বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক

চায়ের দোকানটায় গিজগিজে ভিড়। ফুল ভলিউমে একটা টিভি চলছে। হিন্দি ছবির একটা রংটাপ্পা গান হচ্ছে। লোকজন চোখ ঢুকিয়ে দেখছে। আজকাল রাস্তার ধারের চায়ের দোকানগুলোয় টিভি থাকা মামুলি ব্যাপার। সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের ছ্যাবলামো সিনেমা। বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান সিনেমার রমরমা বাজার। টিভির গানের শব্দ ফুঁড়ে মাঝে মধ্যে চাওয়ালার চা ছাঁকনি দিয়ে চা ছাঁকার ‘খট খট’ শব্দ কানে এসে ঠেকছে। তার মাঝে ঠেলা দিয়ে উঠছে ভিড়ের গুঞ্জন। চাটায়ের দেওয়াল খামচে বাদুড়ের মতো লেজ বের করে ঝুলছে অন্ধকার। রাত এখনো সরের মতো ঘন না হলেও, সর হওয়ার জন্যে উৎলাতে শুরু করেছে। ধোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে গোধূলির শেষ টান। আর ঘণ্টাখানেক গেলেই আলখাল্লার মতো পা অবদি ঝুঁকে নামবে অন্ধকার। গেঁড়ে বসবে রাত। চায়ে একটা ‘সুড়ুৎ’ করে চুমুক দিয়ে নবী বলল, “আমার কিন্তু তোর সঙ্গে যাওয়া হবে না।“
“যাওয়া হবে না, মানে!” ভ্রূ টান করল আতিফ। ফিসফিস করে নবী বলল, “আমি বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাব।“
“কেন? তুই যে বললি, তুই বালুখালি চৌকি আক্রমণে যাবি না। ওতে জুনাইদ মোল্লার স্বার্থ জড়িয়ে আছে। হিতে ভালোর থেকে খারাপই বেশি হবে।“
“হ্যাঁ, তা বলেছিলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, বালুখালি চৌকি ধ্বংস না করলে, মিয়ানমার সেনার কাছে আমাদের আর জে এফ’এর শক্তির ঝাঁঝ দেওয়া যাবে না। ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে, আর জে এফ, রাখাইন দখল করেই ছাড়বে। আরে, আর জে এফ তো জুনাইদ মোল্লার বাপের সম্পত্তি নয়? আর জে এফ রোহিঙ্গাদের সংগঠন, রাখাইনকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে জীবন বাজি রেখেছে। সুতরাং, আর জে এফ তো আর দোষ করেনি। যিনি দোষ করেছিলেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, তলে তলে কু-ফন্দি এঁটেছিলেন, তাকে তো এ দুনিয়া থেকে আউট করে দিয়েইছি। সুতরাং ওই ষড়যন্ত্রের চ্যাপ্টার এখন বাসি। তা ছাড়া, বালুখালি চৌকির উপর আমার ব্যক্তিগত রাগ জড়িয়ে আছে, সেটা তো তুই ভালো করেই জানিস। যেকোনো মূল্যে এই চৌকিটাকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতেই হবে।“
“শুধু কি তোর একা, আমারও বংশের রক্ত লেগে আছে ওখানে।“
“সুতরাং তোকে একাই, নয়াপাড়া যেতে হবে। আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখেন, তবে নিশ্চয় আবার দেখা হবে, ইনশাল্লাহ।“ চায়ের শেষ চুমুকটা দিল নবী। চা’টা পান করার পর শরীরটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। আতিফও গ্লাসটায় শেষ চুমুক দিল। চায়ের বিল মিটিয়ে দিয়ে, বেঞ্চ ছাড়ল দুজনে। ট্রাকটার দিকে যেতে যেতে আতিফ বলল, “ট্রাকটার কী করবি?”
“থানচির কাছে লোক অপেক্ষা করছে। ট্রাকটা ওদের হাতে হস্তান্তর করে দেব। তারপর আমরা সাঙ্গু নদী ডিঙিতে করে পেরিয়ে ওপারে অটোরিকশা ধরে চলে যাব বান্দারবান।“

আতিফ একবার ভাবল, জিজ্ঞেস করি, থানচির কাছে যারা ট্রাকটার জন্যে অপেক্ষা করছে, তারা কারা? তাদের পরিচয় কী? আবার পরক্ষণেই ভাবল, কী দরকার অত ঘাঁটাঘাঁটি করার। যেটা চেয়েছিলাম, সেটা হয়েছে, ব্যস, এই ঢের। থপ থপ করে হেঁটে তারা দুজনে ট্রাকটার কাছে এল। চালকের আসনে নবী আর খালাসির আসনে আতিফ। ভুউভুউ করতে করতে একবার জোরে গ-অ করে উঠল ট্রাকটা। এক লাদা কালো ধোঁয়া ছেড়ে গড়াতে শুরু করল গেরুয়া রঙের দশ চাকা মালবাহী গাড়িটা। ধোঁয়ায় আবছা হয়ে উঠল পেছনের নম্বরপ্লেট। বডিতে আঁকা সবুজ রঙের বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটার গায়েও বয়ে যাচ্চে কালো ধোঁয়ার হাওয়া-ঢেউ। ধীরে ধীরে ট্রাকটাকে গিলে খেয়ে নিল, চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কের ওপর বিছানা পেড়ে শুয়ে থাকা রাতের অন্ধকার। ব্যাকলাইটের লাল আলোটা সূর্য থেকে চাঁদ, চাঁদ থেকে তারা, তারপর তারা থেকে ধীরে ধীরে বিন্দু হয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

আট
একেবারে কাক ভোরে বিছানা ছাড়ল আতিফ। পাশের ঘরে নবীকে ডাকতে গিয়ে দেখল, সে আগেই ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে বসে আছে। ফজরের আযান আসন্ন।
“কী রে কখন উঠলি?” চোখ দল্লাতে দল্লাতে জিজ্ঞেস করল আতিফ। তার চোখে তখনও ঘুমের আবেশ লেগে আছে।
“ঘুম থেকে উঠব কী রে! ঘুমই তো আসেনি। মানুষ যদি জেনে যায় যে, তুমি আগামীকাল মরবে, আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নাও, তার চোখে ঘুম কি আসবে?”
“নবী!” চোখ পাখির ডিমের মতো থির হয়ে যায় আতিফের।
“হ্যাঁ, আমি ঠিকই তো বলছি। কে আর স্বেচ্ছায় মরতে চায়? যে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে, সেও গলায় দড়ি দিয়ে যখন ঝুলে পড়ে, তখন বাঁচার জন্যে ছটফট করে। পায়ের নিচে একটা সাপোর্ট পাওয়ার জন্যে ধড়ফড় ধড়ফড় করে তড়পায়।“
আতিফ কিচ্ছু বলে না। নবীর কথাবার্তায় তার চোখমুখ গাবফলের মতো হয়ে উঠছে! অতি ধীরে পা তুলে তুলে নবীর পাশে গিয়ে বসল আতিফ। নবীর পিঠে হাত রাখল। বন্ধুর শরীরের ছোঁয়া পেয়ে নবীর অন্তরটা ডুকরে উঠল। নবী চোখ ছলছল চোখে বলল, “আয়, একবার কোলাকুলি করে নিই। এটাই হয়ত এজীবনের শেষ কোলাকুলি।“ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল নবী। আতিফ নবীকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠল। দুজনের কান্নার স্বর যখন ভোরের ঝুঝকি ভেদ করে চার দেওয়ালে ধাক্কা খেতে লাগল, তখনই দূরের পাহাড়ি গ্রামটা থেকে মুয়াজ্জিনের গলায় ফজরের আজান ভেসে এল। কান্নার স্বরের সঙ্গে আযানের ধ্বনি মিশে ভোরটাকেই যেন কাঁদিয়ে দিচ্ছে। জানালার কাঁচ ঝাপসা। মিহি কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে। আসলে ভোর কাঁদছে। কেঁদেছে রাতের আকাশ। মানুষের কাঁদনে প্রকৃতিও যে কাঁদে। প্রকৃতির চোখেও কষ্টের অশ্রু ছলছল করে। দুজন দুজনকে ধরে ফোঁপাতেই থাকল। প্রথম মাথা তুলল নবী। বলল, “চল, ওজু করে নিই। আযান দিয়ে দিল।“
আতিফ কোনমতেই ছাড়ে না। হুকের মতো দৃঢ়ভাবে জাপটে ধরে থাকে। “ছাড়, ওজু করতে হবে।“ ঝাঁকানি দেয় নবী। আতিফ কথা কান’ই করে না। তার গাল চুইয়ে থুতনি বেয়ে নবীর ঘাড়ে এসে টসটস করে পড়ছে অশ্রু। নবী বুঝতে পারে, আতিফ একেবারে ভেঙে পড়েছে। সে আতিফের পিঠে হাত চাপড়ে শান্তনা দেয়। ভেজা গলায় শান্ত করে বলে, “কী আর করা যাবে বল, আমরা যে মুজাহিদ। আমাদের ভেঙে পড়লে তো হবে না। মৃত্যুই যে আমাদের অলংকার।“
“মৃত্যু ছাড়া কি কোন সমাধানই নেই? মৃত্যু ছাড়া কেন কোনও স্বাধীন দেশ পাওয়া যায় না?” মুখ তোলে আতিফ। তার গাল চুইয়ে পড়ছে অশ্রু।
“’দেশ’ তো দূরের কথা মৃত্যু ছাড়া এক কাঠা জমিও পাওয়া যায় না। এ তুইও জানিস, আমিও জানি। চল চল, এখন আবেগ সংবরণ কর। তোরও লেট হয়ে যাবে। তোকেও তো সূর্য ওঠার আগেই বের হতে হবে।“ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে নবী। আতিফ হাত দিয়ে চোখের জল মোছে। চোখ মুছতে মুছতে নবীর মাথার বালিশটার দিকে চোখ পড়ে যায় আতিফের। ভেতরটা ‘থক’ করে ওঠে। বালিশটা ভিজে জুবুথুবু। বোঝায় যাচ্ছে, নবী সারারাত কেঁদেছে। কেঁদে কেঁদে সাদা রঙের বালিশটাকে ভিজিয়ে কাদা করে ফেলেছে। তার শরীরের সমস্ত জল ‘অশ্রু’ হয়ে বেরিয়ে গেছে। মানুষের শরীরের জল যখন চোখের জল হয়ে যায়, তখন সে মানুষের হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ভেতরের কলকব্জা ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে। মানুষ তখন বাইরে লোহালক্কড় হলেও ভেতরে গলা মোম হয়ে যায়। বাইরে পাথর কঠিন হলেও ভেতরে ঠুনকো কাঁচ হয়ে যায়, যাতে আলতো করে একটু ঠোকা দিলেই মর্মর করে ভেঙে পড়ে। নবীর এখন সেই দশা। বাইরে যতই মুজাহিদ, জেহাদ, ইহকাল পরকাল করুক না কেন, ভেতরে আসলে ওই গলা মোম। পলিমাটির মানুষ। দুজনে ওজু করে, ঘরের আয়তাকার ডাইনিং’এ জায়নামাজ পেতে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। জানালার কপাটে উঁকি দিচ্ছে আশ্বিনের ভোর। গা সিড়সিড় করা ফিনফিনে কুয়াশার আলো-ছায়া। দুই রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত নিয়ে মোট চার রাকাতের নামাজ, সালাতুল ফজর। ফরজ নামাজ শেষে একবার মোনাজাত ধরল নবী। আতিফও মোনাজাতের জন্যে আল্লাহর দরবারে হাত তুলল। মোনাজাত ধরে কেঁদে ফেলল নবী। চোখের জল টসটস করে ঝরে পড়তে লাগল হাতের তালুতে। কথা বের হচ্ছে না। শুধু ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আতিফও গুঙিয়ে উঠছে। তারা এমনভাবে কাঁদছে, যেন তাদের কান্না সহ্য করতে না পেরে বাইরের আকাশও কুয়াশা হয়ে কাঁদছে।

নামাজ শেষ হওয়ার পরেও কিছুক্ষণ জায়নামাজের ওপর হাঁটু পেড়ে চোখ বুঁজে বসে থাকল নবী। আতিফ জায়নামাজটা গুটিয়ে কাঠের আলমারিতে রেখে বলল, “আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।“ চোখ খুলল নবী। মিনমিন করে বলল, “আল্লাহ তো আমাদেরকে অন্য কোনো কাজের জন্যেও পৃথিবীতে পাঠাতে পারতেন? এই ‘মারা আর মরা’ কাজ ছাড়া।“ কোমর তুলে হুকের মতো বেঁকে ছাপড়িয়ে জায়নামাজটা গোটাতে গোটাতে আরও বলল, “আল্লাহ যদি সব ভালোর জন্যেই করেন, তবে দুনিয়াই পাপ কাজ কেন হয়? সবকিছুর সঙ্গে আল্লাহকে জড়িয়ে দিলে হবে না। আল্লাহ তো হায়াত-মহুত আর রুজি ছাড়া প্রায় সবই মানুষের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। মরণের ষড়যন্ত্র পাকায়ও মানুষ আবার সে ষড়যন্ত্রের গোড়ায় ধোঁয়াও দেয় মানুষ। ফন্দিফেউর মানুষ করে আর দোষ হয় আল্লাহর। আমরা হয়ত ভুলে যায়, আল্লাহ নিজে কোনো কিছুর দোষ নেবেন না। পৃথিবীর সব ‘কারণ’এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে হয় প্রকৃতি না হয় মানুষ।“ জায়নামাজটা আলমারিতে রেখে ‘কচ’ করে আলমারির পাল্লাটা লাগিয়ে দিল। গুটি গুটি পায়ে আতিফের দিকে এগিয়ে এল। আতিফের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “আমি তোর জন্যে আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করলাম। তুই যেন তোর আব্বা-মা-ভাইয়েদের খুঁজে পাস। তোর আব্বা যেন সুস্থ থাকেন।“ কাটা গাছের গুঁড়ির মতো ধসমসিয়ে ভেঙে পড়ল আতিফ। নবীকে জড়িয়ে ধরল। হাউমাউ করে ডুকরে উঠল, “আমি আল্লাহর কাছে তোর জন্যে সারারাত কেঁদেছি। তোর ‘মিশন’ যেন সফল হয়। তুই যেন সুস্থ সবল বেঁচে ফিরে আসতে পারিস। আল্লাহ যেন এত তাড়াতাড়ি আমাদের চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন না করে দেন।“

“জানে বেঁচে ফিরে আসি আর না আসি, আমাদের এই আত্মবলিদান কখনো বিফল হবে না। আমাদের স্বপ্ন সফল হবেই। আমরা স্বাধীন ‘রাখাইন রাষ্ট্র’ পাবই।“ কণ্ঠ ইস্পাতের মতো দঢ় হয়ে ওঠে নবীর। বুকের সিনা ফুলে উঠছে। চোখের জল আগুনের ফুলকিতে বদলে যাচ্ছে। এতক্ষণের ভেজা ভুষভুষে কণ্ঠ কামারশালার হাপরের মতো গনগন করছে। সেই আগুনে ‘জেহাদের’ ঘি পড়ে ছ্যান করে উঠল, “আমার মৃত্যু যেন শয়তান মিয়ানমার সেনাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে ওঠে। মায়ানমার সরকারের মাথার ওপর যেন জাহান্নাম নেমে আসে। তাদের দশা যেন ‘বনী ইসরাইল’দের মতো হয়। আল্লাহর গজব নেমে আসে। তাদের বংশ নির্বংশ হয়ে যায়। বংশে প্রদীপ জ্বালানোরও যেন কেউ না থাকে। পৃথিবীর মানচিত্র থেকে যেন এই নরখাদক জাতি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।“

চলবে...

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

 

Header Ad

অনুমতি মিললে ঈদের আগেই গরু আমদানি সম্ভব: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলো ফারনান্দ ফেরেস। ছবি: সংগৃহীত

অনুমতি মিললে ঈদের আগেই ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি সম্ভব বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলো ফারনান্দ ফেরেস।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে এ কথা বলেন তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিলের খামারগুলো রপ্তানির লক্ষ্যে প্রচুর পরিমাণ পশু প্রস্তুত করেছে। দীর্ঘদিন থেকে ব্রাজিল সারা বিশ্বে গোমাংস রপ্তানি করে আসছে। এর আগে বাংলাদেশে মাংস রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে জীবন্ত পশুর বিশাল চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে আগামী জুনের ভেতর জীবন্তু গরু আনা সম্ভব।

বক্তব্য রাখছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলো ফারনান্দ ফেরেস

এদিকে আগামী জুলাইয়ে জি টোয়েন্টি সম্মেলনের আগেই ব্রাজিলে দ্বিপাক্ষিক সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে খেলা, নিরাপত্তা, কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত। এছাড়া রাজধানী ঢাকাতে ব্রাজিলের ভিসা সেন্টার চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, ঢাকায় ব্রাজিলের ভিসা সেন্টার খোলার ব্যাপারে কাজ চলছে। আগামী ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে দৃশ্যমান হতে পারে ভিসা সেন্টার।

ফেরেস বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে বাণিজ্যের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জুনে ব্রাজিল সফরের কথা রয়েছে। যদি সেটা হয় তাহলে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফরে যে চুক্তিগুলো সম্ভব হয়নি তা হয়ত স্বাক্ষর হতে পারে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকেও গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন রাষ্ট্রদূত। বলেন, বিশ্বে অনেক সমস্যা থাকলেও রোহিঙ্গা সমস্যাকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবেনা। আন্তর্জাতিক আইন মেনেই চলবে ব্রাজিল। ফলে আইপিএস কিংবা বিআরআই নিয়ে আপাতত ব্রাজিলের কোনো ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি।

আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম

অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সিনেমায় আবারও অভিনয় করতে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাওলি দাম। প্রখ্যাত নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খানের চতুর্থ সিনেমা ‌‘নীল জোছনা’য় দেখা যাবে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে।

সিনেমাটি নির্মিত হচ্ছে মোশতাক আহমেদের প্যারাসাইকোলজি বিষয়ক উপন্যাস ‘নীল জোছনার জীবন’ অবলম্বনে। আর এর প্রধান নারী চরিত্র লায়লার ভূমিকায় পাওয়া যাবে ওপার বাংলার এই অভিনেত্রীকে।

অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

বুধবার (২৪ এপ্রিল) কলকাতার ডিকালগ ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে পাওলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেন নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান। তবে সিনেমায় তার বিপরীতে কে থাকছেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নির্মাতা জানিয়েছেন, পাওলির বিপরীতে দেশের একজন অভিনয়শিল্পীকে দেখা যাবে। যা খুব শিগগির চুড়ান্ত করা হবে।

এদিকে, বাংলাদেশের সিনেমায় আবার অভিনয় করার প্রসঙ্গে পাওলি বলেন, ‘গত বছর নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খান আমার সঙ্গে এই সিনেমা নিয়ে যোগাযোগ করেন। প্রথমে তার কাছে থেকে গল্পটি শুনেছি, যেহেতু তখনও মোশতাক আহমেদের সেই বইটি আমার পড়া ছিল না, এরপর যখন বইটি পড়লাম, তখন দারুণ লাগল। বলা যায়, এই সিনেমার সঙ্গে সেদিন থেকেই জড়িয়ে আছি। যার আনুষ্ঠানিকতা গতকাল হয়েছে।’

এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে কী প্যারালাল ইউনিভার্স নিয়ে বাংলায় কাজ হয়নি বললেই চলে। হলিউডে কিছু কাজ হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের “ইন্টারেস্টলার”, “ইনসেপশন”র উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।’

নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান বলেন, ‘এই সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম প্রায় ৬ বছর আগে। সেই ২০১৮ সালের শেষের দিকে। প্যারাসাইকোলজি নিয়ে আমার ধারণা এর আগে বাংলাদেশে কোনো কাজ হয়নি। আর সে কারণেই আমি মোশতাক আহমেদের উপন্যাসটি পড়ি, তখনই চিন্তা করি সিনেমা বানানোর। এরপর ২০১৯ সালে করোনা এবং আমার “জেকে ১৯৭১” সিনেমার কারণে কাজটি বন্ধ ছিল। এরপর আবারও গত বছরের শুরু থেকে কাজটি শুরু করি।’

পাওলি দাম প্রসঙ্গে এই নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের গল্পের অন্যতম নারী চরিত্র লায়লা, যা পাওলি দামের সঙ্গে অনেক বেশি যায়, যার কারণে আমরা তাকে এই চরিত্রের জন্য প্রথমে নির্বাচিত করি। এরপর পাওলির সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তাকে চিত্রনাট্য পাঠানো হলে তিনিও আমাদের সিনেমায় অভিনয়ের জন্য রাজি হন। আশা করছি, আমরা পাওলিকে নিয়ে কাজটি খুব ভালোভাবে শেষ করতে পারব।’

নির্মাতা ফাখরুল আরেফীন খান এবং অভিনেত্রী পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত

নির্মাতা জানান, সরকারী অনুদানের সিনেমা ‘নীল জোছনা’র দৃশ্যধারণ শুরু হবে আগামী মাসের শেষদিকে।

উল্লেখ্য, হাসিবুর রহমান কল্লোলের ‘সত্তা’ সিনেমার মধ্যদিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন কলকাতার অভিনেত্রী পাওলি দাম। এতে তার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১৭ সালে।

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২

নিহত কৃষকলীগ নেতা মো. শামীম পারভেজ। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ফুলপুর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কৃষক লীগ নেতাসহ দুইজন নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে নজরুল ইসলাম দীপক নামে আরও একজন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের পৃথক পৃথক স্থানে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ত্রিশাল পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আজহারুল ইসলামের বড় ছেলে শামীম পারভেজ (৩০) ও ফুলপুর উপজেলার ইমাদপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহীম শেখের ছেলে সুরুজ আলী (৭০)। শামীম পারভেজ উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, নিজের ফিসারির মাছ বিক্রি করে প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহ থেকে ত্রিশালের নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন কৃষকলীগ নেতা শামীম ও নজরুল ইসলাম দীপক। এসময় তাদের বহনকারী প্রাইভেটকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার নুরুর দোকান এলাকায় আসতেই হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে পড়ে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা লাগে। এতে প্রাইভেটকারটিতে আগুন ধরে গেলে যুবলীগ নেতা শামীম পারভেজ (৩০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় তার সঙ্গে থাকা মো. নজরুল ইসলাম দীপক আহত হন।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অপরদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুরে ফজরের নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়ে ট্রাকচাপায় সুরুজ আলী (৭০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। নিহত সুরুজ আলী উপজেলার ইমাদপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম শেখের ছেলে।

ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, নিহত সুরুজ আলী ফজরের নামাজ পড়তে বের হয়ে সড়কে এলে ময়মনসিংহ-শেরপুর মহাসড়কের ইমাদপুর এলাকায় ময়মনসিংহ থেকে আসা একটি বেপরোয়া গতির ট্রাক হঠাৎ তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ সংবাদ

অনুমতি মিললে ঈদের আগেই গরু আমদানি সম্ভব: ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত
আবারও ঢাকাই সিনেমায় কলকাতার পাওলি দাম
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় সাবেক কৃষকলীগ নেতাসহ নিহত ২
গোবিন্দগঞ্জে বৃষ্টির জন্য ইস্তিসকার নামাজ আদায়
বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নগদ অর্থের তথ্য চেয়ে চিঠি দুদকের
ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নেবে ২৩৮ জন
জয়কে আজীবন বয়কট, ২ জনকে সাময়িক বহিষ্কার
বৃষ্টির আশায় নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় ইসতিসকার নামাজ আদায়
নওগাঁয় ঔষধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
টাঙ্গাইলে পঁচা মাংস বিক্রি, ব্যবসায়ীকে জরিমানা
‘উপজেলা ভোটে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে’
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের নতুন ৩ বিচারপতি
তীব্র গরমে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস
মনোনয়ন প্রত্যাহার না করা মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের সময়মত ব্যবস্থা
মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি
বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প আসছে বাংলাদেশের পর্দায়
শরীয়তপুরে দুপক্ষের সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ৫
মুক্তি পেল ইমতু রাতিশ ও অলংকার এর 'বরিশাইল্লা সং'