মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান

বস,আমরা এখন কী করব?
আমি যদি তোমার জায়গায় থাকতাম তাহলে গেরিলায় যোগ দিতাম। ফ্রান্সে আর একটা লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
কৃষক হেসে ফেলে বলল, কী রকম ভোতাবুদ্ধি, তাই না?
জ্যাক বলল, তারা আপনার সঙ্গে থাকেন?

না, তিনি আলজেরিয়া সম্পর্কে একটা কথাও শুনতে চাননি। তিনি মার্সেইতে একটা আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। মা আমার কাছে চিঠিতে লিখেছেন বাবা তার রুমের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করেন।
আর আপনি?

ওহ, আমি তো থেকেই গেলাম। শেষ পর্যন্ত যা-ই ঘটুক আমি থেকেই গেলাম। আমার পরিবার আলজিয়ার্সে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি এখানেই বুড়ো ব্যাঙের মতো কর্কশ স্বরে ডাকতে থাকব। যারা প্যারিসে আছে তারা এটা বুঝতে পারে না। আমরা ছাড়া আর কারা বুঝতে পারে? আরবরা।

ঠিক বলেছেন। আমরা উভয়ই যেন একে অপরকে বুঝতে পারি শুরু থেকেই। মানুষের একই রক্ত নিয়ে বোকারা আর নির্বোধেরা আমাদের পছন্দ করে। আমরা একে অন্যকে আরো কিছুদিন হত্যা করতে থাকব। একজন আরেকজনের বিচি কাটতে থাকব; একজন আরেকজনের ওপর অত্যাচার করতে থাকব। তারপর আমরা একসঙ্গে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য ফিরে যাব। দেশটা সেরকমই চাই। আরেকটু রস? হালকা একটু। আরেকটু পরে তারা দুজনই বাইরে বের হয়ে এলো। জ্যাক জিজ্ঞেস করল তার বাবা মাকে চিনতে পারে এমন কেউ আছে কি না। ভেইলার্ড বলল, না। যে বৃদ্ধ ডাক্তার তাকে পৃথিবীর আলোতে নিয়ে এসেছিলেন এবং পরে সলফেরিনোতেই অবসরে গেছেন তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। সেইন্ট আপোর্ত্রের সম্পত্তি দুবার হাত বদল হয়েছে। দুটো যুদ্ধে আরবের কর্মজীবি লোকেরা সবাই মারা গেছে; আরো কত জনের জন্ম হয়েছে। ভেইলার্ড বলেই চলল, এখানে সবকিছু বদলে যায়। পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটে। আর মানুষেরাও সব ভুলে যায়। তবে সেইন্ট আপোর্ত্রের খামারের কেয়ারটেকার তামজাল কিছু জেনে থাকতেও পারে। ১৯১৩ সালে তার বয়স বিশের কাছাকাছি ছিল। জ্যাক সিদ্ধান্ত নেয় যে করেই হোক তার জন্মস্থানটা দেখতে যাবে সে।

শুধু উত্তর দিক ছাড়া দেশটার বাকি সবদিক দূরবর্তী পাহাড় পর্বতে ঘেরা। দুপুরের রোদের তাপে পাথরের বড় বড় স্তুপ কিংবা উজ্জ্বল ঘন কুয়াশার মতো সেগুলোর চেহারা আবছা আবছা দেখা যায়। পাহাড়গুলোর মাঝখানে উত্তরে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত সূর্যের তাপে সাদা হয়ে যাওয়া আকাশের নিচে এক সময়ের জলাপূর্ণ সাইবুজ সমতল ভূমি। সেখানকার সারিবদ্ধ আঙুরের গাছগুলোর পাতা কপার সালফেটে নীলাভ হয়ে গেছে। আর আঙুরগুলো ইতোমধ্যে গাঢ় রং ধারণ করেছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় সাইপ্রেস কিংবা ইউক্যালিপটাসের ঝাড়, নিচের বাড়ি ঘরগুলো ছায়া দিয়ে ঢেকে রেখেছে। খামারের ভেতর দিয়ে হাঁটা পথে এগোচ্ছে জ্যাক এবং ভেইলার্ড। তাদের পায়ের নিচ থেকে লাল রঙের ধূলা উড়ে যাচ্ছে। পাহাড় পর্যন্ত সারাটা পথ বাতাস মরিচীকার মতো কাঁপছে। সূর্যের তাপ ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সাধারণ গাছপালা গুচ্ছের পেছনে একটা বাড়িতে যখন তারা পৌঁছে তাদের শরীর থেকে ঘাম চুইয়ে পড়তে থাকে। আড়ালে কোথা থেকে যেন একটা কুকুর রাগান্বিত স্বরে ঘেউ ঘেউ করে তাদের স্বাগত জানায়।

প্রায় ভাঙা একটা ঘরের তুঁতকাঠের তৈরি দরজাটা যত্নে করে বন্ধ করা। ভেইলার্ড দরজায় টোকা দিলে কুকুরটা আগের মতোই চিৎকার দিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। ঘরের অন্য পাশের ঘেরা দেওয়া উঠোন থেকে মনে হয় শব্দটা আসছে। কিন্তু কারও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ভেউলার্ড জ্যাককে বলে, কী রকম বিশ্বাসী আমরা একে অপরের প্রতি! লোকজন আছে। কিন্তু অপেক্ষা করছে।
ডাক ছেড়ে বলল সে, তামজাল, আমি ভেইলার্ড।

এরপর জ্যাককে উদ্দেশ করে বলল, ছয় মাস আগে তার জামাতার খোঁজে লোক এসেছিল। তারা জানতে এসেছিল, সে গেরিলাদের কোনো কিছু সরবরাহ করছে কি না। তাকে নিয়ে যাওয়ার পরে তার সম্পর্কে আর কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। পরে লোকজন তামজালকে বলেছে, হয়তো পালাতে গিয়ে সে মারা পড়েছে।

জ্যাক বলল, আহ্ কী ভয়াবহ কথা! সে কি আসলেই গেরিলাদের সরবরাহকারী ছিল?
কী জানি; হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। যুদ্ধের সময় আর কী-ই বা আশা করা যায়। তবে এ থেকে বোঝা যায়, এই আতিথেয়তার দেশে কী কারণে দরজা খুলতে দেরি হয়।

ঠিক তখনই দরজা খুলে গেল। তামজাল বের হয়ে এল। ছোটখাটো শরীরের একজন মানুষ; মাথায় চারপাশে ছড়ানো একটা হ্যাট, জোড়াতালি দেওয়া একটা ওভারল। ভেইলার্ডের দিকে হাসি দিয়ে জ্যাকের দিকে তাকাল।
ভেইলার্ড পরিচয় করিয়ে দিল, একজন বন্ধু।
তামজাল বলল, ভেতরে আসুন; আপনারা চা খাবেন।
তামজালের তেমন কিছু মনে নেই। হ্যাঁ, হতে পারে: তার এক চাচার মুখে একজন ম্যানেজারের কথা শুনেছে। তিনি নাকি যুদ্ধের পরে কয়েক মাস এখানে ছিলেন।
জ্যাক বলল, যুদ্ধের আগে।
হ্যাঁ, আগেও হতে পারে; সেটাও সম্ভব। তার বয়স তো তখন খুব অল্প ছিল। যা-ই হোক তার বাবার কী হয়েছিল?
তিনি যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। তামজাল বলল, কপালের লিখন; তবে যুদ্ধ জিনিসটা খুব খারাপ।
ভেইলার্ড বলল, যুদ্ধ সব সময়ই চলছে। তবে মানুষ খুব তাড়াতাড়িই শান্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কাজেই তাদের মনে হয় এরকমটাই স্বাভাবিক আসলে কোনো যুদ্ধই অন্য সব স্বাভাবিক বিষয়ের মতো নয়।
পাশের ঘরে তার স্ত্রী অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চায়ের ট্রে হাতে। তার কাছ থেকে ট্রেটা আনতে যেতে যেতে তামজাল বলল, যুদ্ধের সময় মানুষেরা ক্ষেপাটে হয়ে থাকে।
তারা আগুন গরম চা শেষ করে তামজালকে ধন্যবাদ দিয়ে কঠিন তাপের নিচে দগ্ধ আঙুর ক্ষেতের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া পথে বের হয়ে পড়ল।

জ্যাক বলল, আমি ট্যাক্সি নিয়ে সলফেরিনোতে যাচ্ছি। ডাক্তার সাহেব আমাকে দুপুরের খাবারে নিমন্ত্রণ করেছেন।
তার কথা শুনে ভেইলার্ড বলল, সঙ্গে আমি নিজেকে নিমন্ত্রণ করছি একটু অপেক্ষা করুন। সামান্য খাবার নিয়ে আসছি।

পরবর্তীতে আজিয়ার্সগামী বিমানে বসে জ্যাক প্রাপ্ত তথ্যের মধ্যে থেকে বাছাই করতে লাগল। আসলে সে সামান্য তথ্যই পেয়েছে। তার বাবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তেমন কোনো তথ্য নেই বললেই চলে। রাতটা অদ্ভুতভাবে যেন মাটির পৃথিবী থেকে পরিমাপযোগ্য ছন্দে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। অবশেষে রাত বিমানটাকে এমনভাবে গিলে ফেলছে যেন রাতের শরীরে স্ক্রু ড্রাইভারের মতো গেঁথে দেওয়া হচ্ছে বিমানটাকে। তবে রাতটা জ্যাকের অস্বস্তিতে যেন আরো কয়েক মাত্রা যোগ করে দিচ্ছে। কেননা নিজেকে সে দুভাবে আটক বলে মনে করতে থাকে: প্রথমত বিমানের মধ্যে, দ্বিতীয়ত রাতের অন্ধকারের মধ্যে। নিঃশ্বাস ফেলতেই তার কষ্ট হতে থাকে। আবারও সে জন্ম নিবন্ধনের খাতায় প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম দেখে। দুটো ফরাসি নাম; এরকম নাম প্যারিসের বিভিন্ন সংকেতে দেখা যায়। তার বাবার আগমন এবং তার জন্ম সম্পর্কে বলার পর ডাক্তার বলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা ছিল স্থানীয় দোকানদার। তাদের মধ্যে প্রথমজন তার বাবাকে সহযোগিতা করতে রাজী হয়েছিল। তাদের নাম প্যারিসের উপশহরের নামের মতো। তবে সেটা কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয়। কারণ সলফেরিনো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আটচল্লিশাদের দ্বারা।

ভেইলার্ডও বলেছে, ও হ্যাঁ, আমার দাদার বাবা মা ও তাদেরই অন্যতম। কাজেই আমার বাবার জিনের মধ্যেও বিপ্লব ছিল। সে আরো জানিয়েছে, তার পূর্ব পুরুষদের একজন ছিল ফবর্গ সেইন্ট-ডেনিস কাঠমিস্ত্রি; তার স্ত্রী ছিল ধোপানি। ফ্রান্সে তখন বেকার সমস্যা প্রকট এবং মানুষের মাঝে অস্থিরতাও ছিল। নির্বাচকম-লীর শাসনতন্ত্র নতুন বসতিস্থাপনকারীদের জন্য পঞ্চাশ মিলিয়ন ফ্রাঁ দানের অনুমোদন দিয়েছিল। সবার জন্য একটি করে ঘর এবং দুই থেকে দশ হেক্টর করে জমি দানের প্রতিজ্ঞা করেছিল। ভেইলার্ড বলে চলে, বুঝতে পারছেন, কী রকম কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল। হাজার হাজারেরও বেশি মানুষ প্রতিজ্ঞ ভূমির স্বপ্ন দেখেছিল। বিশেষ করে নারী পুরুষেরা অচেনা জায়গা সম্পর্কে ভীত ছিল। পুরুষেরা এমনি এমনি বিপ্লব করতে চায়নি। তারা সবাই সান্তা ক্লসে বিশ্বাস করার মতো মানুষ ছিল। আর তাদের সেই সান্তা ক্লস পরিধান করেছিল বুর্নুস। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, তারা এক ধরনের সান্তা ক্লস পেয়েছিল। তারা যাত্রা করেছিল ’৪৯ সালে এবং প্রথম ঘর তৈরি হয়েছিল ’৫৪ সালের গ্রীষ্মে। ততদিনে...।

চলব...

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

এমএমএ/

 

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন