মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান

তবে ক্যাবিল রাখাল তার পর্বতের উপরে দাঁড়িয়ে সূর্যের আলো বেয়ে ওঠা দেখে। সে আলো পর্বতকে ক্ষয় করেও দেয়। দীর্ঘ সমুদ্র ভ্রমণের পর যে উত্তর এলাকা থেকে তারা এসেছে সেদিকের স্বপ্ন মাখা দৃষ্টিতে সারসদের চলে যাওয়া দেখে সে। সারাদিন হয়তো তার স্বপ্ন দেখা চলে।

তবে সন্ধ্যা হলে এখনো সে বাকল-পাতা শোভিত খাবারের দিকে চলে যায়। লম্বা পোশাক পরা মানুষদের পরিবারের দিকে যায়। হতভাগাদের দিকে চলে যায়— তাদের কাছেই তার শিকড়। একই রকমভাবে জ্যাক বুর্জোয়া ঐতিহ্যের উপাচারের দ্বারাও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তবে তার আনুগত্য সবদিক থেকে ঠিক তারই মতো একজন অর্থাৎ পিয়েরের প্রতিই অটুট থাকে।

রবিবার আর বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল সোয়া ছটায় তার ঘর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গ্রীষ্মের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কিংবা শীতের প্রবল বৃষ্টিতে দৌড়ে যেতে যেতে দেখত, তার ছোট প্রাবার ভিজে স্পঞ্জের মতো হয়ে গেছে। পানির ফোয়ারার কাছে পৌঁছে পিয়েরেদের রাস্তায় ঢুকে পড়ত। দৌড়ের উপরেই দোতলায় উঠে আস্তে করে দরজায় টোকা দিত। পিয়েরের মা দরজা খুলে দিতেন। তিনি সুঠাম দেহের সুন্দর চেহারার একজন মহিলা ছিলেন। দরজা দিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে দুচারটে আসবাবে সাজানো খাবার ঘর। খাবার ঘরের দুপাশেই দুটো দরজা। একটা পিয়েরে এবং তার মায়ের শোয়ার ঘরের, আরেকটা তার দুজন মামার শোয়ার ঘরের দরজা। মামাদের চেহারা কর্কশ দেখালেও তারা বেশ হাসিখুশি ছিলেন, তবে কথা খুব কম বলতেন তারা। খাবার ঘরের ডানপাশটাতে আবছা অন্ধকার ঘরটা রান্নাঘর এবং গোসলখানা। পিয়েরে ঘুম থেকে সব সময়ই দেরি করে উঠত। উঠে এসে বসত অয়েল ক্লথ বিছানো টেবিলে। শীতের দিন হলে কেরোসিনের কুপি জ্বলত। দুহাত দিয়ে বড় একটা চকচকে মাটির তৈরি বাটি ধরে মায়ের সদ্য তৈরি করা কফিতে মুখ না পুড়িয়ে চুমুক দেওয়ার চেষ্টা করত পিয়েরে। তার মা বলতেন, ফুঁ দিয়ে জুড়িয়ে খাও। পিয়েরে ফুঁ দিয়ে একেক চুমুকে অল্প একটুখানি কফি পান করে জিহ্বা চাটাচাটি করত। সামনে দাঁড়ানো জ্যাক পিয়েরের কফি পান করা দেখতে দেখতে নিজের শরীরের ভর এক পা থেকে আরেক পায়ে স্থানান্তর করত। কফি শেষ করে আবার পিয়েরেকে যেতে হতো মোমবাতি জ্বালানো রান্নাঘরের ভেতর। সেখানে এক গ্লাস পানি এবং একপ্রান্তে পেস্ট জড়ানো দাঁত মাজার একটা ব্রাশ তার জন্য অপেক্ষা করত। তার আবার দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়ার রোগ ছিল। ছোট প্রাবার এবং ক্যাপ পরে নিয়ে স্কুলের ঝোলাটা তুলে নিয়ে পিয়েরে দাঁত মাজতে যেত। বেশ সময় নিয়ে সজোরে মাজতে থাকত। তারপর শব্দ করে থুথু ফেলত সিঙ্কের ভেতর। পেস্টের ওষুধের গন্ধ মিশে যেত কফির স্বাদের সঙ্গে। জ্যাক অধৈর্য হয়ে বিরক্তি প্রকাশ করত। কেননা ভালো বন্ধুত্বের জন্য এরকম দু-একটু কপট রাগ দেখানোর দরকার থাকে। তারপর দুজনে নীরবে সিঁড়ি বেয়ে রাস্তায় নামত। ট্রলিবাসের স্টেশন পর্যন্ত দুজনের মধ্যে আপাতত হাসি বিনিময় বন্ধ থাকত। তবে অন্য সময় একে অন্যকে ধাওয়া করতে করতে হাসাহাসি করত। কিংবা দৌড়ানোর সময় স্কুলব্যাগ রাগবি বলের মতো করে সামনে পেছনে চালান দিতে থাকত। বাসস্টপে পৌঁছে লাল ট্রলিবাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকত। এরপর বাসের দুতিনজন লোকের সঙ্গে তাদের যাত্রা শুরু হতো।

