মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস র্পব-৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

এখন জ্যাকের শ্বাস নেওয়া সহজ হয়ে গেছে। প্রথম পর্যায়ের অন্ধকারের প্রবাহ থেমে গেছে। জোয়ার ভাটার মতো এই প্রবাহ। পেছনে ফেলে গেছে তারার মেঘ। সারা আকাশ ছেয়ে আছে তারায় তারায়। এখন শুধু মোটরের বিকট শব্দ বিরক্তি ঘটাচ্ছে। পশু-খাদ্যের বৃদ্ধ ব্যবসায়ীর মুখটা স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে সে। লোকটা তার বাবাকে চিনত। জ্যাকের বাবার চেহারা আবছা আবছা মনে আছে তার। লোকটা বার বার বলছিল, কথা বলতেন না। একদম কথা বলতেন না তিনি।

তবে হট্টোগোলের কারণে জ্যাকের চিন্তাশক্তি রহিত হয়ে যাচ্ছে; এই হট্টোগোল তাকে এক অসাড় অবস্থায় ফেলে দিয়েছে; বাবার চেহারাটা মনে আনার চেষ্টা করেও পারছে না। অনেক কল্পনা খাটিয়েও বাবাকে স্পষ্টরূপে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি এই বিশাল এবং বৈরী দেশে নিরাকার হয়ে যাচ্ছেন। গ্রাম এবং সমতলভূমির অনামি ইতিহাসের মধ্যে তিনি গলিত হয়ে মিশে গেছেন। প্যারিসের বসতি স্থাপনকারীদের সলফেরিনোতে আনা হয়েছিল বজরায় করে। ওইসব বজরার মতোই ডাক্তারের ওখানে শোনা কথাবার্তার রেশ যেন ঢেউয়ে ঢেউয়ে ফিরে আসছে জ্যাকের মনে। তখন এদিকে কোনো ট্রেন ছিল না। একটা ট্রেন ছিল; শুধু লিয়নের দিকে যাতায়াত করত। বাছাই করা ঘোড়া দিয়ে টেনে নেওয়া হতো বজরাগুলো। নগরের পিতলনির্মিত বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহারকারী বাদকদল ‘মার্সে’ এবং ‘চান্ট ডু ডিপার্ট’ বাজাত। বজরার যাত্রীরা কোনো এক যাদু বলে যে গ্রামের পত্তন করবে এমন একটা গ্রামের নাম লেখা ব্যানার হাতে সিন নদীর তীড়ে দাঁড়িয়ে একজন যাজক তাদের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করত, খোদা আপনাদের দায়িত্ব নেবেন।। ততক্ষণে বজরা যাত্রা শুরু করেছে; প্যারিস পেছনের দিকে সরে যেতে যেতে এক সময় অদৃশ্য হয়ে যেত। যাত্রীদের মধ্যে যাদের আত্মিক শক্তি প্রবল, যারা মনের দিক থেকে সবার চেয়ে শক্ত তারাও প্রচণ্ড রকমের দমে যেত, নিশ্চুপ হয়ে থাকত। তাদের শক্তিতে ভর করেই তাদের স্ত্রীরা ভরসা পেত। বজরার খোলে বিছানো খসখসে খড়ের মধ্যে তাদের ঘুমাতে হতো; চোখ বরাবর ময়লা পানির দৃশ্য। পোশাক বদলের সময় নারীরা পালাক্রমে বিছানার চাদরের আড়াল তৈরি করত। ওইসবের ভেতর তার বাবার অস্তিত্ব কোথায় জ্যাক বুঝে পায় না। কোথাও না। তবু বজরাগুলো শ খানেক বছর আগে শরতের শেষে খানাখন্দ, নালা পার হয়ে এগিয়ে যেত। মাসের পর মাস ধরে গাছের শেষ পাতার জমাট হয়ে থাকা ছোট বড় নদী পার হয়ে যেত। বাদাম আর উইলো গাছ সামনের দিকে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যেত। শহরাঞ্চলে পৌঁছুলে দামামা বাজিয়ে তাদের স্বাগত জানানো হতো। তাদের সঙ্গে আরও কোনো বজরা যোগ হতো আরো সব যাত্রী নিয়ে। সবারই গন্তব্য অজানা দেশ। বয়সী মানুষের এলোমেলো যে তথ্য সে সংগ্রহ করতে এসেছিল তার চেয়ে বরং সবার কাছ থেকে শোনা তথ্যে জ্যাক দেখতে পায়, সবাই তাকে সেন্ট ব্রিউকে মারা যাওয়া অল্প বয়সী এক যুবকের কথা বলে।

মোটর এখন গতি বদল করছে। রাতের ঘন অন্ধকারের পিণ্ডগুলো, রাতের স্থানচ্যুত তীক্ষ্ণ ফলার মতো টুকরোগুলো এখন কাবিলিয়ার উপরে। দেশের এই হিংস্র এলাকাটার দিকে, এই রক্তাক্ত এলাকাটার দিকেই যাত্রা করেছিল তার পূর্বপুরুষেরা একশ বছর আগে। ’৪৮ সালের শ্রমজীবি মানুষেরা একটা প্যাডেল করা চাকাঅলা বজরায় গাদাগাদি অবস্থায় যাত্রা করেছিল। ডাক্তার বলেছেন, বজরাটার নাম ছিল লাব্রাডর। কল্পনা করতে পারো, লাব্রাডর মশা আর সূর্যের আধিপত্যের এলাকায় যাবে? একদিকে লাব্রাডরের চাকার ব্লেড ঘুরতে ঘুরতে ঠাণ্ডা পানিতে ফেনা তুলছে। অন্যদিকে ঠাণ্ডা বাতাস সেখানে ঝড়ের পাঁয়তারা খুঁজছে। বজরার পাটাতন পাঁচ দিন পাঁচ রাত বিধৌত হয়েছে গোলার্ধের বাতাসে। আর বিজেতারা বজরার খোলে মৃতপ্রায় অসুস্থ অবস্থায় একে অপারের গায়ে বমি করতে করতে মরে যেতে উদ্যত। অবশেষে সকলেই তারা বন বন্দরে পৌঁছে। বন্দর তাদের স্বাগত জানাতে সংগীতের আয়োজন করেছে। ইউরোপের রাজধানী থেকে ততক্ষণে স্ত্রী সন্তানদের এবং পোটলাপুটলি যার যা ছিল সব নিয়ে তারা যেন খোঁড়াতে খোঁড়াতে পাঁচ সপ্তাহের দীর্ঘ ভ্রমণে বহুদূর এই দূরবর্তী নীলাভ পটভূমির দেশে চলে এসেছে। এসেই মুখোমুখি হয়েছে সার, মসলা আরও কত কিছুর।

জ্যাক তার আসনে পাশ ফিরল। আধো ঘুমে জ্যাক বাস্তবে না দেখা বাবাকে স্বপ্নে দেখল। বাবার উচ্চতা সম্পর্কেও তার কোনো ধারণা নেই। স্বপ্নে দেখল, বাবা অন্যান্য অভিবাসীদের মাঝে বন বন্দরে দাঁড়িয়ে আছেন। কপিকলের গুড়ি দিয়ে সবার জিনিসপত্রের যা কিছু টিকে আছে সেসব তুলে ধরা হচ্ছে। এরপর খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র নিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু হলো সবার মাঝে। বাবা খুব দৃঢ়চিত্তে ভাবগম্ভীর চেহারায় দাঁতে দাঁত আটকে দাঁড়িয়ে আছেন। যে রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে এই রাস্তা ধরেই প্রায় চল্লিশ বছর আগে ওয়াগনে চড়ে এরকম একই শরতের আকাশের নিচে তিনি বন থেকে সলফেরিনো গিয়েছিলেন, তাই না? তবে অভিবাসীদের জন্য সেরকম কোনো রাস্তা আসলে ছিল না। নারী এবং শিশুদের সেনাবাহিনীর অস্ত্রের গাড়িতে এবং পুরুষদের পায়ে হেঁটে জলাপূর্ণ সমতলভূমি কিংবা কণ্টকিত ঝোপঝাড় পার হতে হয়েছে কিছুদূর পর পর দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আরব পাহারাদারদের কড়া চোখের নজরদারির অধীনে। অভিবাসীদের সঙ্গী বলতে ছিল অবিরত ঘেউ ঘেউ করে যাওয়া কাবিলে কুকুরের দল। চল্লিশ বছর আগে তার বাবাও ওই দলের সঙ্গে দিনের শেষে পৌঁছেছিলেন ওই দেশেরই একটা এলাকায়। সেখানে চারপাশে দূরে দূরে পাহাড় পর্বত; কোথাও জনবসতি ছিল না, কোথাও একখণ্ড আবাদী জমি ছিল না; শুধু মাঝে মাঝে মেটে রঙের সামরিক তাবু চোখে পড়েছিল তাদের। বিশাল ফাঁকা জায়গা ছাড়া আর কিছু চোখের সামনে ছিল না। তাদের মনে হয়েছিল, জগতের শেষ প্রান্তে এসে গেছে তারা। ফাঁকা আকাশ আর বিপদসঙ্কুল ভূমির মাঝখানে আর কিছু দেখতে পায়নি তারা। ক্লান্তি, ভয় আর হতাশায় নারীরা সারারাত কান্নাকাটি করে কাটিয়েছে।

সেই একই রকম রাতে একটা হতভাগা বৈরী জায়গায় পৌঁছনো; সেই মানুষগুলোই, তারপর তারপর...,নাহ, বাবা সম্পর্কে জ্যাক আর কিছু জানে না। তবে শুধু এরকমই শুনেছে, তারা সবাই সৈনিকদের হাসি তামাশার সামনে নিজেদের একত্রিত করতে এবং তাঁবুতে বসতি স্থাপন করতে পেরেছে। বাড়িঘরের প্রসঙ্গ পরে এসেছে। বাড়িঘর তৈরি করতে হয়েছে; জমি ভাগাভাগি হয়েছে; কাজ করতে হয়েছে। হ্যাঁ কাজই তখন পবিত্র কর্ম ছিল নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। ভেইলার্ড বলেছে, তারা কাজ করতেও পারেনি ঠিক মতো। কারণ বৃষ্টি, আলজেরিয়ার কঠিন বৃষ্টি ঝড়েছে একটানা আট নয় দিন। ব্যাপক বৃষ্টি পতনের যেন কোনো শেষ ছিল না। গোটা সেবাউস প্লাবিত হয়েছে। তাঁবু পর্যন্ত পানি উঠেছে। তারা বাইরে বের হতে পারেনি। যেখানে সেখানে তৈরি আবর্জনাপূর্ণ বড় বড় তাঁবু বিরামহীন অশেষ বৃষ্টির নিচে অনুরণন তুলতে থাকে। ভেতরের আবদ্ধ অবস্থার দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা ফাঁপা নল খাগড়া কেটে নালার মতো ব্যবহার করতে থাকে যাতে তাদের শরীরিক বর্জ্য ভেতর থেকে বাইরে বের করে দিতে পারে। বৃষ্টি থামলে শেষে তারা ছুতারের আদেশ অনুসারে হালকা পলকা ঘরবাড়ি তৈরি করতে কাজে বের হয়।

ভেইলার্ড হাসতে হাসতে বলেছে, আহা, সহজ সরল মানুষগুলো। বসন্তকালে তাদের বাড়িঘর তৈরির কাজ শেষ করে। তারপরই তারা কলেরার তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। আমার বুড়ো বাবার কথা যদি বিশ্বাস করি তাহলে বলতে পারি, আমাদের পূর্বপুরুষ যিনি ছুতার ছিলেন এভাবেই তিনি তার স্ত্রী এবং মেয়েকে হারান। তারা ওই ভ্রমণে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন।

এদিক ওদিক পদচারণা করতে করতে বৃদ্ধ তবে টান টান শরীরের ডাক্তার বললেন, হ্যাঁ, তারা গড়ে দিনে দশ জনের মতো মারা গেছে। গরমের মৌসুম আগে আগেই শুরু হয়ে যায়। আর তারা সবাই কুঁড়ে ঘরগুলোতে তাপে ভাজা ভাজা হতে থাকে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যাপার, কী বলব আর...,সব দিক থেকে তারা দিনে দশ জন করে মারা যায়।

চলবে...

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

এমএমএ/

 

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন