মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫ | ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান

প্রথমত তারা খিলানগুলোর নিচে এবং ভেতরের উঠোনে ঘুরে বেড়াত এবং কিছুক্ষণ পরেই রুটি এবং চকলেটটা খেয়ে ফেলত। কারণ রুটিটাকে মনে হতো ঝামেলাপূর্ণ একটা জিনিস আর চকলেটটা গলে তাদের আঙুলে জড়িয়ে যেত।

এরপর তারা যুদ্ধপ্রবীণদের মুখোমুখি হতো। কারও একটা পা নেই। কারও একটা হাত নেই। কেউ সাইকেলের চাকা লাগানো ছোট গাড়িতে বসা। কারও চেহারা বিকৃত ছিল না। কেউ অন্ধও ছিলেন না। শুধু পঙ্গু ছিলেন তারা। তাদের পোশাক আশাকও ছিল পরিচ্ছন্ন। কারও গলায় ঝুলত পদক। শার্টের, জ্যাকেটের কিংবা পাজামার হাতা গুটিয়ে সেপটিপিন দিয়ে অবশিষ্ট অদৃশ্য কোনো অঙ্গের সঙ্গে বাঁধা থাকত, দেখতে তেমন একটা ভয়াবহ ছিল না। সংখ্যায় তারা অনেক। প্রথম দিন তাদের দেখার পর যেটুকু বিস্ময়বোধ জেগেছিল পিয়েরে এবং জ্যাকের মনে সেটা কাটিয়ে ওঠার পর নতুন কিছু আবিষ্কার করলে জগৎ সম্পর্কিত তাদের নিজস্ব দৃষ্টিতেই যেমন করে দেখে থাকত তেমন করেই দেখেছে ওই মানুষগুলোকেও। পিয়েরের মা তাদের বুঝিয়েছেন, ওই মানুষগুলো যুদ্ধে তাদের হাত কিংবা পা হারিয়েছেন এবং যেহেতু তাদের জগতেরই একটা অংশ ছিল যুদ্ধ এবং যুদ্ধ সম্পর্কে তারা যেহেতু সব সময় শুনে এসেছেন সেহেতু তাদের চারপাশের সবকিছুতেই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে।

তাদের বুঝতে কোনো অসুবিধা হতো না, অন্য যেকোনো মানুষই যেকোনো সময় তাদের হাত কিংবা পা হারাতে পারে। অঙ্গ হারানোর সময়টাও অন্যান্য মুহূর্তের মতোই জীবনের একটা অংশ মাত্র। সে সব কারণেই পিয়েরে এবং জ্যাকের কাছে ওই পঙ্গু মানুষগুলোর জগৎ কখনও দুঃখের বলে মনে হয়নি। তাদের কেউ কেউ খুব চাপা এবং গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। তবে অনেকেই ছিলেন কম বয়সী, হাসিখুশি এমনকি নিজের পঙ্গুত্ব নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতেও দ্বিধা করতেন না। শ্বেতকায় সোনালি চুলওয়ালা গোলগাল মুখের এবং উজ্জ্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন ছিলেন। তাকে মাঝে মধ্যে লন্ড্রির আশেপাশে প্রায়ই ঘুর ঘুর করতে দেখেছে পিয়েরে এবং জ্যাক। তিনি তাদের বলতেন, আমার একটা পা আছে মাত্র। কিন্তু আমি তোমাদের পাছায় কষে লাথি মারতে পারি। ডান হাত চেয়ারের বেতের উপর রেখে বাম হাত দিয়ে খিলানের পাঁচিল ধরে বেয়ে উঠে তাদের দিকে সত্যিই পা ঝেড়ে লাথি দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি। তার ভঙ্গি দেখে পিয়েরে এবং জ্যাক হাসতে হাসতে যত দ্রুত সম্ভব তার নাগালের বাইরে দৌড়ে পালাত। মনে হতো, শুধু তারাই দৌড়ে পালাতে পারে। তারাই শুধু হাত পাগুলো ঠিক ঠিক ব্যবহার করতে পারে। একবার ফুটবল খেলতে গিয়ে জ্যাকের পা মচকে গেল। কয়েকদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে হলো। তখন তার মনে হলো, বৃহস্পতিবারে দেখা মানুষগুলো সারা জীবনই দৌড়াতে, ট্রলিবাস ধরতে কিংবা ফুটবলে লাথি মারতে অক্ষম থেকে যাবেন। সে নিজেও ওই কয়েকদিন তাদের মতো অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল। শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অলৌকিক কার্যকলাপের কথা তার মনের মধ্যে সদা জাগ্রত হয়ে রইল। অমূলক একটা ভয়ও মনের মধ্যে কাজ করতে লাগল। তার নিজেরও তো কখনও অঙ্গহানি ঘটতে পারে। পরে অবশ্য সে এসব ভুলে গেছে।

