শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক

“জুনাইদ সাহেব একটু এদিকে আসবেন।“ মজিদ ভাট জুনাইদ মোল্লাকে পাশের ঘুপসি ঘরটার আড়ালে ডাকলেন। জুনাইদ মোল্লা পেছন পেছন থপথপ করে ঢুকলেন। দুজনের মধ্যে ফিসফিস করে কী সব গোপন আলোচনা চলল। নবী আর আতিফ ছোট্ট কুঠুরি জানালার আড়াল দিয়ে দেখল, লেফটেন্যান্ট মজিদ ভাট কী সব বলছেন আর জুনাইদ মোল্লা শুধু মাথা নাড়িয়েই যাচ্ছেন! আতিফের মনটা ভয়ে নাড়া দিয়ে উঠল, আইএসআই’এর অফিসারটা কি আমার মনের কথা বুঝে নিয়েছেন! বিশ্বাস নেই, ঝানু গোয়েন্দা।

গোয়েন্দার পাঠ তো কম পড়া নেই! মুখের কথার ঢং দেখেই পেটের কথা আন্দাজ করতে পারেন। যাকে বলে নাড়ি টিপা ডাক্তার। যদি সেরকম কিছু আন্দাজ করেই ফেলেন, তাহলে তো তার নয়াপাড়া যাওয়া বন্ধ। ঘেরাবন্দি থাকতে হবে। ঘরের চৌকাঠও পার হওয়া যাবে না। সেরকম মনে করলে, কালকের মধ্যেই এখান থেকে অন্য জায়াগায় উড়িয়ে নিয়ে যাবেন। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দুদিন বিছানায় ফেলে রাখবেন। বেশি বাড়াবাড়ি করলে, এই ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতেই সবার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেবেন। তখন না বাঁচবে বাপ না বাঁচবে ছেলে। সব গল্পের ওখানেই ইন্তেকাল হয়ে যাবে।

মিনিট পাঁচেক পর দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। আতিফ প্রথমে জুনাইদের চোখের দিকে তাকাল, বোঝার চেষ্টা করল তার চোখের ভাষা। আতিফ লক্ষ্য করল, জুনাইদ অন্য দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে কি না। নাহ, সেরকম কিছু বুঝতে পারা গেল না। আতিফ নিশ্চিত ছিল, যদি তাকে নিয়েই আলোচনা হয়, তাহলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই জুনাইদ তার দিকে একটু অন্য ভঙ্গিতে তাকাবেন। কিন্তু সেসবের কোনো লক্ষণ না দেখা যাওয়াই আতিফ নিশ্চিন্ত হলো, তাকে নিয়ে আলোচনা হয়নি। আলোচনার টপিক ছিল হয়ত অন্য কিছু। ফুরফুরে মেজাজে মেজর জেনারেল জুনাইদ নবীকে জিজ্ঞেস করলেন, “নবী তুমি তাহলে কাল ভোরেই রওনা দিচ্ছ।“ নবী মাথা নড়িয়ে বলল, “জি হুজুর।“

“তোমরা সফল হবেই, ইনশাল্লাহ।“ বুকের ছাতিটা কয়েক ইঞ্চি অতিরিক্ত ফুলে উঠল জুনাইদের। তারপর নবীর পিঠে হাত রেখে বললেন, “একটা কাফের মারলে লক্ষ্য নেকি পাওয়া যায়। আর তোমরা কাফেরদের ঘাটি উড়াতে যাচ্ছ। আল্লাহর জান্নাতের দরজা তোমাদের জন্যে হাট করে খোলা রয়েছে। তোমাদের এ জন্ম স্বার্থক। তোমরা শহীদ হওয়ার পথে এগোচ্ছ। আল্লাহ আমাদের মোনাজাত নিশ্চয় কবুল করবেন। আমরা জিতবই।“ কথাগুলো জুনাইদের হৃদয় নিংড়ে বের হয়ে এল। গর্বে ফুলে উঠছে তার বুক। আসলে তারা সবাই যে একই খিদমতের কাজে সামিল। স্বেচ্ছায় গলায় পরে নিয়েছেন মৃত্যুর বরণডালা। মেজর জেনারেল জুনাইদ মোল্লা যৌবনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর রোহিঙ্গা সেনা ছিলেন। টানা দশ বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন। তারপর দেশে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হলে, রাগে ক্ষোভে চাকরি ছেড়ে ‘রোহিঙ্গা জেহাদি ফৌজ’এ নাম লেখান। নিজেকে একটু একটু করে মুজাহিদ তৈরি করেন। এদিকে আসাতে তার একটা দগদগে ‘ঘা’ও তাকে ঠেলা দিয়েছিল। তার সদ্য বিবাহিতা টগবগে বৌ’কে মিয়ানমার সেনা ধর্ষণ করে খুন করেছিল। সে রাগ তিনি হজম করতে পারেননি। তার মনে গনগন করে জ্বলে উঠেছিল প্রতিহিংসার আগুন। সে আগুনই তাকে টেনে এনেছিল জেহাদি জীবনে। তিনি সরাসরি সেনাবাহিনী থেকে আসায়, আর জে এফ’এর কাজের অনেকটা সুবিধা হয়। আর জে এফ’এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে সরাসরি ট্রেনারের পদ দেন। তার প্রশিক্ষণে অল্পদিনের মধ্যেই একটা দুর্ধর্ষ মুজাহিদ টিম আক্রমণ হানার জন্যে তৈরি হয়ে যায়। তিনি মুজাহিদদের বারবার বলতেন, কঠোর পরিশ্রমের কোনো মাইর নেই। ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই সাফল্য আসবে। আর সঙ্গে থাকতে হবে আল্লাহ রসুলের ইবাদত। মনের এলেম। তিনি বার বার একটা কথা বলতেন, ‘হাঁটিতে পারে না কেউ না খেয়ে আছাড়, পানিতে না নেমে কেউ শেখে না সাঁতার’। তার প্রশিক্ষণের কলাকৌশলে মুগ্ধ হয়ে আর জে এফ তাকে ‘মেজর’ পদে উন্নিত করে। জুনাইদও আর জে এফ’এর জন্যে নিজেকে হান্ড্রেড পারসেন্ট নিংড়ে দেন।

“আতিফ, তুমি কিন্তু এই কটাদিন কোত্থাও বেরোবে না। চব্বিশ ঘণ্টা কন্ট্যাক্টে থাকবে।“ কণ্ঠস্বর একটু কড়া করে বললেন জুনাইদ। কথায় একটু তেঁতো তেঁতো ঝাঁঝ। আতিফ মাথা নাড়াল, “জি”। জুনাইদ নবীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা তো থাংখালীর চোরা বর্ডার দিয়েই যাবে। সেরকমই তো প্ল্যানিং হয়েছে। তিনজনের একটা মুজাহিদ বাহিনী ‘থানচি ট্রেনিং ক্যাম্প’ থেকে আসবে। তোমরা বিকেলের মধ্যেই থাংখালী পৌঁছে যাবে। ওখানে আমাদের কমিশন্ড অফিসার ব্রিগেডিয়ার সালিমুদ্দি থাকবেন। তিনিই পুরো ব্লুপ্রিন্টটা ছকেছেন। তিনিই পুরো মিশনটার পরিচালনায় থাকবেন।“
“জি।“ আবারও মাথা হেলাল নবী। জুনাইদ বলতে থাকলেন, “মনে রেখ, একটা আঘাত মানে শত্রুর একটা হাড় ভেঙে দেওয়া। তার রাতের ঘুম হারাম করে দেওয়া। ঘাড়ের কাছে মৃত্যুর নিশ্বাস ফেলা। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক, একটা বালুখালী উড়িয়ে দিয়েই হয়ত মায়ানমার সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া যাবে না। কিন্তু একথাও ঠিক, এই একটা আক্রমণে ওদের মনে যে ভয় ঢুকবে তাতেই আগামীতে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে। কথায় বলে, শরীরের আঘাতের চেয়ে মনের আঘাত মারাত্মক।“

“শয়তানদের হৃদয় বলে কি কিছু আছে? মানুষ-খোলের ভেতরে সব ইট-কাঠ-পাথরের কলকব্জা এঁটে আছে। নাড়িভুঁড়ি সব পাষাণ। মুখের দাঁত হৃদয়ের দাঁত হয়ে গেছে। সে দাঁতে পুরা আছে গোখরোর বিষ। নেকড়ের থাবা। ওদেরকে কুচি কুচি করে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিলেও আমার শান্তি হবে না। আমাকে আগুন বানিয়ে দিতে পারেন? আগুন, যে আগুন কখনো নিভবে না। তারপর আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবেন, মায়ানমার সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে, পুড়ে ছাড়খাড় করে দেব সব। যতক্ষণ না সব পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ আমি নিভব না।“
“তোমার ভেতরে তো সে আগুন জ্বলছেই নবী, মুজাহিদের আগুন, এ আগুন তো কখনো নেভে না। আমি তো আঁচ পাচ্ছি, তোমার মধ্যে এ আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। তার লেলিহান শিখা জিভ লকলকাচ্ছে। শুধু কাফেরগুলোকে কাছে পাওয়ার অপেক্ষা। তারা কাছে এলেই চৈত্রের শুকনো খটখটে খড়কুটোর মতো পটপট করে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।“ জুনাইদ নবীকে উতপ্ত হতে দেখে আরও খানিকটা তাতিয়ে দিলেন। তাদের জেহাদি সেনার ভাষায়, যেকোনো অ্যাটাকে যাওয়ার আগে, মনমেজাজ এরকম গনগনে হলে, ভালো সিগন্যাল। ভেরি গুড অ্যাচিভ। শত্রুর বিরুদ্ধে মেজাজটাকে ঘেঁটে দিয়ে আরও একটু খচিয়ে দেওয়াই নিয়ম। এক্ষেত্রে বুদ্ধি যেমন লাগে, ঠিক তেমনি রাগ ও হিংসাও লাগে তার ঢের। এ তো আর শুধু নিজের গা বাঁচানো লড়াই নয়, এ হলো, নিজের মৃত্যুর সঙ্গে হাজার শত্রুর মৃত্যু ছিনিয়ে নেওয়া। নিজেকে আজরাইলের কাছে সঁপে দিয়ে হাজার আজরাইলকে শত্রুর শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া। এখানে জীবনের বদলে মৃত্যু, তারপরে মৃত্যুর বদলে আবারও জীবন। নতুন জীবন, নতুন দেশ, নতুন দেশের স্বাধীন স্বাদ। আর সে জীবনের স্বাদ পেতে গেলে, মৃত্যুকে বরণ করে নিতেই হবে। মৃত্যু আর রক্ত ছাড়া যে পৃথিবীতে কখনো স্বাধীনতা আসেনি। আসেও না। কেউই বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি মাটি ছাড়তে চান না। এ যে অনিবার্য অর্ঘ। নিশ্চিত বলিদান। একজনের মৃত্যুদানের বিনিময়েই যে অন্যজনের সুখ। আর সে সুখের জন্যে কাউকে না কাউকে যে শহীদ হতে হবেই। উৎসর্গ করতে হবে, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-কুটুমে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা সাধের মানবজীবন। ইহকালের সুখ-আহ্লাদ। আনন্দ-ফুর্তি। ঠাট্টা-মশকরা। কাফনের সাদা থানের মতো দাফন হয়ে যাবে সব হিসেব, সব লেনদেন। শুধু ধ্রুব তারার মতো টিমটিম করে বেঁচে থাকবে আল্লাহ-রসুলের দ্বিনের জন্যে আত্মত্যাগ। সে ত্যাগের কথা গল্প-কাহিনি হয়ে মানুষের মুখে মুখে না রটুক, মানুষ তার নিজের মাথা গোঁজার ঠাই পেলেই হলো। ব্যস, এতেই শান্তি, এতেই জান্নাতবাস। একটা মানুষ একটা দেশ পাবে, এর চেয়ে বড় বর আর কী হতে পারে! একটা ঘর, ঘরের ভেতরে খাট, মাথার ওপরে চালা, চালার ডগায় পাখি বসার পায়া, একটা উঠোন, উঠোনে রজনীগন্ধা ফুল, একটা হেঁশেল, হেঁশেলে সেদ্ধ ভাতের হাঁড়ি, এক বিঘে ভুঁই, ভুঁইয়ে লকলক করা ধানের শীষ তারপর দাওয়ায় শীতলপাটি বিছিয়ে গোটা পরিবার একসাথে থালা পেড়ে বসে মায়ের বেড়ে দেওয়া ভাত খেয়ে নিশ্চিত রাতের ঘুম, অন্ধকারের ঘোমটা সরিয়ে তালগাছের মাথা দিয়ে ঝিরঝির করে নেমে আসা চাঁদের হলুদ বাঁটা মিষ্টি আলো। উঠোন ঘর বারান্দার সে নিঝুম জ্যোৎস্না মেখে খিলখিল করে সারা রাত হাসা, এইই তো দেশ। একেবারে নিজের দেশ। এই টুকুর জন্যেই তো নিজের সুখ আহ্লাদ হারাম করে এক স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়ে যেতে হবে।

“হুজুর, কায়রাপরীর টংকীর ব্যাপারটা একটু দেখুন, চীনের সঙ্গে তো আপনাদের দহরম মহরম ভালো।“ মজিদ ভাটকে সাহস করে কথাটা বলল আতিফ।
“ওটা চীনের পলিটিক্যাল লাইন। ওরা এ লাইন থেকে কোনোভাবেই পিছপা হবে না। চতুর চীন জানে যে, মায়ানমার তাদের কর্তৃত্বে থাকলে, ভারতকে জব্দ করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। চিন কায়রাপরীর টংকীতে সামরিক ঘাটি বানাবে। যাতে করে উত্তর-পূর্ব ভারত তাদের নিশানায় থাকে।“ মজিদ ভাট চীনাদের গোপন চক্রান্তের অন্দরের কথা বললেন। যেন হাঁড়ি চেছে সর খাওয়ালেন। ‘খক’ করে একটা শুকনো কাশি কেশে, আতিফের দিকে তাকিয়ে নবী চোখ টিপল। কিন্তু ওদিকে না তাকিয়ে আতিফ বলল, “আমার কিন্তু মনে হয়, চীনের আসল মকশদ, মায়ানমারকে তিব্বতের মতো দখল করে নেওয়া। তাদের উদ্দেশ্য গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে একটা বৃহৎ ‘বৌদ্ধ এস্টেট’ বানানো।“
“এ প্রসঙ্গ এখন আলোচনা না করাই ভালো, তাতে ঘাস মারতে গিয়ে গম মারা পড়ে যাবে।“ কিছু একটা ইঙ্গিত করে ফিসফিস করে বললেন জুনাইদ মোল্লা।
“চীন কিন্তু বিচক্ষণ চালাক। তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে অর্থনীতি আগে। তারা এসব ছোট ছোট দেশগুলোকে নিজেদের কব্জায় এনে, বাণিজ্যের বহর বাড়াতে চায়। তাদের কিন্তু আসল টার্গেট, বিশ্বের প্রথম অর্থনীতির দেশ গড়ে ওঠা।“ বললেন মজিদ ভাট। ফট করে আতিফ সুর টেনে বলল, “আর এ কাজটা তারা প্রথমে ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়েই করে। কেননা, মানুষ তো ধর্মের কাছে দুর্বল।“ লেফটেন্যান্ট মজিদ ভাট চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন, “যেখানে যেমন সেখানে তেমন, যেখানে ধর্ম সেখানে ধর্ম, যেখানে সংস্কৃতি সেখানে সংস্কৃতি, আর যেখানে বল প্রয়োগের প্রয়োজন সেখানে বলপ্রয়োগ। চীনাদের মতিগতি বোঝা খুবই মুশকিল। তারা রহস্যময় জাতি। আর সেজন্যেই তো কথায় বলে, চীনাদের মনেও একটা করে ‘চীনের প্রাচীর’ গাঁথা আছে। আমাদের পাকিস্তানের কিছুই করার নেই। চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখতেই হবে। কারণ, ভারতকে টাইট করে রাখতে হলে, আমাদের চীনের সাহায্য প্রয়োজন। সুতরাং কোনোভাবেই আমরা চীনকে রাগাতে যাব না। সে চীন মায়ানমারে সামরিক ঘাঁটি বানাক আর না বানাক।“ কথাটা বলতে বলতে দরজার দিকে পা বাড়ালেন লেফটেন্যান্ট মজিদ ভাট। চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “বেশ, আমরা এখন আসছি। তোমরা নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করে নাও। ইবাদতে মনপ্রাণ ঢেলে দাও। জান্নাতবাসী হও। খোদাহাফেজ।“ পায়ের জুতার খটখট শব্দ চৌকাঠ পেরিয়ে গেল।
জানালার করিডর দিয়ে তখনো ভেসে আসছে পাহাড়ি পাখি লং টেইল ব্রডবিল’এর কিচিরমিচির। স্থানীয় ভাষায় যার নাম লেঞ্জা মোটাথুটি। তার সুরেলা সুর সকালের মিষ্টি রোদ মেখে ফিনফিনে হাওয়াকে মাতাল করে দিচ্ছে। সকালের হাওয়াও যেন মোহিনী বাঁশি হয়ে উঠছে। আতিফ দোতলার বাইরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চোখ ধেড়িয়ে দেখছে, জুনাইদ মোল্লা আর মজিদ ভাট কাঠের সিঁড়ি দিয়ে খটখট করে নেমে যাচ্ছেন। তাদের পায়ের পাদানির ওপর দিয়ে নেমে যাচ্ছে তার মন থেকে চিড়বিড় করে বের হওয়া ক্ষেদ। মজিদ ভাটের শেষ কথাটায় আতিফের ভেতরটা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছে, বলেন কি না জান্নাতবাসী হও, আরে জ্বলজ্যান্ত তরতাজা টগবগে তরুণকে মৃত্যুর ভাগাড়ে ফেলে দিয়ে ইবাদতগিরি দেখাচ্ছেন! আমরা মানুষ না কুরবানির ছাগল গরু? সে দিকে কোনো মায়াদয়া নেই! এ কথাটা তো বলতে পারতেন, যাও, যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসো। তা না আগেই ভেবে নিলেন, আমরা যেন ইচ্ছে করেই মরতে যাচ্ছি! যেন আমাদের কবর কাটাই আছে, শুধু লাশের খাটিয়াটা গেলেই হলো! আমাদের বাঁচার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই! আমরা যেন মালেকুল মওত’কে কাঁধে করেই বয়ে নিয়ে যাচ্ছি! সেই জান কবজের ফেরেশতা আজরাইলকে নখ বাড়িয়ে জান কবজের আগেই, আমরা যেন আমাদের নিজের জান শরীর থেকে নিংড়ে বের করে হাতে নিয়ে বলব, এই নিন, আপনাকে আর কষ্ট করে আমাদের জান কবজ করতে হবে না, আমরা নিজেরাই আমাদের জান শরীর থেকে বের করে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি। পৃথিবীর সব দেশের সব কালের হুকুম জারি করা লোকগুলো কি এরকমই কাঠখড়ে হোন! মানুষের জানের ওপর বিন্দুমাত্র দয়ামায়া তো নেইই, রক্ত-মাংসের শরীরটার প্রতিও নেই কণামাত্র করুণা!

চলবে...

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

 

আজকের সেহরির শেষ সময় (ঢাকা)

0

ঘণ্টা

0

মিনিট

0

সেকেন্ড

ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫

চক্রের পাঁচজন গ্রেপ্তার। ছবি: সংগৃহীত

দুবাইয়ে বসে ‘জেট রোবোটিক’ নামে একটি অ্যাপস ও নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদা অনুযায়ী রেমিট্যান্স পাঠানোর দায়িত্ব নিতেন কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। ২০২০ সাল থেকে তিনি দুবাইয়ে থাকেন। গত তিন থেকে সাড়ে তিন মাসে জেট রোবোটিক অ্যাপসের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার সমমূল্যের রেমিট্যান্স ব্লক করেছেন মামুন।

তবে তিনি ঠিকই চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে টাকা পাঠিয়েছেন। এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে চট্টগ্রামের মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন হাউজ তাসমিয়া অ্যাসোসিয়েটসকে। প্রতিষ্ঠানটির ৪৮টি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট সিমে আগে থেকেই সমপরিমাণ বা বেশি অনলাইনে টাকা সংগ্রহ করে রাখা হয়। এরপর সংগ্রহ করা টাকা এজেন্ট সিম থেকে অ্যাপের ব্যবহার করে প্রবাসীদের আত্মীয়দের নম্বরে অর্থ পাঠিয়ে দিয়ে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি চক্রটি বলে দাবি করেছে সিআইডি।

বুধবার (২৭ মার্চ) রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পৃথক অভিযান চালিয়ে এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে হুন্ডির কাজে ব্যবহৃত মুঠোফোন, সিমকার্ড ল্যাপটপ ও ২৮ লাখ ৫১ হাজার নগদ টাকা উদ্ধার করা হয় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডি বলছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধান করে এই চক্রের সন্ধান পায়। এই চক্রের কারণে রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল দেশ। অনেকের অবৈধ উপার্জনের টাকা এই চক্রের মাধ্যমে বৈধ হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে মালিবাগে নিজ কার্যালয়ে সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নাসির আহমেদ (৬২), ফজলে রাব্বি সুমন (৩২), মো. কামরুজ্জামান (৩৩), খায়রুল ইসলাম (৩৪) ও জহির উদ্দিন (৩৭)। তাদের মধ্যে নাসির ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের মালিক। ফজলে রাব্বি ও মো. কামরুজ্জামান ডিস্ট্রিবিউশন হাউজে কাজ করেন। আর পরের দুজন দুবাই থেকে শহিদুলের পাঠানো প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে দিতেন।

সিআইডির প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এই চক্র দুই ভাগে হুন্ডির কাজ পরিচালনা করে। দুবাইয়ে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। আর দেশে থাকা চক্রের সদস্যরা ওই প্রবাসীর দেশে থাকা আত্মীয়স্বজনদের এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এতে প্রবাসীদের মাধ্যমে যে রেমিট্যান্স আসত, সেটা ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের কালোটাকার মালিকেরা এই চক্রের মাধ্যমে তাদের অবৈধ উপার্জন বৈধ করছেন। আর এই পুরো কাজটি পরিচালিত হতো জেট রোবোটিকস অ্যাপের মাধ্যমে।

সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির প্রধান আরও বলেন, চক্রের সঙ্গে এমএফএস কোম্পানির চট্টগ্রামের তাসনিমা অ্যাসোসিয়েট নামের একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের লোকজন জড়িত। তাদের কাছ থেকে কম লেনদেন হয় এমন এমএফএস এজেন্ট অ্যাকাউন্ট সংগ্রহ করতেন চক্রের সদস্যরা। বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউশন হাউজের লোকজন হুন্ডির লাভের টাকার একটি ভাগ পেতেন।

সিআইডির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি মোহাম্মদ আলী মিয়া। ছবি: সংগৃহীত 

 

মোহাম্মদ আলী বলেন, এই চক্রের মূলহোতা শহিদুল ইসলাম ওরফে মামুন। তিনি ২০২০ সাল থেকে দুবাই বসবাস করেন। মালয়েশিয়ান একটি সফটওয়্যার কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপটি তৈরি করে দুবাই বসে শহিদুল হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই অ্যাপের সঙ্গে একটি এমএফএস কোম্পানির ৪১টি অ্যাকাউন্ট নম্বরের সংযোগ ছিল। গত তিন মাসে ওই ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের প্রায় ১৫০টি এজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে চক্রটি।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, একটি ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের অধীন প্রায় ১ হাজার ১০০ এজেন্ট থাকে। যেসব এজেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেন কম হয়, সেই সব অ্যাকাউন্ট হুন্ডির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে এমএফএস কোম্পানির নজরদারির ঘাটতি রয়েছে।

নতুন নতুন অ্যাপসের মাধ্যমে কৌশলে এ ধরনের ডিজিটাল হুন্ডি কার্যক্রম চলতে পারে উল্লেখ করে সিআইডি প্রধান বলেন, এ ধরনের কার্যক্রমরোধে সিআইডিসহ সব দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানকে ইন্টেলিজেন্স, মনিটরিং আরও বাড়াতে হবে।

তিন মাস ধরে অস্বাভাবিক লেনদেন, রেমিট্যান্স ব্লক হলো অথচ বাংলাদেশ ব্যাংক টের পেল না? তাদের তো একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল আছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতা কি-না জানতে চাইলে সিআইডিপ্রধান বলেন, ব্যর্থতা বলবো না, সার্ভিলেন্স সিস্টেমকে কতটা পেট্রলিং করছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের পেট্রলিংয়ে এটা ধরতে পেরেছি। এর দায়িত্ব শুধু সিআইডি’র নয়, ডিবি, র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংকেরও।

হুন্ডি তো আগেও হতো, এটাকে ডিজিটাল হুন্ডি বলছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ সিস্টেম আসলেই ডিজিটাল হুন্ডি। আগে ফোন করে বলে দিতো অমুকের টাকা অমুককে দিয়ে দাও। এটা ম্যানুয়াল সিস্টেমে। কিন্তু এখন এসবের দরকার নেই। ফোন বা লোকাল এজেন্ট অথবা ডিস্টিবিশন হাউজ দরকার পড়ে না। অ্যাপস যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দেবে সেভাবে নম্বরে নম্বরে টাকা চলে যায়।

দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক

ছবি: সংগৃহীত

অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন, হাইজিন, বায়ু ও সীসা দূষণ বছরে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি অকালমৃত্যুর কারণ। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ঘরে ও বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণ, অনিরাপদ পানি, নিম্নমানের স্যানিটেশন ও হাইজিন এবং সিসা দূষণ বছরে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যুর কারণ। এর ফলে বছরে ৫.২ বিলিয়ন দিন অসুস্থতায় অতিবাহিত হয়। এসব পরিবেশগত কারণে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপির ১৭.৬ শতাংশ সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ঘরের এবং বাইরের বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, যা ৫৫ শতাংশ অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী এবং যা ২০১৯ সালের জিডিপির ৮.৩২ শতাংশের সমপরিমাণ।

এতে আরও বলা হয়েছে, পরিবেশদূষণ শিশুদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। সিসা বিষক্রিয়া শিশুদের মস্তিকের বিকাশে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করছে। এর ফলে বছরে প্রাক্কলিত আইকিউ ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ মিলিয়ন পয়েন্ট। গৃহস্থালিতে কঠিন জ্বালানির মাধ্যমে রান্না বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস এবং তা নারী ও শিশুদের বেশি ক্ষতি করছে। শিল্পের বর্জ্য এবং অনিয়ন্ত্রিত প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা অপরিশোধিত ময়লাযুক্ত পানির কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানির গুণগত মানের মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সময়মতো এবং জরুরি হস্তক্ষেপ, উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) এবং সিসা দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রতি বছর ১ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকাতে পারে। সবুজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ, রান্নায় সবুজ জ্বালানি ব্যবহার এবং শিল্প-কারখানা থেকে দূষণ রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ বায়ুদূষণ কমাতে পারে।

এছাড়া পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার জন্য সুশাসন জোরদার ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে এই রিপোর্টে পরিবেশগত অগ্রাধিকারসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে, বিভিন্ন পদক্ষেপের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা হয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার নির্ধারণ, পরিবেশ নীতি পদ্ধতিগুলোর বৈচিত্র্যকরণ ও জোরদারকরণ, সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা জোরদারকরণ এবং সবুজ অর্থায়নের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ এর পরিবেশকে রক্ষা করতে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশের জন্য পরিবেশের ঝুঁকি মোকাবিলা একই সঙ্গে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার। আমরা পৃথিবীর নানা দেশে দেখেছি যে, পরিবেশের ক্ষতি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলে তা টেকসই হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির গতিপথ টেকসই রাখতে এবং শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নতি করতে বাংলাদেশ কোনোভাবেই পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারবে না। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে পরিবেশের ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং এই রিপোর্টের সহ-প্রণেতা আনা লুইসা গোমেজ লিমা বলেন, সময়মতো এবং সঠিক নীতি ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণের ধারা পাল্টে ফেলতে পারে। পরিবেশ সুরক্ষা জোরদারে পদক্ষেপ এবং রান্নায় সবুজ জ্বালানির জন্য বিনিয়োগ ও অন্যান্য প্রণোদনা, সবুজ অর্থায়ন বাড়ানো, কার্যকর কার্বন মার্কেট প্রতিষ্ঠা এবং সচেতনতা বাড়ানো দূষণ কমাতে পারে এবং এর ফলে সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জন হতে পারে।

বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ

নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত

যোহরের নামাজ চলাকালীন বরিশালে জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদে এসি বিস্ফোরণ হয়েছে। বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম সড়ক চকবাজার এলাকার জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদের দ্বিতীয় তলায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে দ্রুত আগুন আনে তারা। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মুসল্লিদের দাবি, এসি বিস্ফোরণ মধ্য দিয়ে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের কথা নিশ্চিত না করলেও এসি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা জানিয়েছেন, বেলা দেড়টার দিকে মুসলিরা জোহরের নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর তখন মসজিদের দোতলার একটি এসি চালুর জন্য মুয়াজ্জিন বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করতেই স্পার্ক করে। পরে তিনি সেটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেন। এরপর সবাই নামাজে দাঁড়ালে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট শব্দ হয়। পরে পাশের ইমামের কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হলে দেখা যায় সেখানে এসির কাছাকাছি আগুন জ্বলছে। তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিস ও থানায় বিষয়টি জানানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, হতাহতের ঘটনা ছাড়াই স্থানীয়দের সহযোগিতায় মুসলিরা নিরাপদে মসজিদ থেকে নামিয়ে আনা হয় এবং বরিশাল সদর ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট অল্প সময়ের চেষ্টায় আগুন নেভানো হয়। আগুনে ইমাম সাহেবের রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে কিছু বই ও আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে গেছে।

এদিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বরিশাল সদর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানান, মুসল্লিদের তথ্যানুযায়ী একটি এসি থেকে বিকট শব্দ হওয়ার পরপরই আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তবে এসি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস পাশে থাকায় ব্যস্ততম এই ব্যবসায়িক এলাকাটিতে বড় ধরনের বিপদ ঘটেনি, অল্পতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে।

রাস্তা সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে কিছুটা বেগ পেতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, চকবাজারের সব রাস্তাগুলো সব সময় চালু রাখা উচিত, কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেগুলো অপসারণের জন্য আমরা মসজিদ ও ব্যবসায়িক কমিটিকে অনুরোধ জানিয়েছি।

স্থানীয়রা বলছেন, চকবাজারের রাস্তা সরু হওয়ায় এখানে সব সময় যানজট লেগে থাকে, আর যেটুকু জায়গা খালি থাকে তা পার্কিং নয়তো হকরদের দখলে থাকে। এমনকি গোটা চকবাজারের ফুটপাতও দখলে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের পসরায়।

সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) নাফিছুর রহমান জানান, ফায়ার সার্ভিস তাৎক্ষণিক সারা দেওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, এমনকি নামাজের সময় হওয়ায় মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে থাকলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকা পাচার, গ্রেপ্তার ৫
দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু: বিশ্বব্যাংক
বরিশালে নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
নওগাঁয় পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
গুলি করে মারা হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেই সাপটিকে
দুঃসময় অতিক্রম করছি, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: মির্জা ফখরুল
মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষক কারাগারে
বাংলাদেশ থেকে আম-কাঁঠাল-আলু নিতে চায় চীন
ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় চার ইউনিটে প্রথম হলেন যারা
বাংলাদেশে আসছেন সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম
চট্টগ্রামে ফিশিং বোটে আগুন, দগ্ধ ৪
ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ৪ ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৮৯ শতাংশই ফেল
ভারত থেকে ১ হাজার ৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে শুক্রবার!
৮ বছর পর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা
‘নির্বাচনে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলব, এটুক অন্যায় করবোই’
প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে শরফুদ্দৌলা
পাঁচ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ভারতীয় নাগরিককে হস্তান্তর
কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা ওয়াংচুক
শিগগিরই ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়ানো হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