তারা সব সময় ট্রাক্টরে টানা গাড়িদুটো অপছন্দ করত এবং মোটরগাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। সে কাজটা অবশ্য বেশ কঠিন ছিল। কারণ ট্রলিবাসটা ডাউনটাউনের উদ্দেশে ওঠা শ্রমিকদের ভিড়ে ঠাসা থাকত এবং তাদের নিজেদের কাঁধের স্কুল ব্যাগের কারণে সামনে এগুনো যেত না।

গাড়ি কিছুদূর এগিয়ে গেলে সামনের যাত্রীরা নেমে গেলে সে জায়গা দখল করার চেষ্টা করত তারা যাতে চালকের লোহার এবং কাচের ক্যাব এবং উঁচু সরু নিয়ন্ত্রকের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া যায়। সেটার সমতল মাথার উপরে চক্রাকারে ঘুরত ইস্পাতের তৈরি খাঁজ ওয়ালা একটা গিয়ারশিফ্টের হাতল।। সেটা দিয়ে গিয়ারের নিষ্ক্রিয় অবস্থা বোঝাত। আর তিনটা চিহ্ন দিয়ে গিয়ারের সামনের গতি বুঝাত এবং পঞ্চমটা দিয়ে বুঝাত উল্টো গিয়ার। মোটরগাড়ির লোকদের শুধু গিয়ারশিফ্ট ছুঁয়ে কাজ করার অধিকার ছিল বলে বাচ্চাদের চোখে তারা ছিল নরদেবতার মতো। এই মর্যাদা তারা বেশ উপভোগ করত বোঝা যেত। আর মাথার উপরে চিহ্নের সাহায্যে বুঝিয়ে দেওয়া হতো, তাদের সঙ্গে বাচ্চাদের কথা বলা নিষেধ। তাদের পোশাক ছিল প্রায় সামরিক কায়দার— চামড়ার চুরাওয়ালা ক্যাপ মাথায়, শুধু আরব চালকরা পরত কিনারাবিহীন টুপি। তাদের চেহারা অনুযায়ী বাচ্চারা তাদের আলাদা করে দেখত। বাচ্চারা তাদের জন্য বিভিন্ন নাম ব্যবহার করত— হালকা কাঁধ ওয়ালা নেতৃস্থানীয় একজনকে তারা বলত ‘সুন্দর ছোট মিয়া’। মোটাসোটা গঠনের আরেকজন আরব চালকের নাম ছিল ‘সাদা ভালুক’, সে সব সময় শুধু সামনের দিকেই তাকিয়ে থাকত। আরেকজন ইতালীয় চালক ছিল—তার ম্যাড়মেড়ে মুখমণ্ডল জুড়ে স্বচ্ছ বলতে ছিল একজোড়া চোখ। সব সময় গিয়ারশিফ্টের উপর ঝুঁকে থাকত সে। তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জন্তুর বন্ধু’। কারণ একবার সে একটা অন্যমনস্ক কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে ট্রলিবাসটাকে প্রায় থামিয়ে দিয়েছিল। আরেকবার একটা কুকুর উদাসীনভাবে রেইলের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছিল দেখে সেটাকেও বাঁচিয়ে দিয়েছিল সে। ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কসের মতো গোঁফ এবং ছোটখাটো মুখওয়ালা লম্বা আরেকজনের নাম দিয়েছিল তারা ‘জোরো’।

জন্তুর বন্ধুকে তারা সত্যিকার অর্থে হৃদয় দিয়ে পছন্দ করত। তবে তাদের প্রশংসা ছিল বাদামী ভালুকের জন্য। কারণ পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে নির্বিকার চিত্তে তার শব্দ করে চলা গাড়িটা ঝড়ের গতিতে চালাত সে। রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার কমতি দেখলেই বিশাল বাম হাত দিয়ে কাঠের হাতলটা ধরে থার্ড গিয়ারে ঠেলে দিত। ডান হাত গিয়ারবক্সের ডান পাশে বিরাট ব্রেকহুইলের উপর পাহারারত থাকত। গিয়ারশিফ্ট নিষ্ক্রিয় রেখে চাকায় কয়েকবার জোরে চাপ দিয়ে এমনভাবে চালাত যে গাড়ি যেন লাফ দিয়ে দিয়ে এগিয়ে যেত। কোনো বাঁক কিংবা সুইচের উপরে গাড়ির ছাদের খাড়া স্প্রিংয়ের সঙ্গে লাগানো ট্রলিপোল মাথার উপরের বৈদ্যুতিক তার পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত। একটা ফাঁকা প্রান্তের সঙ্গে লাগানো ছোট একটা চাকা, সে চাকার সঙ্গে সংযোগ থাকত তারের। তারে বাড়ি লেগে গাড়ি সজোরে ঝাঁকি খেয়ে থেমে গেলে ফুলকি ছুটত। কনডাক্টার গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে লম্বা ট্রলিক্যাচার তার তুলে ট্রলিপোলের প্রান্তের সঙ্গে সংযোগ করে দিত। গাড়ির পেছনের দিকে একটা লোহার বাক্স থেকে তার প্যাঁচ খুলে একাই বের হয়ে আসত। ইস্পাতের স্প্রিংয়ের শক্তি সবলে ঠেকিয়ে ট্রলিপোল আস্তে আস্তে উপরের দিকে তুলে আনত সে। তারপর তার আরেকবার চাকার প্রান্তের ফাঁকায় ঢুকিয়ে দিত। এসব কাজ করত সে ছুটন্ত ফুলকির মধ্যেই। গাড়ির বাইরের দিকে ঝুঁকে কিংবা শীতকাল হলে জানালার সঙ্গে নাক লাগিয়ে বাচ্চারা কনডাক্টারের কাজকর্ম দেখত। ঠিকমতো শেষ হয়ে গেলে চালকের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ থাকলেও তারা ফিসফিস করে তাকে জানানোর চেষ্টা করত। তবে নিয়মানুযায়ী কনডাক্টর তাকে সংকেত না দেওয়া পর্যন্ত বাদামী ভালুক নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে থাকত। গাড়ির পেছনে ঝুলন্ত দড়ি তুলে এবং সামনের দিকের একটা বেল বাজিয়ে কনডাক্টার তাকে সংকেত দিত। আর কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই তখন বাদামী ভালুক গাড়িটা সামনের দিকে সচল করে দিত। গাড়ির সামনের দিকে ভিড় করে বাচ্চারা গাড়ির নিচে এবং উপর দিয়ে ধাতব লাইনগুলোর পেছনের দিকে দ্রুত সরে যাওয়া দেখত। বৃষ্টি কিংবা ঝলমলে রোদের সকালে ট্রলিবাস যখন দ্রুত গতিতে চলার সময় কোনো ঘোড়ায়টানা গাড়ি পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেত কিংবা দ্রুত ধাবমান কোনো অটোমোবাইলের সঙ্গে কিছুটা সময় সমানতালে এগিয়ে যেত তখন তারা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ত। প্রতি স্টপেজে ট্রলিবাস আরব এবং ফরাসি শ্রমিকদের নামাতে থাকত। ডাউনটাউনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে যাত্রীদের কারো কারো পোশাকের কেতাও জেল্লাদার হতো। আবার বেলের শব্দে যাত্রা শুরু হতো। শহরের আধাবৃত্তাকার এলাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এভাবেই তাদের ভ্রমণ চলত। তারপর হঠাৎ চোখের সামনে চলে আসত উপসাগরের বিশাল ফাঁকা এলাকার সামনের বন্দরের ছবি। উপসাগরের বিস্তৃতি ছিল দিগন্তের কাছে অবস্থিত নীল পাহাড়ের গা পর্যন্ত। আরও তিন স্টপেজের পর লাইনের শেষে ডু গুভার্নমেন্টের কাছে এলে বাচ্চারা নেমে পড়ত। ওই চত্বরের তিন দিকে গাছপালা আর খিলানঢাকা দালানকোঠা; সামনের খোলা মুখের দিকে সাদা মসজিদ এবং তার উপরেই বন্দরের খোলা পরিসর। চত্বরের মাঝখানে সামনের দুপা উপরে তোলা ঘোড়ার উপরে অরলিন্সের ডিউকের মূর্তি। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির নিচে সবটাই তাম্রমলে ঢাকা পড়ে যেত। বৃষ্টির সময় কালো হয়ে যাওয়া তামার গা বেয়ে জল গড়াত। বাচ্চারা ঘোড়াটার ওই চেহারা দেখে খুব সঙ্গত একটা গল্প ফেদে বসত। ভাস্কর মশাই নিশ্চয়ই ঘোড়ার অন্যান্য সাজসরঞ্জামের সঙ্গে লাগাম পড়াতে ভুলে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বৃষ্টির পানি ঘোড়টার লেজ বেয়ে অবিরত ঘের দেওয়া ছোট বাগানের দিকে গড়াত। চত্বরের বাকি অংশ জুড়ে সবখানে পাকা করার সুরকি ছিটানো ছিল। বাস থেকে নেমে লাফাতে লাফাতে ওইসব সুরকির টুকরো তুলে ছুড়তে ছুড়তে তারা বাব আজুনের দিকে পথ ধরত। পাঁচ মিনিট হাঁটলেই লিসে পেয়ে যেত তারা।

চলবে……

আগের পর্বগুলো পড়ুন

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

 

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন