মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান

বাব আজুন ছিল মূলত একটা সরু রাস্তা। বিশাল গোলাকার সব থামের উপর তৈরি খিলানগুলোর কারণে রাস্তাটা আরও সরু হয়ে গিয়েছিল। সে কারণে অন্য কোম্পানি চালিত ট্রলিগুলো কোনো রকমে চলতে পারত মাত্র। ওই ট্রলিগুলোই শহরের উপরের এলাকার সঙ্গে ওই এলাকাটার সংযোগ তৈরি করেছিল। গরমের দিনে মাথার উপরের ঘন নীলাকাশ রাস্তার উপরে যেন সীসার বাষ্প ঝরাত। অবশ্য খিলানের ছায়ার নিচে কিছুটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করত। বৃষ্টি-বাদলার দিনে গোটা রাস্তা চকচকে ভেজা পাথরের গভীর পরিখার আকার ধারণ করত।

খিলানগুলোর নিচে বসত সারি সারি দোকানপাট। পাইকারি টেক্সটাইলের দোকান, দোকানের চেহারায় থাকত গাঢ় রঙের প্রলেপ। ছাউনির নিচে দোকানের হালকা রঙের কাপড়ের স্তুপগুলো হালকা জ্বলজ্বল করত। মুদির দোকান থেকে লবঙ্গ এবং কফির সুবাস ছড়াত। ছোট ছোট দোকানগুলোতে আরবের লোকেরা তেল আর মধু চোয়ানো পেস্ট্রি বিক্রি করত। অন্ধকারের গভীরে বসানো ক্যাফেগুলোতে কফির পাত্রে তরল ঢালত তারা। সন্ধ্যার সময় ঝলমলে আলোর বাতিতে ভরে উঠত জায়গাটা। লোকজনের কলকাকলিতে ভরা জায়গাটাতে মানুষজন মেঝের ধূলোবালি মাড়িয়ে পানশালায় ঢুকত। সেখানে পাওয়া যেত গ্লাসভরা বর্ণিল পানীয়, তশতরিতে থাকত বিচিত্র রঙের ফুল, হেরিংমাছ, টুকরো করে কাটা শাক, জলপাই, ভাজা পোনামাছ, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি। এরপর আরও সব দোকান ছিল। সেগুলোতে প্রাচ্যের অদ্ভূতদর্শন সব মনোহারি দ্রব্য বেচাকেনা হতো। জানালার পাশে ঘূর্ণায়মান তাকে পোস্টকার্ডের সঙ্গে লাগিয়ে বিক্রি করা হতো সেগুলো। ক্যাটকেটে উজ্জ্বল রঙের মুরীয় দোপাট্টাও বিক্রি হতো সেখানে।

বাজারগুলোর একটা ছিল খিলানগুলোর মাঝখানে। সেটা চালাত একটা মোটা লোক। সে সব সময় জানালার পেছনে, খিলানের ছায়ায় অথবা বিদ্যুতের আলোর নিচে বসে থাকত। চকচকে চোখের লোকটা স্থূল হলেও তার গায়ের রং ছিল পাথরের নিচে চাপা পড়া ঘাসের মতো কিংবা বড় গাছের পুরনো গোড়ার মতো ফ্যাকাশে ধরনের। তার চেহারার সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো, তার মাথাটা পুরোপুরি টাক। তার মাথার ওই চেহারার কারণে লিসের ছাত্ররা তার ছদ্মনাম দিয়েছিল ‘মাছিদের স্কেটিং মেঝে’ এবং ‘মশাদের সাইকেল দৌড়ের ট্র্যাক’।

তারা বলত, মশা-মাছিগুলো তার মাথার খুলির ফাঁকা ময়দানের উপরে দৌড়ের সময় উল্টো ঘুরতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলত। সন্ধ্যার সময় ছাত্ররা তার দোকানের সামনে দিয়ে নকলপটু পাখিদের ঝাঁকের মতো এদিক ওদিক দ্রুত ছুটে যাওয়ার সময় তার ছদ্মনাম উচ্চারণ করতে করতে মশা-মাছিদের মতো জ্্্্্জ্্্্্জ্্জ্্্্্জ্্্জ্্্্্জ্্্্্জ্্্্্জ্্ শব্দ করত। লোকটা তাদের উদ্দেশে গালিগালাজ ঝাড়ত। মাঝে মধ্যে তাদেরকে ধাওয়া করার চেষ্টাও করত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরতে না পেরে রণে ভঙ্গ দিত। তারপর এক সময় লোকটা তাদের চিৎকার চেঁচামেচি আর উপহাসের বর্ষণের মুখে চুপ হয়ে গেলে এবং বাচ্চারা একদম তার মুখের উপর এসে উৎপাত করা পর্যন্ত কিছুই বলত না। তারপর এক সন্ধ্যায় কয়েকজন আরবলোক থামের আড়াল থেকে বের হয়ে এসে বাচ্চাদের ধাওয়া করে বসল। লোকটা সম্ভবত ওই লোকগুলোকে ভাড়া করে বাচ্চাদের দিকে লেলিয়ে দিয়েছিল। সেদিন জ্যাক এবং পিয়েরে শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছিল তাদের দ্রুত গতির কারণে। মাথার পেছনে একটা চাটি খেয়ে মুহূর্তখানেকের মধ্যে বিস্ময় কাটিয়ে উঠে ছুট লাগিয়েছিল জ্যাক। কিন্তু তাদের স্কুলের দুতিনজন বন্ধু ধরা পড়ে আচ্ছামতো পিটুনি খেয়েছিল। ছাত্ররা পরিকল্পনা করল, তারা দোকান লুটপাট করবে এবং মালিককে থেঁতলে দেবে। অবশ্য তারা তাদের কুপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। তাদের শিকারকে বরং জ্বালাতন করাই ছেড়ে দিল তারা। দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার অন্য পাশ দিয়ে দেবদূত হয়ে চলাফেরা করতে লাগল তারা।

জ্যাক একদিন তিক্তমুখে বলল, আমরা আসলে এমনিতেই ভড়কে গিয়েছিলাম।
পিয়েরে বলল, দোষ তো আসলে আমাদেরই ছিল।
জ্যাক বলল, দোষ আমাদের ছিল বলেই মারের ভয়ে সটকে পড়লাম।

অনেক দিন পরে যখন সে বুঝতে পেরেছে, মানুষ সত্যকে মেনে নেওয়ার ভান করে এবং বাধ্য না হলে হার মানে না তখন ওই ঘটনার কথা তার মনে পড়ে যায়। বাব আজুন পর্যন্ত যে রাস্তাটা চলে গেছে তার মাঝখানে রাস্তাটা বেশ চওড়া হয়ে গেছে এবং খিলানের একপাশে সেন্ট ভিক্টইরের গির্জার জন্য যেন জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটা মসজিদের চত্বর জুড়ে ছিল গির্জাটা। গির্জাটাকে মনে হতো পূজা অর্পণের বিশেষ কোনো জায়গা। সব সময় ফুলের সমারোহ এবং সাদা রং করা বাইরের পাশটা বিচিত্র রকমের খোদাই শোভিত। বাচ্চারা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখত, ফুলের কারবারিরা খোলা ফুটপাথে দোকান সাজিয়ে বসেছে। মৌসুম অনুসারে তারা গোলাপফুল, শ্বেতদুর্বার ফুল, তারাফুল, কার্নেশন ইত্যাদি ফুল দিয়ে লম্বা টিনের কেনেস্তারা সাজিয়ে রেখেছে। সব সময় ফুলের উপরে পানি ছিটানোর কারণে কেনেস্তারাগুলোর গায়ে মরিচা পড়েছে। রাস্তার ওই একই পাশে একটা ছোট দোকান ছিল। সেখানে ফলের টুকরো, ডিম এবং তেলের মধ্যে তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি করত আরবের লোকেরা। দোকানের পরিসর খুব ছোট ছিল। এক সঙ্গে তিন জন মানুষও ধারণ করার মতো নয়। এক কোণায় একটা চুলা তৈরি করা হয়েছিল। চুলার চারপাশে নীল এবং সাদা সব মাটির পাত্র সাজানো ছিল। মাঝখানে জ্বলত টগবগে ফুটন্ত তেলের বেসিন। চুলার পাাশে বাবু মেরে বসে কাজ করত একজন অদ্ভূতদর্শন লোক, পরনে আরব দেশের লোকদের মতোই পাজামা। গরমের দিনে এবং দিনের বেলার তাপের সময় গা অর্ধেক খোলা। অন্য সময় ইউরোপীয় জ্যাকেট পরত। গলার কাছে সেপটিপিন দিয়ে আটকানো। তার ন্যাড়া মাথা এবং পাতলা মুখের কারণে তাকে মনে হতো চশমা-ছাড়া গান্ধী। হাতে একটা চামচের মতো লাল ছাকনি নিয়ে সে ফুটন্ত তেলের মধ্যে ফলের টুকরোগুলোর বাদামি হয়ে যাওয়া পরোখ করত। পিঠার বাইরের পাশ সোনালি এবং ভেতরের লেই আলু ভাজার মতো স্বচ্ছ এবং মচমচে হয়ে গেলে সে ছাকনি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে পিঠাগুলো তেলের বাইরে তুলে এনে বেসিনের উপরে ছাকনি তিন চার বার ঝাঁকুনি দিয়ে কাচঘেরা একটা তাকে সারিবদ্ধ করে রাখত। তাকের একপাশে মধু জড়ানো লম্বা পিঠা রাখত। আরেক পাশে চ্যাপটা গোলাকার সাধারণ পিঠা রাখত। পিয়েরে এবং জ্যাক এই পিঠার জন্য পাগল ছিল। কালে ভদ্রে তাদের কারো কাছে সামান্য পয়সা থাকলে দোকানের সামনে একটুখানি থেমে সাধারণ পিঠাগুলোর দু-একটা কিনে নিত। দোকানি যে কাগজে করে পিঠা ধরিয়ে দিত সেটা তেলে ভিজে খুব তাড়াতাড়িই স্বচ্ছ হয়ে উঠত। কখনো লম্বা পিঠাও নিয়েছে তারা। তখন দোকানি চুলার পাশে একটা পাত্রের ভেতর রাখা মধুর মধ্যে পিঠাগুলো চুবিয়ে দিত। পিঠার ভাঙা টুকরোগুলো মধুর পাত্রে ভাসতে থাকত। এই অপূর্ব স্বাদের পিঠা হাতে লিসের দিকে দৌড়ে যেতে যেতে পিঠায় কামড় দিতে থাকত তারা। দৌড়ানোর সময় তাদের মাথা এবং মুখ থাকত সামনের দিকে ঝুঁকে যাতে পিঠার রস পড়ে জামা কাপড় নষ্ট না হয়ে যায়। স্কুল খোলার পর পরই প্রতি বছর সেইন্ট ভিক্টইরের গির্জার সামনে আবাবিল পাখিদের বিদায় পর্ব অনুষ্ঠিত হতো। বিদ্যুতের তার কিংবা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তার ব্যবহার করা হতো ট্রলিবাস চালানোর জন্য। তবে বাস চলা বন্ধ থাকার সময়ও রাস্তাটা যেখানে প্রশস্ত হয়েছে সেখানকার তার নামানো হতো না।

আবাবিল পাখিগুলো পানির পাশের বীথিকার উপর দিয়ে উড়ে এসে লিসের সামনের চত্বরে কিংবা দারিদ্র পীড়িত এলাকার আকাশে চলে আসত। কখনো কখনো ডুমুর ফলের উপর কামড় দিতে দিতে কান ঝালাপালা করা কিচির মিচির শব্দে চারপাশ ভরিয়ে তুলত। দলের কোনো কোনো পাখির মুখে থাকত উড়ন্ত ময়লার টুকরো, কোনোটার মুখে জৈব সারের দলা থাকত। ওখানে কখনো তুষার পড়ত না। গরমের মাসগুলো শেষ হলে শীতের ভাবটা একটু একটু বোঝা যেত। যা হোক, শীতের শুরুতে পাখিগুলো একটা একটা করে রিউ বাব আজুনের করিডোরে এসে হাজির হতো। ট্রলিবাস লক্ষ করে নিচের দিকে উড়ে আসত। তারপর দিক পরিবর্তন করে আবার বাড়ি ঘরের উপরের আকাশের দিকে উড়ে যেত। একবার হঠাৎ করে হাজারে হাজারে আবাবিল পাখি সেইন্ট ভিক্টইরের চত্বরে এবং ঘরবাড়ির উপরে এসে জমায়েত হতে লাগল। একটার সঙ্গে আরেকটার গা ঘেঁষে বসা, সাদা আর কালো মেশানো রঙের ঘাড়ের উপরের মাথা দোলানো, লেজ নাচানো, নতুন কারো জন্য জায়গা করে দেওয়ার জন্য আস্তে আস্তে পা সরানো ইত্যাদি তাদের সাধারণ দৃশ্যের মধ্যে পড়তে লাগল। ফুটপাত ঢেকে গেল তাদের ছাইরঙা বিষ্ঠায়। সবগুলো একই সুরে কিচির মিচির করত। মাঝে মধ্যে হঠাৎ বিরতি দিত কককক শব্দে। মনে হতো, তাদের মধ্যে কোনো গোপন কথাবার্তা চলছে। সারাটা সকাল জুড়ে চলত এরকম।

বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কান ঝালাপালা করে দিত তাদের কলরব। সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের কলরব বাড়তেই থাকত। তখন ছেলেরা বাড়ি ফেরার ট্রলিবাস ধরার জন্য বের হতো। সে সময় হঠাৎ করে সব কলরব থেমে যেত কোনো এক আজানা নির্দেশে। হাজার হাজার ঘুমন্ত পাখি তাদের ছোট মাথাগুলো নিচু করে সাদা কালো লেজ দোলাত। আরও দুতিন দিন সেহেল কিংবা তার চেয়েও দূরবর্তী জায়গা থেকে উড়ে আসত পালকওয়ালা দল বেধে। আগে যারা এসেছে তাদের মধ্যে জায়গা করে নিত নতুনগুলো। এলাকার রাস্তার দুপাশের সব বাড়ি ঘরের কার্নিসে এসে জড়ো হতো পাখিগুলো। পথচারীদের কানে তালা লাগিয়ে দিত উচ্চ কলরবে। তারপর হঠাৎ কোনো সকালে দেখা যেত, রাস্তার আশপাশের এলাকা পুরোপুরি ফাঁকা। ভোর হওয়ার আগে পাখিগুলো দক্ষিণের দিকে কোথাও উড়ে গেছে। বাচ্চাদের জন্য সে সময়টা ছিল শীতের শুরু। কারণ সন্ধ্যার ঊষ্ণ আকাশে পাখিদের তীক্ষ্ণ কলরব ছাড়া কোনো গ্রীষ্ম তারা দেখেনি।

চলবে…

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন