মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান

দিনের শেষে আলো আর পৃথিবী গ্রাসকারী অন্ধকার নেমে এলে লিসে থেকে ফিরে আসার সময় মৃত্যুর মতো অজানা ভয় জ্যাকের নিত্যসঙ্গী হতো। তার নানি ঝুলন্ত বাতিটা না জ্বালানো পর্যন্ত ওই অন্ধকার কিছুতেই শেষ হতো না। কাচের চিমনি খাবার টেবিলের ওপর নামিয়ে পায়ের আঙুলের ওপর শরীরের ভর রেখে একটুখানি উঁচু হয়ে টেবিলের কোণায় উরু ঠেকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে মাথা ওপরের দিকে তুলে ছাউনির নিচের বার্নার দেখতেন নানি।

এক হাতে বাতির নিচের দস্তার চাবি ধরে আরেক হাতে জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি দিয়ে সলিতার পোড়া অংশ খসে পড়ে উজ্জ্বল আলো না জ্বলা পর্যন্ত ঘষা দিতে থাকতেন। তারপর তিনি চিমনি ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিতেন। দস্তার প্রকোষ্ঠের খাঁজকাটা পটির সঙ্গে চিমনির ঘষা লেগে চিক চিক শব্দ উঠত। চিমনিটা ওখানে বসিয়ে দিয়ে তিনি আবার টেবিলের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একহাত ওপরের দিকে তুলে সলিতা ঠিক করে দিতেন। নিচে টেবিলের ওপরে কড়া হলুদ আলো পড়ত নিখুঁত গোলাকার হয়ে। টেবিলক্লথের ওপরে আলোর প্রতিফলন পড়ে নানির মুখের ওপর এবং টেবিলের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে নানির কাজ পর্যবেক্ষণরত জ্যাকের মুখের ওপর পড়ত। আলো যত বেশি উজ্জ্বল হতো তার মনটাও তত হালকা হয়ে আসত।

নানি যখন তাকে অন্ধকার উঠোন থেকে মুরগি আনার আদেশ দিতেন ওই একই রকম ভয় সে জয় করার চেষ্টা করত নিজের ভেতরের অহংকার অথবা গর্বের দ্বারা। এরকম দায়িত্ব পালন করতে হতো ইস্টার কিংবা বড় দিনের আগের রাতে। কিংবা আর্থিক দিক থেকে অবস্থাপন্ন কোনো আত্মীয়ের আগমন উপলক্ষে। তাদের চোখে পরিবারের আসল অবস্থা প্রকাশ না করে বরং মার্জিত ও শালীন অবস্থা প্রকাশ করার চেষ্টা থাকত। কাজটা তাকে করতে হতো সাধারণত রাতের বেলা। জ্যাকের লিসেতে পড়ার প্রথম দিকে নানি একবার যোসেফিন মামাকে বলেছিলেন, মামার রবিবারের ব্যবসায়িক অভিযানের সময় যেন নানির জন্য কয়েকটা আরবের মুরগি এনে দেন।

আর্নেস্ট মামাকে ধরে নানি উঠোনের কোণার দিকে প্যাঁচপেঁচে কাদা মাটির ওপরে একটা মুরগির খাঁচা তৈরি করে নিলেন। নানি সেখানে পাঁচ-ছয়টা মুরগি পুষতেন। মুরগিগুলো নিয়মিত ডিম দিত এবং মাঝে মাঝে এরকম অবস্থায় প্রাণ দিয়ে দিত। প্রথমবার যেদিন নানি একটা মুরগির প্রাণদণ্ড কার্যকর করতে চেয়েছিলেন সেদিন পরিবারের সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছিল। তিনি তার বড় নাতিকে হুকুম করলেন দণ্ডিতকে নিয়ে আসতে। কিন্তু লুই (জ্যাকের বড় ভাইকে কখনও কখনও হেনরি বলা হতো, কখনও কখনও লুই বলে ডাকা হতো) সোজাসুজি বলে ফেলল, সে পারবে না। তার ভয় লাগে। নানি এখনকার সময়ের আদুরে বাচ্চাদের প্রতি বিদ্রুপ করলেন এবং উল্লেখ করলেন, তার সময়ের বাচ্চারা বনে জঙ্গলে যেতে ভয় পেত না। তারা কোনো কিছুতেই ভয় পেত না। তিনি জ্যাকের উদ্দেশে বললেন, ওসব বাচ্চাদের চেয়ে জ্যাক অনেক সাহসী। যা, তুই গিয়ে নিয়ে আয়। আসলে জ্যাক অন্য কারো চেয়ে বেশি সাহসী ছিল সেটা সত্যি নয়। তবে হুকুম একবার হয়ে গেছে মানে সে আর না করতে পারবে না। তাকে যেতেই হবে। যা হোক, সে রাতেই প্রথম জ্যাক মুরগি আনতে গেল। অন্ধকারে সিঁড়ি ভেঙে বাম দিকে ঘুরে সব সময় অন্ধকারে থাকা হলরুম পার হয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে উঠোনের দিকের দরজাটা খুলে ফেলল। হলরুমের অন্ধকার বাইরের রাতের অন্ধকারের চেয়ে বেশি ঘন। সেজন্য উঠোনে নামার জন্য সবুজ হয়ে যাওয়া চারটে সিঁড়ি বরং আবছা হলেও দেখা যাচ্ছিল। ডান দিকের নাপিত পরিবার এবং আরব পরিবারের ঘরটার খড়খড়ি দিয়ে দুর্বল আলো এসে পড়েছে উঠোনে। উঠোনের এই পাশ থেকেই অন্য প্রান্তে মাটিতে কিংবা নিজেদের বিষ্ঠার স্তম্ভের ওপর ঘুমিয়ে থাকা মুরগিগুলোর ছোপ ছোপ রং আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। মুরগির খাঁচার কাছে পৌঁছে জ্যাক জাল ঘেরা আচ্ছাদনের ওপর হাত রাখতেই মৃদু কককক শব্দ শুরু হয়ে গেল। তখনই তার নাকের সামনে ঝাপটা মারল বিষ্ঠা থেকে বের হয়ে আসা বমি উদ্রেককারী উষ্ণ দুর্গন্ধ। মাটি লাগোয়া জাফরির দরজা খুলে নিচু হয়ে ভেতরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই ভেতরের নরম এবং আঠালো পদার্থের ওপর হাত পড়ল। তখনই জ্যাক ছিটকে পিছিয়ে এসে হাত বের করে নিয়ে এল। দোদুল্যমান খাঁচাটায় মুরগিগুলোর পাখা ঝাঁপটানোর আকস্মিক শব্দ, দৌড়াদৌড়ি আর সোরগোলের কারণে জ্যাক চমকে ওঠে ভয়ে। তবু তাকে মন শক্ত করতেই হবে। কারণ তাকে অন্যদের থেকে বেশি সাহসী বলে পদবী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই আবর্জনাময় অন্ধকার জায়গার মুরগিগুলোর ভেতর জেগে ওঠা হৈচৈ আর উত্তেজনায় জ্যাক ত্রস্ত হয়ে পড়ে। তার পাকস্থলী উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। মাথার ওপরের পরিষ্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। আকাশজুড়ে পরিচ্ছন্ন প্রশান্ত তারকারাজি। তারপর এগিয়ে গিয়ে খাঁচার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে নাগালের মধ্যে প্রথম যে পাটা ধরতে পারে সেটা ধরেই একটা সন্ত্রস্ত মুরগি ছোট দরজার কাছে টেনে নিয়ে আসে। আরেক হাত দিয়ে মুরগির আরেক পা ধরে মুরগিটা খাঁচার বাইরে নিয়ে আসে। দরজার পাল্লার সঙ্গে ঘষা লেগে ইতোমধ্যে মুরগিটার কয়েকটা পালক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ততক্ষণে খাঁচার প্রায় সবগুলো মুরগির ভীত-সন্ত্রস্ত কককক শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। পাশের ঘরের বৃদ্ধ আরব লোকটা আলো নিয়ে সতর্ক অবস্থায় বের হয়ে এসে জ্যাককে দেখতে পায় এবং জ্যাক তাকে দেখে নিষ্পৃহ কণ্ঠে বলে ওঠে, আমি, এম তাহার। নানির জন্য একটা মুরগি নিতে এসেছি।

লোকটা বলে, ও তুমি! আমি ভাবলাম চোর ডাকাত কি না। বলেই লোকটা ভেতরে চলে যায়। উঠোন আবার অন্ধকারে ডুবে যায়। এবার জ্যাক দৌড়ানো শুরু করে, হাতের মধ্যে মুরগিটা ছটফট করতে থাকে। হলরুমের দেয়াল আর সিঁড়ির ধাপের সঙ্গে বাড়ি খেতে থাকে। হাতের মধ্যে মুরগিটার ঠাণ্ডা, মোটা এবং ক্রমহ্রস্ব পাদুটো নিয়ে জ্যাক আরও দ্রুত দৌড়াতে থাকে। হলরুম পার হয়ে বীরের মতো ভঙ্গিতে ঢুকে পড়ে খাবার ঘরে। দরজায় দাঁড়ানো জ্যাকের চুল উস্কোখুস্কো, উঠোনের শ্যাওলা লেগে হাঁটুর কাছে সবুজ হয়ে গেছে, মুরগিটাকে যতদূর সম্ভব নিজের শরীর থেকে দূরে ধরে আছে। তার মুখটা ভয়ে ফ্যাকাশে। জ্যাকের বড় ভাইকে শুনিয়ে নানি বললেন, দ্যাখ, ও তোর চেয়ে ছোট। কিন্তু ওর সাহসের প্রমাণ দিয়ে তোকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। নানি মুরগিটা নিজের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরার আগ পর্যন্ত নিজের গর্বে নিজেকে ভালো করে প্রদর্শনের চেষ্টা করতে থাকে জ্যাক। মুরগিটা এবার হঠাৎ শান্ত হয়ে যায়। মনে হয় বুঝতে পারে, এবার আর কোনো রক্ষা নেই। নির্মম এবং সর্বশেষ হাতে এসে পড়েছে বলে। জ্যাকের ভাই নিরবে ফলার খেতে থাকে। মাঝে দু-একবার জ্যাকের দিকে তাকায় শুধু ভেংচি কাটার জন্য। তাতে জ্যাকের গর্ব এবং সন্তুষ্টি আরও বেড়ে যায়। তবে সেই সš‘ষ্টি খুব সংক্ষিপ্ত হয়। নাতিদের মধ্যে সাহসী হিসেবে একজনকে পাওয়া গেছে দেখে নানি জ্যাককে রান্না ঘরে ডাকেন মুরগিটা জবাই করার কাজে তার সঙ্গে হাত লাগাতে। তিনি ততক্ষণে ঢিলাঢালা এবং বড় একটা নীল রঙের অ্যাপ্রোন পরে নিয়েছেন। মুরগিটা এক হাতে শক্ত করে ধরে আরেক হাত দিয়ে মেঝেতে একটা মাটির গামলা রাখলেন। তার হাতে রান্নাঘরের একটা ছুরি। আর্নেস্ট মামা ওই ছুরিটাতে মাঝে মাঝে একটা লম্বা কালো পাথরের ওপর ঘষে ধার দিয়ে রাখেন। নানি জ্যাককে বললেন, ওই পাশে যা। জ্যাক রান্নাঘরের অপর প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালে নানি দরজার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়ালেন। মনে হলো, তিনি জ্যাকের এবং মুরগিটার পথ আটকে দাঁড়িয়েছেন। পেছনের দিকে সিঙ্ক আর বামপাশে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দুরু দুরু বুকে জ্যাক উৎসর্গকারীর সুনিশ্চিত নড়াচড়া দেখতে থাকে। একটা কাঠের টেবিলের ওপরে রাখা বাতিটার নিচে প্লেটটা এগিয়ে রাখলেন নানি। মুরগিটা মাটিতে শুইয়ে দিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে তিনি মুরগির পা শক্ত করে ধরলেন যাতে ঝাঁপটাঝাঁপটি করতে না পারে। তারপর বাম হাত দিয়ে মাথাটা ধরে প্লেটের ওপরে নিয়ে এলেন। ধারালো ছুরি দিয়ে পুরুষ মানুষের যে জায়গাটাতে কণ্ঠমণি থাকে মুরগিটার ঠিক সেখানে ধীরে ধীরে কাটতে লাগলেন। মুরগির মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ভয়ংকর শব্দের সঙ্গে ছুরি চালালেন। প্রবল বেগে আক্ষেপরত মুরগিটাকে তখনও তিনি খুব শক্ত করে ধরে রেখেছেন। টকটকে লাল রক্ত গড়িয়ে গামলাটাতে পড়ছে। রক্তের দিকে তাকিয়ে থাকতে জ্যাকের মনে হলো, তার নিজের রক্ত গড়িয়ে পড়ছে; ভয়ে পা কাঁপছে। নানি বললেন, গামলাটা সরিয়ে নিয়ে যা। জ্যাকের মনে হলো, নানি অনেক দীর্ঘ সময় পর কথা বলছেন। মুরগিটার রক্ত পড়া তখন বন্ধ হয়ে গেছে। জ্যাক গামলাটা সযত্নে টেবিলের ওপর রাখল। গামলার ভেতরের রক্ত ততক্ষণে গাঢ় লাল থেকে কিছুটা কালচে বর্ণ ধারণ করেছে। নানি মুরগিটা গামলার পাশে ধপাস করে রাখলেন। মুরগির পালক চকচকে বর্ণ হারিয়ে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। চোখের কোঁচকানো পাতা চোখের ওপরে বন্ধ হয়ে গেছে। জ্যাক মুরগিটার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে থাকে: পায়ের নখগুলো কুঁকড়ে জড়ো হয়ে আছে। মাথার ঝুঁটিটা বিবর্ণ হয়ে শিথিল হয়ে গেছে। জ্যাক বুঝতে পারে, মৃত্যু হলো এই। তারপর সে খাবার রুমে চলে গেল।

চলবে

আগের পর্বগুলো পড়ুন

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন