মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

জ্যাক এবং পিয়েরেকে শুধু স্কুলই ওইসব আনন্দ দিতে পারত। তাদের সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টা ছিল তারা বাড়ি থেকে দূরে আছে এই বোধটা। বাড়িতে অভাব আর অজ্ঞতা জীবন আরো বেশি কঠিন এবং বিষণ্ন করে তুলত। জীবন চারপাশ থেকে আটকাবস্থায় পতিত মনে হতো। দারিদ্র একপাশ থেকে টেনে তোলা যায় এমন একটা সেতুহীন আবদ্ধ দুর্গ।

তবে সবটাই এরকম ছিল তা নয়; জ্যাক নিজেকে সবচেয়ে দুর্ভাগাদের অন্যতম মনে করত, বিশেষ করে অবকাশের সময় তার নানি যখন জ্যাক ছোকরার অক্লান্ত জ্বালাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তাকে জাক্কার পার্বত্যাঞ্চলের মিলিয়ানার একটা হলিডে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতেন। সেখানে থাকত আরো পঞ্চাশ জনের মতো বাচ্চার এক বিশাল সমাগম। বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা থাকতেন। সেখানে তারা ডরমিটরিঅলা একটা স্কুলে থাকত। ভালো খাওয়া দাওয়া, আরামের ঘুম, খেলাধুলা কিংবা ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। তাদের দেখাশোনার জন্য সুন্দর সেবিকারা ছিলেন। তবু এত কিছু সত্ত্বেও যখন সন্ধ্যা নেমে আসত, পর্বতের ঢালে ছায়াগুলো দ্রুত লম্বা হয়ে পড়ত, পর্বতে ঘেরা ছোট শহরটার বিশাল নৈঃশব্দের ভেতর পাশের কোনো এক সেনা ছাউনি থেকে ঘরে ফেরার তাগিদ জানিয়ে বিউগলের করুণ সুর বেজে উঠত, তখন ভ্রমণ করার মতো কোনো এলাকা থেকে শত কিলোমিটার দূরে বালক জ্যাক টের পেত তার ভেতরে পাখা বিস্তার করছে হতাশা। নীরবতার ভেতরেই মন হাহাকার করে উঠত তার সমস্ত ছেলেবেলার নিঃস্ব বাড়িটার জন্য।

না, স্কুল তাদের জন্য পারিবারিক জীবনের কষ্ট থেকে শুধু মুক্তির স্বাদই দিত না, বিশেষ করে এম বার্নার্ডের ক্লাস তাদের একটা মৌলিক ক্ষুধা মিটিয়েও থাকত। শিক্ষকের জন্য ক্ষুধাটা যতটা মৌলিক ছিল, ছাত্রদের জন্য ছিল তার চেয়ে আরো বেশি এবং সেটাই হলো কোনো কিছু আবিষ্কারের ক্ষুধা। তাদের অন্যান্য ক্লাসেও তারা অনেক কিছু শিখেছে। কিন্তু সেসব ক্লাসে তাদের অবস্থা ছিল যেন খাবার তৈরি করা হয়েছে, এবার গিলে রক্ষে করো। আর এম জারমেইনের ক্লাসে তারা প্রথম বুঝতে পারে, তাদের অস্তিত্ব আছে এবং তারাও উচ্চ তাৎপর্যের অধিকারী হতে পারে, জগৎ আবিষ্কারের যোগ্য হতে পারে। এমনকি তাদের শিক্ষক তাদেরকে যা পড়ানোর জন্য বেতন পেতেন শুধু সেগুলোর মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি সরলতার সঙ্গে তাদেরকে তার ব্যক্তিগত জীবনেও স্বাগত জানাতেন। তাদের সঙ্গেই তার ওই জীবনটা যাপন করতেন। তাদেরকে তার নিজের এবং তার দেখা শিশুদের বাল্যকাল সম্পর্কে বলতেন। তাদের সঙ্গে তার দর্শন ভাগাভাগি করে নিতেন।

তবে কখনওই নিজের মতামত তাদের ওপর চাপাতেন না। তার আরো অনেক সহকর্মীর মতো তিনিও যাজকীয় ব্যাপার স্যাপার পছন্দ করতেন না। তবে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষে কিছু বলতেন না। কারো বিশ্বাস কিংবা পছন্দের বিরুদ্ধেও কিছু বলতেন না। চৌর্যবৃত্তি, বিশ্বাসঘাতকতা, উগ্রতা এবং নোংরামির মতো যে সব বিষয়ে মোটেও কোনো যুক্তিতর্কের আবকাশ নেই সেসব অশুভ কাজ তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ঘৃণা করতেন।

তবে যে যুদ্ধ তখনও সাম্প্রতিক ঘটনা সেই যুদ্ধ সম্পর্কে তাদেরকে বেশি বলতেন। দীর্ঘ চার বছর তিনি যুদ্ধ করেছেন। সৈনিকদের দুর্ভোগ, সাহস, ধৈর্য এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনন্দের কথা বলতেন। প্রতি পর্বের শেষে তাদের ছুটিতে পাঠানোর আগে এবং মাঝে মধ্যে পাঠ্যপরিকল্পনার ভেতর থেকে সময় বের করতে পারলে তিনি দরগেলির লেস ক্রয়েক্স দে বয়েস থেকে অংশ বিশেষ তাদের পড়ে শোনাতেন। তার ওই পড়ার মাধ্যমে জ্যাকের কল্পনার সামনে চমৎকারিত্বের দরজা খুলে যেত।

তবে মনে আছে, সেবার চমৎকারিত্বের জগতে যেন ভয় এবং দুর্ভাগ্য মিশে গিয়েছিল। অবশ্য তার অদেখা বাবাকে সে শুধু একটা তাত্ত্বিক সম্পর্কের মধ্যে এনেছে। তার শিক্ষক সমস্ত হৃদয় দিয়ে যে গল্পটা বলেছেন সেটা জ্যাক সমস্ত হৃদয় দিয়ে শুনেছে। সে গল্পের মধ্যেও এসেছে তুষার, তার কল্পনায় লালিত শীতকালের ছবি। তবে সেখানে সে দেখতে পেয়েছে কাদা জড়ানো ভারী পোশাক পরিহিত বিশেষ ধরনের মানুষদের। তারা অচেনা ভাষায় কথা বলে। তাদের মাথার ওপরে ছাদ হিসেবে পায় গোলা, আগুনের হলকা, গুলির বৃষ্টি। পিয়েরে এবং জ্যাক ক্রমবর্ধমান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত প্রত্যেকবার পড়ার জন্য। সে যুদ্ধ নিয়ে প্রায় সবাই কথা বলত।

এমনকি ডানিয়েল যখন মার্নের যুদ্ধ সম্পর্কে কথা বলত তখনও জ্যাক খুব মনোযোগ দিয়ে শুনত: ডানিয়েল বলেছে তাদের, মানে জুয়াভদের প্রথমে সম্মুখ সমরে নেওয়া হয়েছিল, তারপর একটা গিরিখাতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাই ছিল সবার সামনে। তারা এগিয়ে যাচ্ছিল এবং হঠাৎ দেখতে পেল, তাদের সহযোদ্ধারা একজনের ওপর আরেকজন করে পড়ে যাচ্ছে। আর গিরিখাতের সমস্ত পাদদেশ রক্তে ভরে যাচ্ছে। অনেকের মুখ থেকে মা মা চিৎকার আর আর্তনাদ ভেসে আসছে। খুব ভয়ঙ্কর অবস্থা। ডানিয়েল কিভাবে বেঁচে এসেছিল সেটাই তার কাছে এক বড় বিস্ময়। সবাই বলত ওই যুদ্ধের স্মৃতি কখনও মুছে যাওয়ার নয়। যুদ্ধের স্মৃতি বালকদের জগতের সবকিছুর ওপর ছায়াপাত করত। অন্যান্য ক্লাসে যে সকল রূপকথার গল্প বলা হতো সেগুলোর চেয়ে বেশি টানত যুদ্ধের গল্পগুলো। তাদের মনের ভেতর যে সকল ধারণা থাকত সেগুলোর অবয়ব দান করত ওই গল্পগুলো। আর এম বার্নার্ড যদি পাঠ্যসূচির পরিবর্তন ঘটানোর জন্য ওই গল্পগুলো নিজের মাথার মধ্যে তুলে রাখতেন তাহলে তারা হতাশ হতো, ক্লান্ত বোধ করত।

তবে তিনি যুদ্ধের ভয়াবহ বর্ণনার কোনোটা আংশিক বদলে দিতেন মজার কিছুর মিশেল দিয়ে। তখন আফ্রিকার ওই শিশুরা অমুক তমুকের সঙ্গে এমনভাবে পরিচিত হয়ে যেত যেন তারাও শিশুদের নিজেদের জগতেরই বাসিন্দা। নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের সময় তাদেরকে এমনভাবে উল্লেখ করত যেন যুদ্ধের মানুষেরা তাদেরই পুরনো দিনের বন্ধু এবং তাদের সামনেই রয়েছে। জ্যাকের এক মুহূর্তের জন্যও মনে হতো না যে, তারা সবাই যুদ্ধের সময়ে বেঁচে ছিল, এখন নেই। তার বরং মনে হতো, তারা এখনও বেঁচে আছে; তারা যুদ্ধের শিকার হয়েছে সেটা তার কল্পনায় আসতে চাইত না। বছরের শেষ দিনে যখন তারা বইটার শেষে পৌঁছে যেত সেদিন এম বার্নার্ড খুব নিচু স্বরে দয়ের মৃত্যুর কথা পড়ে শোনাতেন। নিজের স্মৃতি আর আবেগের মুখোমুখি হয়ে তিনি চোখ তুলে নীরব এবং বিহ্বল ক্লাসের দিকে তাকিয়ে প্রথম সারিতে বসা জ্যাককে দেখতেন: তার সারা মুখমণ্ডল অশ্রুতে প্লাবিত। দমকে দমকে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার ফোঁপানি যেন আর কখনও থামবে না। কোনো রকমে শোনা যায় এমন নিচু স্বরে তিনি বলতেন, শান্ত হও, বাছা। তারপর ক্লাসের দিকে পেছন ফিরে তিনি বইটা বাক্সে রেখে দিতেন।

এম বার্নার্ড বললেন, এক মিনিট, বৎস। এবার তিনি কষ্ট করে উঠে দাঁড়ালেন। খাঁচার শিকগুলোর ওপরে আঙুল ছোঁয়ালেন এবং ক্যানারি পাখিটা আরো জোরে ডেকে উঠল। তিনি বলে উঠলেন, আহ কাসিমির, আমরা ক্ষুধার্ত। এরপর তিনি রুমের অন্য পাশে অগ্নিকুণ্ডের কাছে রাখা স্কুল বালকের ডেস্কের কাছে গেলেন। একটা ড্রয়ার খুলে হাতড়াতে লাগলেন। তারপর আরেকটা খুলে কিছু একটা বের করলেন। জ্যাককে উদ্দেশ করে বললেন, এই যে, এটা তোমার জন্য। জ্যাক দেখল একটা বই, মুদি দোকানের কাগজে বাঁধাই করা, ওপরে কিছু লেখা নেই। বইটা খোলার আগেই জ্যাক বুঝতে পারল বইটা হল লেস ক্রয়েক্স দে বয়েস; এই কপিটাই তিনি সেদিন ক্লাসে পড়েছিলেন।

জ্যাক বলতে চাইল, না, না। এটা....। কথাগুলো আর শেষ পর্যন্ত বলা হলো না।

এম বার্নার্ড তার প্রবীণ মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললেন, শেষের দিন তুমি কেঁদেছিলে। সেদিন থেকে বইটা তোমার হয়ে গেছে। তারপর তার হঠাৎ লাল হয়ে ওঠা চোখ আড়াল করার জন্য অন্যদিকে তাকালেন। ডেস্কের কাছে আবার এগিয়ে গিয়ে পেছন দিকে হাত আড়াল করে রেখে জ্যাকের দিকে ফিরলেন। একটা খাটো মোটা লাল রুলার ঝাঁকিয়ে হাসতে হাসতে জ্যাককে জিজ্ঞেস করলেন, এই ‘মিষ্টি লাঠি’টার কথা তোমার মনে আছে?

ও, হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনি এতদিনও এটা রেখে দিয়েছেন! জানেন তো, এখন এসব নিষিদ্ধ?

আরে রাখো তো। তখনও নিষিদ্ধ ছিল। তুমি নিজেই তো দেখেছ, আমি এই লাঠির ব্যবহার করেছি।

আসলেই জ্যাকের মনে আছে। এম বার্নার্ড শারীরিক শাস্তির পক্ষে ছিলেন। অবশ্য সচরাচর যে শাস্তি বেশি প্রচলিত ছিল সেটা হলো পরীক্ষায় অর্জিত নম্বর থেকে কিছুটা বাদ দিয়ে দেওয়া। তাতে ভুক্তভোগীর অবস্থান নিচে নেমে আসত। অপরাধের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে তিনি অপরাধীকে অধ্যক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিতেন।

এই কাজটা তার আরও অনেক সহকর্মীই করতেন। এছাড়াও তিনি আরেকটা প্রথা মেনে চলতেন; খুব শান্ত এবং হাসিখুশি স্বরেই বলতেন, আমার হতভাগা রবার্ট, আমাদের এখন ‘মিষ্টি লাঠি’র আশ্রয় নিতেই হচ্ছে। কেউ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাত না। শুধু গোপনে কেউ কেউ মুখ টিপে হাসতে চেষ্টা করত হয়তো। মানব স্বাভাবের ধরনই এরকম: একজনের শাস্তিতে অন্যরা আনন্দ পায়। যাকে ডাকা হতো সে ফ্যাকাশে মুখে উঠে দাঁড়াত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সে চেষ্টা করত ভয়ের ভাবটা লুকিয়ে রাখতে। ব্ল্যাক বোর্ডের কাছে যে টেবিলের পাশে এম বার্নার্ড দাঁড়িয়ে থাকতেন নিজের আসন ছেড়ে সেটার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে কেউ কেউ অশ্রু আড়াল করার চেষ্টা করত। নিছক একটা প্রথা পালনের মতো মনে হলেও এর মধ্যে যেন কষ্ট দিয়ে আনন্দ লাভের একটা ছোঁয়া থাকত। রবার্ট কিংবা যোসেফ যার যখন ডাক পড়ত সে নিজেই এগিয়ে গিয়ে মিষ্টি লাঠির স্বাদ নিত।

চলবে...

এসএ/

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন