মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান

গোথিক রীতিতে তৈরি সেন্ট চার্লসের গির্জার প্রার্থনাকালীন পোশাক রাখার ঘরে ঢুকে নানি একটা চেয়ারে বসে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যাকের হাত ধরে রইলেন। সামনে বসা স্থূল শরীরের পাদ্রীর বয়স ষাট বছরের মতো:  গোলাকার তুলতুলে মুখ, লম্বা নাক, রূপালি রঙের চুলের নিচে মোটা ঠোঁটে তার স্মিত হাসি। হাঁটু পর্যন্ত ছড়িয়ে রাখা আলখাল্লার ওপরে দুহাত একসঙ্গে জড়ো করে ধরা। নানি বললেন, এই ছেলেটার গির্জার ভোজসভায় যোগদানের শিক্ষা দরকার।

পাদ্রী বললেন, খুব ভালো কথা, ম্যাডাম। আমরা ওকে খুব ভালো খ্রিস্টান বানিয়ে দেব। ওর বয়স কত?

নয় বছর।
বেশ অল্প বয়সে ওকে ধর্মীয় শিক্ষাদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি খুব ভালো করেছেন। তিন বছর পরই সে বড় অনুষ্ঠানের জন্য ঠিক ঠিক তৈরি হয়ে যাবে।
নানি বললেন, না, ওকে বাইরে শিখতে হবে।
কিন্তু এখন থেকে এক মাস পরই তো অনুষ্ঠান। আর ওকে বেদীর কাছাকাছি যেতে হলে কমপক্ষে দুবছর ধর্মীয় শিক্ষালাভ করতে হবে।

নানি তাদের অবস্থার কথা খুলে বললেন। কিন্তু পাদ্রীকে বোঝানোই গেল না যে, একই সময়ে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য পড়া আর ধর্মীয় শিক্ষা লাভ জ্যাকের পক্ষে অসম্ভব। খুব ধৈর্য আর কোমলতা দিয়ে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা বললেন এবং উদাহরণ দিলেন। তবে নানি উঠে পড়ে বললেন, সেরকম হলে ওর দরকার নেই এই শিক্ষার। আয়রে জ্যাক।

জ্যাকের হাত ধরে তিনি বের হওয়ার পথ ধরলেন।
তবে পাদ্রী উঠে গিয়ে তাড়াতাড়ি তাদের কাছে পৌঁছে বললেন, একটু অপেক্ষা করুন, ম্যাডাম। একটু অপেক্ষা করুন।
তার কোমল আচরণের সঙ্গে নানি এবং জ্যাককে ফিরিয়ে নিয়ে এলেন। নানিকে আবার তার চেয়ারে বসালেন। এবার যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলেন।
কিন্তু নানি বুড়ো খচ্চরের মতো মাথা ঝাঁকাতে লাগলেন, বাইরে গিয়ে যদি ও শিখতে পারে তো হবে, না হলে বাদ।

অবশেষে পাদ্রী মহাশয় পরাজয় মানলেন: সিদ্ধান্ত হলো, জ্যাক এক মাস পরে গির্জার ভোজসভায় যোগ দিতে পারবে; তবে তার আগে তাকে দ্রুত গতিতে ধর্মীয় শিক্ষার একটা কোর্স শেষ করতে হবে। পাদ্রী রাজী হওয়ার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে তাদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এলেন। জ্যাকের কপোলে আদর করে দিয়ে তিনি বললেন, তোমাকে যা যা বলা হয় মন দিয়ে শুনবে, ঠিক আছে?

কথা বলার সময় তিনি জ্যাকের দিকে তাকালেন বিষন্ন দৃষ্টিতে।

এম বার্নার্ডের সঙ্গে তার অতিরিক্ত ক্লাসের সঙ্গে যোগ হলো বৃহষ্পতিবার এবং শনিবার বিকেলের ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসগুলো। গির্জার ভোজসভায় যোগদানের পরীক্ষা আর বৃত্তির পরীক্ষা ক্রমেই ঘনিয়ে আসতে লাগল। তার দিন কাটতে লাগল কাজের বোঝা ঠেলে ঠেলে। খেলাধুলার প্রসঙ্গ শিকেয় উঠল। এমনকি রবিবারের দিনও যখন সে খাতা রেখে একটু অবসরের কথা ভাবতে পারে তখন নানি বাড়ির কাজ আর ফাইফরমাস গছাতে লাগলেন তার ঘাড়ে। তিনি উল্লেখ করতে ছাড়লেন না তার পড়াশোনার জন্য পরিবার ভবিষ্যতেও ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী হয়েছে। কেননা পরে আরো অনেক বছর সে হয়তো বাড়ির জন্য কিছুই করবে না।

জ্যাক যুক্তি দেখাল, আমি তো ফেইল করতে পারি। পরীক্ষাটা খুব কঠিন। আসলে সে মনে মনে এরকমটিই চাইতে লাগল মাঝে মাঝে। কারণ পরিবারের লোকজন তার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছে সেকথাটা তাকে বার বার শোনানোর কারণে তার কচি মনে অহংবোধের জায়গাটাতে বার বার আঘাত লাগছিল।

নানি তার দিকে বিস্মিত হয়ে তাকালেন। তিনি কখনও সেরকম সম্ভাবনার কথা ভাবেননি। তারপর তিনি বৈপরীত্বের কথা না ভেবেই কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, ঠিক আছে; এগোতে থাক; পারলে ফেইল করেই আসিস। ধর্মীয় দীক্ষাদানের কাজ করতেন দ্বিতীয় পাদ্রী। দীর্ঘদেহী লোকটাকে কালো আলখাল্লায় আরো লম্বা মনে হতো। ভাঙা চোয়াল গর্তের মতো, নাক ঈগলের ঠোঁটের মতো লম্বা, আর বুড়ো পাদ্রী যেমন নরম কোমল স্বভাবের, ইনি ঠিক তার উল্টো: কাঠখোট্টা। তার পাঠদান ছিল মূলত আবৃত্তির মতো সুর করে শুধু উচ্চারণ করে যাওয়া। প্রাচীন ওই পদ্ধতিই নাকি দুষ্ট আর জেদী বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি। এটাই নাকি তাদের আত্মিক প্রশিক্ষণের মোক্ষম পদ্ধতি। বাচ্চারা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমেও দীক্ষালাভ করত, যেমন ঈশ্বর কে.... ইত্যাদি ইত্যাদি। কোমলমতি দীক্ষিতদের কাছে ওইসব কথার কোনো মূল্য ছিল না। জ্যাকের স্মৃতি শক্তি প্রখর হওয়াতে ওইসব কথার অর্থ না বুঝলেও নির্বিকারভাবে সে আবৃত্তি করে যেত। যখন অন্য কোনো ছেলে আবৃত্তি করত জ্যাক নিজের চিন্তাকে অন্য কোথাও চালিয়ে দিত, দিবা স্বপ্ন দেখত কিংবা অন্য কারো দিকে ভেংচি কাটত। একদিন লম্বা পাদ্রী মশাই জ্যাকের ওইরকম ভেংচি কাটা দেখে ফেললেন এবং তার উদ্দেশে জ্যাক ভেংচি কেটেছে ভেবে তার পবিত্র পেশার প্রতি জোর করে হলেও সমীহ আদায় করার সিদ্ধান্ত নিলেন। উপস্থিত ছেলেদের সামনে জ্যাককে তার কাছে ডাকলেন এবং তার হাড্ডিসার হাতে শরীরের সর্বশক্তি নিয়োগ করে জ্যাকের চোয়ালে একটা চড় কষালেন। তার চড়ের আঘাতে জ্যাক প্রায় পড়েই যাচ্ছিল। তখন পাদ্রী মশাই বললেন, এবার তোমার জায়গায় যাও। তার দিকে অশ্রুহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জ্যাক নিজের জায়গায় ফিরে এল। উল্লেখ্য যে, সারা জীবনই শাস্তি কিংবা ব্যথা বেদনা থেকে কান্না আসেনি তার চোখে, বরং তার সংকল্প এবং মনের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে; কান্না এসেছে ভালোবাসা আর করুণা পেলে। গালের বাম পাশটা প্রচণ্ড ব্যথা করতে লাগল। মুখের ভেতর রক্তের স্বাদ অনুভব করতে পারল সে। জিহ্বার ডগা দিয়ে ছুঁয়ে দেখে বুঝতে পারল, চড়ের আঘাতে তার মুখের ভেতরে কেটে গেছে। সেখান থেকে রক্ত ঝড়ছে। নীরবে রক্ত গিলে ফেলল সে।

দীক্ষালাভের গোটা সময়ই জ্যাকের মন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছে। পাদ্রী তার দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময়, যিশুর স্বর্গীয় স্বভাব এবং ত্যাগের কথা বলার সময় জ্যাক শুধু তার দিকে ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকত। তার দৃষ্টিতে না থাকত বন্ধুতা, না শত্রুতা। পাদ্রীর কথা বলার সময় জ্যাকের মন চলে যেত প্রায় তিন শ মাইল দূরে: তার মনে আগে যে দুটো পরীক্ষার কথা ছিল সে দুটো পরীক্ষা এখন যেন একটা হয়ে গেল। নিজের কাজের মধ্যে ডুবে থেকে তার অটল স্বপ্নের ভেতর কোনো এক অজানা কারণে জ্যাককে শুধু সান্ধ্য সভা খুব মোহিত করে রাখত: গির্জার ভয়ঙ্কর ঠাণ্ডা পরিবেশে বাদ্যযন্ত্রের বাজনা শুনে মনে হতো সে এরকম সুর আগে আর কখনও শোনেনি। মনে হতো, আগে যে সব সুর সে শুনেছে সবই বোকার সুর। পাদ্রীদের বিভিন্ন বিষয় এবং আধো অন্ধকারে চকচক করে ওঠা পুরোহিতের পোশাক সম্বলিত স্বপ্ন আরো গভীর, আরো সর্বব্যাপী হয়ে দেখা দিত তার সামনে যেন শেষ পর্যন্ত কোনো রহস্যের সঙ্গে মিশে যাবে। তবে সেই নামহীন রহস্যের ভেতর জোর করে বেখাপ্পাভাবে অনুপ্রবিষ্ট স্বর্গীয় ব্যক্তিবর্গ কিংবা তাদের নাম কোনো ভূমিকাই পালন করতে পারত না তার জন্য। সেগুলো আসলে তার অভিজ্ঞতালব্ধ জগতেরই যেন বর্ধিতাংশ শুধু। তাকে অভিষিক্ত করে দেওয়া সেই ঊষ্ণ, অন্তর্মুখি এবং দ্ব্যর্থক রহস্য যেন তার মায়ের নীরবতার দৈনন্দিন রহস্য কিংবা নীরব হাসিটাই যেন গভীর করে তুলত। অনেকবার সে সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরে দেখেছে, একা নির্জন বাড়ির খাবার ঘরে মা বসে আছেন। আলো জ্বালেননি যেন অন্ধকারকে একটু একটু করে ঘরটা গ্রাস করতে দিচ্ছেন। মা ঘণ অন্ধকারের প্রতিমূর্তি হয়ে জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে নীরব হয়ে বাইরের রাস্তার চঞ্চলতা দেখছেন। মায়ের প্রতি হতাশা আর ভালোবাসা ভরা হৃদয়ে বালক জ্যাক চৌকাঠে এসে দাঁড়িয়ে পড়ত। মা তখন এবং পরবর্তীতেও সব তুচ্ছতার অধীনতা থেকে মুক্ত। প্রথম সভার আগের দিনের তওবা করা ছাড়া জ্যাকের আর কিছু মনে নেই। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তোমার মনের ভেতর কি কোনো পাপের চিন্তা ছিল কখনও? জ্যাক বলল, হ্যাঁ, ফাদার, ছিল। অবশ্য সে নিজেই তখনও জানে না কোনো চিন্তা কী করে পাপের হতে পারে। পরের দিন পর্যন্ত তার ভয় পিছু ছাড়েনি, হয়তো সে অজ্ঞাতে কোনো পাপের চিন্তাকে স্থান দিয়ে ফেলতে পারে। স্কুল পড়–য়া জ্যাকের অভিজ্ঞতায় যে সকল আপত্তিকর শব্দ ছিল সেগুলোর মধ্যে কোনো একটাকে উৎসবের দিন সকাল পর্যন্ত আটকে রেখেছিল বলে তার পরিষ্কার মনে আছে। সেদিন জ্যাক নাবিকের পোশাকে, বাহুতে একটা মাদুলির মতো বন্ধন নিয়ে, একটা প্রার্থনা-বই এবং মার্গারেট খালাসহ তার সবচেয়ে গরিব আত্মীয়দের দেওয়া একটা তসবীসহ আন্যান্য ছেলেদের দাঁড়ানো সারির মাঝখানের জায়গা দিয়ে একটা মোমবাতি হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল; অন্যদের হাতেও মোমবাতি। গির্জার পেছন পাশে দাঁড়ানো তাদের আত্মীয়স্বজনদের চোখ পরমানন্দে উজ্জ্বল।

চলবে...

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

 

 

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন