মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান

আরেকবার তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলে ‘ক্যাথলিক’। ধর্মশিক্ষার ক্লাস সে করতে চায় কি না জিজ্ঞেস করলে জ্যাকের নানির ভয়ের কথা মনে আসে এবং সে বলে, না। তার কথা শুনে মনিটর বললেন, তাহলে বুঝে গেলাম, তুমি ক্যাথলিক ঠিকই। কিন্তু ধর্মের বাস্তবায়ন করো না, তাই না? তার বাড়িতে ধর্মের কী আচার আচরণ পালন করা হয় সে সম্পর্কে জ্যাক ব্যাখ্যা করে বলতে পারে না। কিংবা তার এলাকার এবং জাতির লোকেরা ধর্মকে কীভাবে দেখে থাকে সেটাও তার জানার বাইরে। সুতরাং সে মনিটরের প্রশ্নের জবাবে বলল, হ্যাঁ। উপস্থিত সবাই হেসে উঠলে সেদিনই জ্যাকের একগুঁয়েমির একটা সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং ওই মুহূর্তেই সে বুঝতে পারে, সে গভীর সাগরে পড়েছে।

আরেক দিন সাহিত্যের শিক্ষক তাদের সবার হাতে একটা ফরম ধরিয়ে দিলেন। ব্যক্তিগত কিছু তথ্য দিতে হবে এবং পিতামাতার স্বাক্ষর লাগবে। ছোটখাটো অস্ত্র থেকে শুরু করে ম্যাগাজিন এবং তাসসহ আরও কতিপয় জিনিস স্কুলে আনা যাবে না বলে উল্লেখ ছিল সেই ফরমে। ফরমের ভাষা এমনই জটিল ছিল যে, মা এবং নানি যাতে সহজে বুঝতে পারেন সেজন্য জ্যাককে সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হয়েছিল। পরিবারের মধ্যে একমাত্র তার মা-ই কোনো রকমে স্বাক্ষর করতে পারতেন। কাজেই তিনি ফরমের নিচে এক কোণায় স্বাক্ষর করবেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর সরকারের তরফ থেকে তিন মাস পর পর তাকে দেওয়া টাকা তোলার সময়ও তাকে স্বাক্ষর করতে হতো। প্রতিবার যাওয়ার সময় মা বলতেন তিনি কোষাগারে যাচ্ছেন। তার কাছে ওই শব্দের বেশি কোনো অর্থ জানা ছিল না সেই অফিস সম্পর্কে। তার সন্তানরা জানত, মা এক পৌরাণিক জায়গায় যাচ্ছেন। সেখানে প্রাচুর্যের কোনো সীমা নেই। প্রথমবার স্বাক্ষর দেওয়ার সময় ঝামেলা হওয়াতে ওখানে উপস্থিত পাশের একজন পরামর্শ দিলেন ‘বিধবা কামু’ কথাটার একটা অতি সাধারণ নমুনাকে স্বাক্ষর হিসেবে চালিয়ে দিতে। পরবর্তীতে ওই স্বাক্ষর দিলেই হবে। তিনি সেরকমই চালিয়ে এসেছেন। যাই হোক পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জ্যাক দেখল, খুব ভোরে খোলে এরকম একটা দোকানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করার জন্য মা খুব ভোরে বের হয়ে গেছেন; তার ফরমে স্বাক্ষর করার কথা হয়ত ভুলেই গেছেন। নানি স্বাক্ষর করতে পারতেন না। তার হিসাব চালাতেন বৃত্তের মাধ্যমে, মানে কয়বার বৃত্ত ছেদ করা হয়েছে তার উপর নির্ভর করতেন তার হিসাব। ছেদ করা দিয়ে তিনি বুঝাতেন এক, দশ কিংবা একশো। শেষে জ্যাক তার ফরম স্বাক্ষর ছাড়াই ফিরিয়ে নিয়ে গেল এবং বলল তার মা স্বাক্ষর করতে ভুলে গেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, বাড়িতে স্বাক্ষর করার মতো আর কেউ ছিল কি না। জ্যাক বলল, না আর কেউ ছিল না। তখন শিক্ষকের বিস্মিত চাহনি থেকে জ্যাক বুঝতে পারল, ব্যাপরটা সে যতটা মনে করেছিল তার চেয়ে অনেক বেশি অস্বাভাবিক।

সে এর চেয়েও বেশি বিব্রত বোধ করেছে আলজিয়ার্সে আসা ফরাসি বালকদের নিজেদের বাবাদের পেশা সম্পর্কিত খামখেয়ালিপনা দেখে। যাকে নিয়ে জ্যাক সবচেয়ে বেশি ভেবেছে সে হলো জর্জ দিদিয়ের। ফরাসি ভাষার ক্লাস এবং অন্যান্য পড়াশোনার বিষয়ে দুজনের মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকায় জ্যাক এবং তার মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তবে তাদের বন্ধুত্বের কারণে পিয়েরে আবার ঈর্ষায় ভুগতে থাকে। দিদিয়ের এসেছে ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক পরিবার থেকে। তার মা ‘গান তৈরি করতে’ পারতেন এবং তার বোন (তাকে কখনও না দেখেই জ্যাক তার স্বপ্নে বিভোর হতো) কাপড়ে ফুল তুলতে পারত। দিদিয়ের নিজের সম্পর্কে বলত, বড় হয়ে সে পাদ্রি হবে। খুব বুদ্ধিদীপ্ত দিদিয়ের নৈতিকতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে আপোসহীন। তার বিশ্বাস ছিল যুক্তিতর্কের বাইরে। তার মুখ থেকে কেউ কখনও খারাপ কোনো শব্দ শোনেনি। শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্রিয়াকলাপ কিংবা জন্ম প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্যরা অহরহ অনেক কথাই উচ্চারণ করত। সেসব ব্যাপারে অবশ্য তাদের পরিষ্কার ধারণা তখনও জন্মায়নি। জ্যাকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব পাকাপাকি হয়ে যাওয়ার পরে তার পক্ষ থেকে জ্যাকের কাছে যেটা জোরালোভাবে চাওয়া হলো সেটা হলো, জ্যাক যেন অশ্লীল কথা উচ্চারণ না করে। দিদিয়েরের সঙ্গে কথা বলার সময় অশ্রাব্য কথা পরিহার করা জ্যাকের জন্য মোটেও কঠিন হয়নি। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে কেমন করে যেন অবলীলায় ওইসব শব্দ বের হয়ে পড়ত। ততদিনে অবশ্য তার মধ্যে বহুমুখী স্বভাব গড়ে উঠতে শুরু করেছে। এই স্বভাবের বদৌলতে অনেক কিছুই তার জন্য সহজ হয়ে যেত। কারো ভাষা নকল করা, যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া, যেকোনো মানুষের ভূমিকা পালন করা ইত্যাদি তার কাছে তেমন কোনো ব্যাপারই ছিল না। দিদিয়েরের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় শুনে ফরাসি মধ্যবিত্ত পরিবার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধরণা লাভ করে সে। ফ্রান্সে তার নিজের বাড়ি আছে। প্রত্যেক ছুটিতে সে সেখানে বেড়াতে যায়। বাড়ি সম্পর্কে সে জ্যাকের সঙ্গে অহরহ অনেক কথা বলে কিংবা লেখে। বাড়ির চিলেকোঠায় অনেক পুরনো বাক্সপেটরা আছে। সেগুলোতে পরিবারের চিঠিপত্র, স্যুভেনির, ছবি ইত্যাদি সংরক্ষণ করা আছে। তার দাদা এবং দাদার বাবার জীবন সম্পর্কে তার জানা শোনা আছে। এমনকি তাদের এক পূর্বপুরুষ ট্রাফালগারে নাবিক হয়ে গিয়েছিলেন, তার কথাও তার জানা আছে। তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বলে সেই লম্বা ইতিহাস থেকে দৈনন্দিন জীবনের আচার ব্যবহার সম্পর্কে উপদেশ এবং উদাহরণ টানত সে। ‘আমার দাদা বলতেন’.... ‘বাবা মনে করেন’.... ইত্যাদি ইত্যাদি। ওইসব কথা থেকেই তার নিজের চারিত্রিক কঠোরতা এবং উদ্ধত পবিত্রতার সাফাই খুঁজে পেত জ্যাক। ফ্রান্স সম্পর্কে কথা বলতে গেলেই বলত, ‘আমাদের দেশ’। আর দেশ তার কাছে ভবিষ্যতে কী রকম ত্যাগ প্রত্যাশা করতে পারে সে সম্পর্কে সজাগ হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে সে। জ্যাককে সে প্রায়ই বলত, তোমার বাবা আমাদের দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। দেশ সম্পর্কে জ্যাকের মনে এরকম কোনো ধারণা ছিল না। সে শুধু জানত, তারও পরিচয় ফরাসি হিসেবে এবং সে কারণেই তারও কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে। তবে তার কাছে ফ্রান্স মানে বিমূর্ত একটা ধারণামাত্র। মানুষ সে রকমই মনে করে আসছে বলে তার বিশ্বাস এবং সেই বিমূর্ত সত্তার প্রতিই তার মতো সবারই কর্তব্য আছে। ভালো মন্দ সব কিছুর বণ্টনকারী যে ঈশ্বরের কথা বাড়ির বাইরের মানুষদের কাছ থেকে সে শুনেছে বিমূর্ত বিষয়টা সেই ঈশ্বরের মতো, তার উপরে প্রভাব ফেলা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তিনি মানুষের ভাগ্য নিয়ে যা খুশি তা করতে পারেন। ঈশ্বর সম্পর্কে এরকম বিশ্বাস তার চারপাশের নারীদের মধ্যে আরও প্রবল। একদিন সে জিজ্ঞেস করেছিল, মা, আমাদের দেশ কোনটা?

কোনো কিছু বুঝতে না পরলে মা যেমন চমকে উঠতেন ওই প্রশ্ন শুনেও তেমনি ভয়ে চমকে উঠেছিলেন, কী জানি বাবা, জানি না।

জ্যাক বলেছিল, আমাদের দেশ ফ্রান্স।
মা যেন স্বস্তি পেলেন। বললেন, ও, হ্যাঁ হ্যাঁ।

দেশ কাকে বলে সেটা দিদিয়ের খুব স্পষ্ট করে জানত। তার সামনে তার পরিবারের সুস্পষ্ট এবং জোরালো উপস্থিতি। যে দেশে তার জন্ম সে দেশের গোটা ইতিহাসই যেন তার নিজের। দেশের ইতিহাসের কথা বলতে গেলে সে জোয়ান অব আর্কের কথা বলে শান্তি পেত। তার নামের শুধু প্রথম অংশ উল্লেখ করত। ভালো আর মন্দ বলতে কী কী বুঝায় সেসব ব্যাপারে এবং নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভাগ্য সম্পর্কে তার ধারণা বেশ পাকা ছিল। কম মাত্রায় হলেও নিজেদের সম্পর্কে পিয়েরে এবং জ্যাকেরও ধরণা ছিল। তারা জানত, তাদের জাতপাত আলাদা, অতীত বলতে কিছু নেই। পারিবারিক বিষয়ে বলার মতো কিছু নেই। বাড়িতে পুরনো চিঠিপত্র বোঝাই বাক্সপেটরা কিংবা পরিবারের মানুষদের ছবি রাখার মতো চিলেকোঠা নেই। ঝাপসা ইতিহাসের একটা দেশের নামমাত্র নাগরিক তারা। বড় হতে হতে দেখেছে, ঘরের ছাদ ঢেকে থাকত তুষারে আর মাথার উপরে চিরস্থায়ী এক বর্বর সূর্য। নৈতিক শিক্ষা বলতে যা ছিল তাতে চুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। মাসহ অন্য সব নারীকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে নারীদের সম্পর্কে, বড়দের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে এবং আরও অনেক প্রসঙ্গে সেই নৈতিক শিক্ষা তাদের কিছুই বলেনি। তারা যে সমাজে বড় হয়েছে সেখানে শিশুরা ঈশ্বর সম্পর্কে কিছু জানে না। ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কেও তারা কিছু জনে না। কারণ এই জীবন সূর্য, সমুদ্র আর দারিদ্রের উদাসীন দেবতাদের নিচে প্রতি দিনই যেন অফুরন্ত মনে হয়েছে তাদের কাছে। সত্যিকার অর্থে জ্যাক যদি দিদিয়েরের প্রতি এতটা অনুগত হয়েই থাকে তাহলে সেটা হয়েছে দিদিয়েরের হৃদয়ের কারণে। নিরঙ্কুশতার সঙ্গে তার হৃদয়ের মিশে যাওয়ার বিষয় এবং প্রবল অনুভূতির কাছে তার অনুগত্যের বিষয়টা জ্যাককে মুগ্ধ করেছে। অনুগত্য কথাটা জ্যাক প্রথম শুনেছে দিদিয়েরের কাছ থেকেই এবং কয়েকশো বার শোনা হয়ে গেছে এই কথাটা। দিদিয়েরের রয়েছে মনোমুগ্ধকর চারিত্রিক কোমলতা। তার কোমলতা সত্যিই বিচিত্র এবং চমকপ্রদ। জ্যাকের দৃষ্টিতে দিদিয়ের সবার থেকে কত আলাদা! এই কোমলতা জ্যাককে দুর্বার আকর্ষণে টানার ক্ষমতা রাখে। বড় হয়ে জ্যাক ভিনদেশি নারীদের প্রতি যেরকম অপ্রতিরোধ্য প্রবল আকর্ষণ বোধ করেছে তেমনি এক আকর্ষণ ছিল দিদিয়েরের মধ্যে। পরিবার, ঐতিহ্য আর ধর্ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা ছেলে দিদিয়ের জ্যাককে যেন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় কোনো দুর্বোধ্য গুপ্ত কিছুর পাহারা থেকে ফিরে আসা অভিযাত্রীদের মতো দুর্বার আকর্ষণে টানত।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন