
সারাদেশ
মৌলভীবাজার সীমান্তে এক মাসে ৩৩৭ জনকে পুশইন, রোহিঙ্গারাও রয়েছে তালিকায়

ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা আবারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে গত এক মাসে অন্তত ৩৩৭ জনকে অবৈধভাবে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতির উত্তেজনার মধ্যেই বিএসএফ এই পুশইন কার্যক্রম চালায়।
পুশইনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছে জেলার বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে। বিশেষ করে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ও পাল্লথল সীমান্তপথে অনুপ্রবেশের সংখ্যা ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া জুড়ী উপজেলার রাজকি, কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া এবং কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই, বাগীছড়া ও চাম্পাছড়া সীমান্ত দিয়েও অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ৭ মে থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে পুশইনের শিকার হয়ে মোট ৩৩৭ জন বাংলাদেশি সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে প্রবেশ করে বিজিবির হাতে আটক হন। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলা সীমান্ত দিয়ে আটক হন ২৫১ জন, জুড়ী উপজেলায় ১০ জন, কুলাউড়ায় ২১ জন এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় ৫৫ জন। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, আরও কয়েক শতাধিক ব্যক্তি সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও তারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে নারী, পুরুষ ও শিশুরা। তাদের অনেকের বাড়ি বাংলাদেশের নড়াইল, চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের আসামে বসবাস করছিলেন।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শীব নারায়ণ শীল জানান, "আমরা যাদের আটক করেছি, তাদের কাছ থেকে জেনেছি—তারা বিগত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আসামে বসবাস করছিলেন। হঠাৎ করে ভারতীয় পুলিশ তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয় এবং হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার মানিকভাণ্ডারে নিয়ে গিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। পরে বিএসএফ সীমান্ত গেট খুলে ধলই সীমান্ত দিয়ে কয়েকজনকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়। বাকিদের কোথায় নেওয়া হয়েছে, তা তারা বলতে পারেননি।"
স্থানীয় সাংবাদিক এম এ হামিদ জানান, "সীমান্ত এলাকায় আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এক হাজারের বেশি মানুষ ভারত থেকে পুশইন হয়ে এসেছে। বিজিবি কয়েকশতকে আটক করতে পারলেও অধিকাংশই স্থানীয় দালালদের সহায়তায় অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য গাড়িতে করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেছে। এমনকি অনেকেই বাড়ি পৌঁছে বিকাশে ভাড়া পরিশোধ করেছে।"
তিনি আরও জানান, অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গাও রয়েছে, যারা স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় চট্টগ্রামের দিকে চলে গেছে।
পুশইন হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে ৫২-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান এবং ৪৬-বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া জানিয়েছেন, "আটককৃতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের স্থানীয় থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে।"
বিষয়টি নিয়ে এখনো কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না আসায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। পাশাপাশি এই অনুপ্রবেশের পেছনে স্থানীয় দালাল চক্রের সক্রিয়তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।