেটা চেয়েছিলাম, সেটা হয়েছে, ব্যস, এই ঢের। থপ থপ করে হেঁটে তারা দুজনে ট্রাকটার কাছে এল। চালকের আসনে নবী আর খালাসির আসনে আতিফ। ভুউভুউ করতে করতে একবার জোরে গ-অ করে উঠল ট্রাকটা। এক লাদা কালো ধোঁয়া ছেড়ে গড়াতে শুরু করল গেরুয়া রঙের দশ চাকা মালবাহী গাড়িটা। ধোঁয়ায় আবছা হয়ে উঠল পেছনের নম্বরপ্লেট। বডিতে আঁকা সবুজ রঙের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটার গায়েও বয়ে যাচ্চে কালো ধোঁয়ার হাওয়া-ঢেউ। ধীরে ধীরে ট্রাকটাকে গিলে খেয়ে নিল, চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কের ওপর বিছানা পেড়ে শুয়ে থাকা রাতের অন্ধকার। ব্যাকলাইটের লাল আলোটা সূর্য থেকে চাঁদ, চাঁদ থেকে তারা, তারপর তারা থেকে ধীরে ধীরে বিন্দু হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

আট
একেবারে কাক ভোরে বিছানা ছাড়ল আতিফ। পাশের ঘরে নবীকে ডাকতে গিয়ে দেখল, সে আগেই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বসে আছে। ফজরের আযান আসন্ন।
“কী রে কখন উঠলি?” চোখ দল্লাতে দল্লাতে জিজ্ঞেস করল আতিফ। তার চোখে তখনও ঘুমের আবেশ লেগে আছে।
“ঘুম থেকে উঠব কী রে! ঘুমই তো আসেনি। মানুষ যদি জেনে যায় যে, তুমি আগামীকাল মরবে, আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নাও, তার চোখে ঘুম কি আসবে?”
“নবী!” চোখ পাখির ডিমের মতো থির হয়ে যায় আতিফের।
“হ্যাঁ, আমি ঠিকই তো বলছি। কে আর স্বেচ্ছায় মরতে চায়? যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেও গলায় দড়ি দিয়ে যখন ঝুলে পড়ে, তখন বাঁচার জন্যে ছটফট করে। পায়ের নিচে একটা সাপোর্ট পাওয়ার জন্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করে তড়পায়।“
আতিফ কিচ্ছু বলে না। নবীর কথাবার্তায় তার চোখমুখ গাবফলের মতো হয়ে উঠছে! অতি ধীরে পা তুলে তুলে নবীর পাশে গিয়ে বসল আতিফ। নবীর পিঠে হাত রাখল। বন্ধুর শরীরের ছোঁয়া পেয়ে নবীর অন্তরটা ডুকরে উঠল। নবী চোখ ছলছল চোখে বলল, “আয়, একবার কোলাকুলি করে নিই। এটাই হয়ত এজীবনের শেষ কোলাকুলি।“ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল নবী। আতিফ নবীকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠল। দুজনের কান্নার স্বর যখন ভোরের ঝুঝকি ভেদ করে চার দেওয়ালে ধাক্কা খেতে লাগল, তখনই দূরের পাহাড়ি গ্রামটা থেকে মুয়াজ্জিনের গলায় ফজরের আজান ভেসে এল। কান্নার স্বরের সঙ্গে আযানের ধ্বনি মিশে ভোরটাকেই যেন কাঁদিয়ে দিচ্ছে। জানালার কাঁচ ঝাপসা। মিহি কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে। আসলে ভোর কাঁদছে। কেঁদেছে রাতের আকাশ। মানুষের কাঁদনে প্রকৃতিও যে কাঁদে। প্রকৃতির চোখেও কষ্টের অশ্রু ছলছল করে। দুজন দুজনকে ধরে ফোঁপাতেই থাকল। প্রথম মাথা তুলল নবী। বলল, “চল, ওজু করে নিই। আযান দিয়ে দিল।“
আতিফ কোনমতেই ছাড়ে না। হুকের মতো দৃঢ়ভাবে জাপটে ধরে থাকে। “ছাড়, ওজু করতে হবে।“ ঝাঁকানি দেয় নবী। আতিফ কথা কান’ই করে না। তার গাল চুইয়ে থুতনি বেয়ে নবীর ঘাড়ে এসে টসটস করে পড়ছে অশ্রু। নবী বুঝতে পারে, আতিফ একেবারে ভেঙে পড়েছে। সে আতিফের পিঠে হাত চাপড়ে শান্তনা দেয়। ভেজা গলায় শান্ত করে বলে, “কী আর করা যাবে বল, আমরা যে মুজাহিদ। আমাদের ভেঙে পড়লে তো হবে না। মৃত্যুই যে আমাদের অলংকার।“
“মৃত্যু ছাড়া কি কোন সমাধানই নেই? মৃত্যু ছাড়া কেন কোনও স্বাধীন দেশ পাওয়া যায় না?” মুখ তোলে আতিফ। তার গাল চুইয়ে পড়ছে অশ্রু।
“’দেশ’ তো দূরের কথা মৃত্যু ছাড়া এক কাঠা জমিও পাওয়া যায় না। এ তুইও জানিস, আমিও জানি। চল চল, এখন আবেগ সংবরণ কর। তোরও লেট হয়ে যাবে। তোকেও তো সূর্য ওঠার আগেই বের হতে হবে।“ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে নবী। আতিফ হাত দিয়ে চোখের জল মোছে। চোখ মুছতে মুছতে নবীর মাথার বালিশটার দিকে চোখ পড়ে যায় আতিফের। ভেতরটা ‘থক’ করে ওঠে। বালিশটা ভিজে জুবুথুবু। বোঝায় যাচ্ছে, নবী সারারাত কেঁদেছে। কেঁদে কেঁদে সাদা রঙের বালিশটাকে ভিজিয়ে কাদা করে ফেলেছে। তার শরীরের সমস্ত জল ‘অশ্রু’ হয়ে বেরিয়ে গেছে। মানুষের শরীরের জল যখন চোখের জল হয়ে যায়, তখন সে মানুষের হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ভেতরের কলকব্জা ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। মানুষ তখন বাইরে লোহালক্কড় হলেও ভেতরে গলা মোম হয়ে যায়। বাইরে পাথর কঠিন হলেও ভেতরে ঠুনকো কাঁচ হয়ে যায়, যাতে আলতো করে একটু ঠোকা দিলেই মর্মর করে ভেঙে পড়ে। নবীর এখন সেই দশা। বাইরে যতই মুজাহিদ, জেহাদ, ইহকাল পরকাল করুক না কেন, ভেতরে আসলে ওই গলা মোম। পলিমাটির মানুষ। দুজনে ওজু করে, ঘরের আয়তাকার ডাইনিং’এ জায়নামাজ পেতে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। জানালার কপাটে উঁকি দিচ্ছে আশ্বিনের ভোর। গা সিড়সিড় করা ফিনফিনে কুয়াশার আলো-ছায়া। দুই রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে মোট চার রাকাতের নামাজ, সালাতুল ফজর। ফরজ নামাজ শেষে একবার মোনাজাত ধরল নবী। আতিফও মোনাজাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলল। মোনাজাত ধরে কেঁদে ফেলল নবী। চোখের জল টসটস করে ঝরে পড়তে লাগল হাতের তালুতে। কথা বের হচ্ছে না। শুধু ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আতিফও গুঙিয়ে উঠছে। তারা এমনভাবে কাঁদছে, যেন তাদের কান্না সহ্য করতে না পেরে বাইরের আকাশও কুয়াশা হয়ে কাঁদছে।

নামাজ শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ জায়নামাজের ওপর হাঁটু পেড়ে চোখ বুঁজে বসে থাকল নবী। আতিফ জায়নামাজটা গুটিয়ে কাঠের আলমারিতে রেখে বলল, “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।“ চোখ খুলল নবী। মিনমিন করে বলল, “আল্লাহ তো আমাদেরকে অন্য কোনো কাজের জন্যেও পৃথিবীতে পাঠাতে পারতেন? এই ‘মারা আর মরা’ কাজ ছাড়া।“ কোমর তুলে হুকের মতো বেঁকে ছাপড়িয়ে জায়নামাজটা গোটাতে গোটাতে আরও বলল, “আল্লাহ যদি সব ভালোর জন্যেই করেন, তবে দুনিয়াই পাপ কাজ কেন হয়? সবকিছুর সঙ্গে আল্লাহকে জড়িয়ে দিলে হবে না। আল্লাহ তো হায়াত-মহুত আর রুজি ছাড়া প্রায় সবই মানুষের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। মরণের ষড়যন্ত্র পাকায়ও মানুষ আবার সে ষড়যন্ত্রের গোড়ায় ধোঁয়াও দেয় মানুষ। ফন্দিফেউর মানুষ করে আর দোষ হয় আল্লাহর। আমরা হয়ত ভুলে যায়, আল্লাহ নিজে কোনো কিছুর দোষ নেবেন না। পৃথিবীর সব ‘কারণ’এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে হয় প্রকৃতি না হয় মানুষ।“ জায়নামাজটা আলমারিতে রেখে ‘কচ’ করে আলমারির পাল্লাটা লাগিয়ে দিল। গুটি গুটি পায়ে আতিফের দিকে এগিয়ে এল। আতিফের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “আমি তোর জন্যে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলাম। তুই যেন তোর আব্বা-মা-ভাইয়েদের খুঁজে পাস। তোর আব্বা যেন সুস্থ থাকেন।“ কাটা গাছের গুঁড়ির মতো ধসমসিয়ে ভেঙে পড়ল আতিফ। নবীকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে ডুকরে উঠল, “আমি আল্লাহর কাছে তোর জন্যে সারারাত কেঁদেছি। তোর ‘মিশন’ যেন সফল হয়। তুই যেন সুস্থ সবল বেঁচে ফিরে আসতে পারিস। আল্লাহ যেন এত তাড়াতাড়ি আমাদের চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন না করে দেন।“

“জানে বেঁচে ফিরে আসি আর না আসি, আমাদের এই আত্মবলিদান কখনো বিফল হবে না। আমাদের স্বপ্ন সফল হবেই। আমরা স্বাধীন ‘রাখাইন রাষ্ট্র’ পাবই।“ কণ্ঠ ইস্পাতের মতো দঢ় হয়ে ওঠে নবীর। বুকের সিনা ফুলে উঠছে। চোখের জল আগুনের ফুলকিতে বদলে যাচ্ছে। এতক্ষণের ভেজা ভুষভুষে কণ্ঠ কামারশালার হাপরের মতো গনগন করছে। সেই আগুনে ‘জেহাদের’ ঘি পড়ে ছ্যান করে উঠল, “আমার মৃত্যু যেন শয়তান মিয়ানমার সেনাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে ওঠে। মায়ানমার সরকারের মাথার ওপর যেন জাহান্নাম নেমে আসে। তাদের দশা যেন ‘বনী ইসরাইল’দের মতো হয়। আল্লাহর গজব নেমে আসে। তাদের বংশ নির্বংশ হয়ে যায়। বংশে প্রদীপ জ্বালানোরও যেন কেউ না থাকে। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে যেন এই নরখাদক জাতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।“

চলবে...

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

 

Header Ad
Header Ad

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস

ছবি: সংগৃহীত

দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র গরমের দাপট। চলতি মে মাসের শুরুতে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে সহনীয় থাকলেও গত বুধবার (৭ মে) থেকে বাড়তে শুরু করে তাপমাত্রা।

শুক্রবার (৯ মে) পর্যন্ত দেশের ৪৫টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী রোববার (১১ মে) থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে এবং বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কিছু এলাকায়, যা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে জনজীবনে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এবার এপ্রিল মাসে সাধারণত যতোটা গরম পড়ে, তার তুলনায় এবারের উষ্ণতা ছিল তুলনামূলক কম। বর্ষার আগমনের আগে এই সময়টিতে স্বাভাবিকভাবেই গরম বাড়ে, তবে এবারের তাপপ্রবাহটি ব্যাপক বিস্তৃত হওয়ায় তা জনজীবনে ভোগান্তি বাড়িয়েছে। আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, এপ্রিল মাসে দেশে কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ থাকলেও তা এত বিস্তৃত ছিল না। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ স্থানে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের বুলেটিন অনুযায়ী, বর্তমানে রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল ও পটুয়াখালীসহ মোট ৪৫ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তবে তা মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর চেয়ে বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে ধরা হয়।

বুলেটিনে আরও বলা হয়, শুক্রবার সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়বে। আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা এবং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।

ঢাকায় এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২৮ মার্চ রাজধানীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় ঢাকার বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ এবং পশ্চিম বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস বয়ে যাচ্ছিল ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে।

চুয়াডাঙ্গায় এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল লালমনিরহাটের ডিমলায়—২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কিছু এলাকায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যা তাপপ্রবাহ প্রশমনে সহায়ক হতে পারে।

এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রচণ্ড গরমে যথাসম্ভব রোদ এড়িয়ে চলা, হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ঘন ঘন বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

Header Ad
Header Ad

আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস ও স্বৈরশাসনের অভিযোগে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এ দাবি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

সরকার জানিয়েছে, এ বিষয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং আলোচনা শেষে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের উল্লেখও করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

এ পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। পাশাপাশি জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এরই মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

 

এছাড়া, ফ্যাসিবাদী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনের ঘটনায় জনগণের ক্ষোভের বিষয়টিও সরকার পর্যবেক্ষণ করছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছে সরকার।

Header Ad
Header Ad

টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নাশকতার অভিযোগে ডেভিল হান্টের অভিযানে টাঙ্গাইলের মধুপুরে নাশকতার মামলায় ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ভূঞাপুর থানা পুলিশ।

শুক্রবার (০৯ মে) সকালে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেফতারকৃত আব্দুর রাজ্জাক উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বাগবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের ছেলে খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেলের অনুসারী ছিলেন।

অপরদিকে, একই মামলায় গত বুধবার রাতে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক আলমগীর নামে আরেক নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে গত বৃহস্পতিবার মধুপর থানায় সোপর্দ করা হয়।

এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম রেজাউল করিম জানান, মধুপুর থানায় নাশকতার মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক ও আলমগীরকে গ্রেফতারের পর মধুপুর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে যা বলল আবহাওয়া অফিস
আ.লীগ নিষিদ্ধে গুরুত্বের সাথে সরকার বিবেচনা করছে: সরকারের বিবৃতি
টাঙ্গাইলে নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতা রাজ্জাকসহ ২ জন গ্রেফতার
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আইপিএল
এবার অপেক্ষা তারেক রহমানের ফেরার, চলছে জোরালো প্রস্তুতি
পদ্মার এক ইলিশের দাম সাড়ে ৮ হাজার টাকা
৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হলো আইভীকে
জুমার পর যমুনার সামনে বড় জমায়েতের ডাক হাসনাত আব্দুল্লাহর
প্রথম আমেরিকান পোপ হলেন রবার্ট প্রিভোস্ট
একের পর এক ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ভারত, সীমান্তজুড়ে ব্ল্যাকআউট
নিষিদ্ধ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ
অবশেষে গ্রেফতার আইভী
ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার জেরে পিএসএলের বিদেশি ক্রিকেটারদের দেশত্যাগ শুরু
সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ল দুই মাস
মাহফুজ-আসিফ আ’লীগ নিষিদ্ধ চায়, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কারা: হাসনাত
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও পদ ছাড়লেন স্নিগ্ধ
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ, ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
টাঙ্গাইলে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
ভারতীয় অর্ধশত সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
নওগাঁর পতিসরে বিশ্বকবির কাছারি বাড়িতে জন্মবার্ষিকী ঘিরে উৎসবের আমেজ