তারা প্রায়ই ঝাঁপবন্ধ খাবার ঘরের আশপাশে ঘুরে বেড়াত। বড় বড় টেবিল, গোটাটাই চকচকে দস্তায় মোড়ানো; রান্নাঘরে বড় বড় কড়াই এবং অন্যান্য বাসনপত্র। সেখান থেকে সব সময় রান্না করা মাংসের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ত। শেষ প্রান্তে তারা দেখত শোবার ঘর। সেখানে দুতিনটা বিছানা ধূসর রঙের চাদরে ঢাকা। পাশে কাঠের তৈরি আলমারি। সেখানে বেড়ানো হয়ে গেলে তারা বাগানের দিকে যাওয়ার কয়েকটা বহির্মুখী সিঁড়ি বেয়ে বের হয়ে পড়ত।

যুদ্ধাহত সৈনিকদের আশ্রমের চারপাশ ঘিরে রেখেছিল প্রায় পুরোপুরি অবহেলিত একটা পার্ক। বাসিন্দাদের কয়েকজন সেখানকার বাগানের ফুলতলা আর কয়েকটা গোলাপ ঝাড়ের দেখভাল করার স্বেচ্ছা দায়িত্ব পালন করতেন। বাগানে শুকনো নলখাগড়া আর আগাছার ঝোপঝাড় ঘেরা কিছু অংশে কয়েক পদের শাকসবজির গাছও ছিল। তবে এক সময় খুব চমৎকার চেহারা থাকলেও এখন আর এর বাইরে পার্কের অন্য কোনো জৌলুস নেই; পুরোপুরি প্রকৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। বড় বড় ইউক্যালিপটাস গাছ, তালগাছ, নারকেলগাছ, মাটির গভীরে শিকড় গাড়া মোটা কাণ্ড আর নিচু হয়ে পড়া ডালপালাসহ রাবার গাছ মিলে গোলকধাঁধার মতো পরিবেশ তৈরি করেছে। ঘন ছায়া আর গভীর গোপনীয়তা এখানে সেখানে। ঘনপাতাওয়ালা মোটা মোটা সাইপ্রেস গাছ, বড় বড় কমলাগাছ, খুব লম্বা গোলাপি আর সাদা লরেলগাছ মিলে এখানকার জনমানবহীন পায়েচলা পথটা ঢেকে দিয়েছে। এখানে সুরকির পথকে গিলে ফেলেছে কাদামাটির আস্তরণ। পথের প্রান্ত ছুঁয়ে আছে সুবাসি সিমরিঙ্গার, জুঁই, বেগুনি বনলতাফুল, প্যাশনফুল, মধুমতি ফুলের ঝোপঝাড়। তবে সেগুলোকে মাটির কাছে ছেয়ে ফেলেছে তিনপাতাওয়ালা ঘাস, ওক্সালিস এবং সব বুনো ঘাসের পুরু আস্তরণ। সুবাসভরা বনজঙ্গলের ভেতর হাঁটা, হামাগুড়ি দিয়ে চলা, ঘাসের সঙ্গে মুখ ছোঁয়ানো, ছুরি হাতে ঘাসের মধ্যে দিয়ে পথ করে চলা, গায়ে মুখে কাদামাটি আর পানি নিয়ে ফিরে আসা এসবই পরমানন্দের বিষয়।

তবে ভয়ঙ্কর বিষের উৎপাদনও তাদের বিকালের অভিযানের একটা বড় অংশ ছিল। পার্কের একটা দেয়ালের গা ঘেঁষা বেঞ্চের নিচে অ্যাসপিরিনের কৌটা, ওষুধের বয়ম, পুরনো কালির দোয়াত, গামলার ভাঙা টুকরো, ভাঙা কাপের টুকরো ইত্যাদি জড়ো করে তাদের গবেষণাগার তৈরি করেছিল পিয়েরে এবং জ্যাক। সবার চোখের আড়ালে, পার্কের সবচেয়ে ঘন ছায়াময় ওই জায়গাটাতে তারা রহস্যজনক উপচার তৈরি করত। তাদের প্রধান হাতিয়ার ছিল করবীগাছ। তারা লোকমুখে শুনেছিল করবী গাছের ছায়া খুব ভয়ঙ্কর; করবী গাছের ছায়ায় কোনো অর্বাচীন লোক ভুলবশত শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লে তার ঘুম কখনও ভাঙবে না। সুতরাং তারা করবী গাছের পাতা এবং ফুলের মৌসুমে করবী ফুল তুলে জড়ো করত অশুভ মণ্ড তৈরি করার জন্য। মণ্ডের চেহারা দেখলেই যে কোনো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ওই মণ্ড তারা খোলা জায়গায় রেখে দিত যাতে রংধনুর মতো বিচিত্র রং ধারণ করে। ওই সময় তাদের একজন দৌড়ে বোতল ভরে পানি আনতে যেত। তখন সাইপ্রেস গাছের কাণ্ডের ত্রিভূজাকৃতির মুখগুলো বের হতো। তারা জানত সাইপ্রেস গাছ হলো কবরস্থানের গাছ; এর সঙ্গেও ভয়ের ব্যাপার স্যাপার জড়িয়ে আছে। তারা মাটিতে পড়ে থাকা ফল নিত না। গাছ থেকে ফল তুলে জড়ো করত। নিচে পড়ে থাকা ফলগুলো ভয়ঙ্কর রকমের সুস্বাদু চেহারা লাভ করত বলে সেগুলো তারা জড়ো করত না। তারপর দুটো মণ্ডের জলের সঙ্গে মিশিয়ে আরও পাতলা করা হতো। একটা ময়লা রুমালে ছাঁকা হতো সেটা। তরল পদার্থটার চেহারা হতো গাঢ় সবুজ। কোনো বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় মানুষ যেমন সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে তেমনি তারাও তরল পদার্থটা নাড়াচাড়া করার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করত। তাদের কাছে জড়ো করা ওষুধের পাত্রগুলোর ভেতর তরল পদার্থটা ঢেলে মুখ আটকে দিত। তখনও খুব সাবধানে কাজ করত যাতে হাতে ছোঁয়া না লাগে। বাকি আর কোনো উপাদান থাকলে সেগুলোও অন্য কোনো ভয়াবহ বিষ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করত। সবগুলো এভাবে তৈরি হয়ে গেলে সতর্কতার সঙ্গে পাথরের তৈরি বেঞ্চের নিচে রেখে দিত সপ্তাহ খানেক যাতে বিষাক্ত পদার্থটা যথেষ্ট মাত্রায় গাঁজিয়ে উঠতে পারে এবং ভয়ঙ্কর চেহারা ধারণ করতে পারে। এরকম ভয়ঙ্কর কাজ শেষ হলে জ্যাক এবং পিয়েরে বেঞ্চের নিচে জড়ো করে রাখা পাত্রগুলোর সবুজাভ চেহারার দিকে নিবিষ্ট চিত্তে তাকিয়ে থাকত। কখনও কখনও পাত্রগুলো থেকে কটু গন্ধ নিত আনন্দের সঙ্গে। তারা অবশ্য সত্যি সত্যি কারও উপর প্রয়োগ করার জন্য ওই তরল পদার্থ তৈরি করত না। বরং শুধু কল্পনা করে দেখত তাদের ক্ষমতা কত দূর। তারা হিসাব নিকাশ করে দেখেছে, গোটা শহর জনশূন্য করে দেওয়ার মতো বিষ তারা উৎপাদন করে ফেলেছে। তবে তাদের কল্পনায় কখনও আসেনি, কোনো অপছন্দের সহপাঠী কিংবা শিক্ষককে ওই বিষ প্রয়োগে হত্যা করা যেতে পারে। আসলে তাদের অতি অপছন্দের কেউ ছিলই না। বড় হয়ে যে পৃথিবীতে বাস করতে হবে সেখানে তাদের কোনো কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে তেমন কেউ ছিল না।

চলবে…
আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

দ্য ফার্স্ট ম্যান:পর্ব-৪৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব-৪৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১১

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১০

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৯

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৮

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৭

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৬

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৫

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৪

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ৩

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ২

দ্য ফার্স্ট ম্যান: পর্ব ১

আরএ/

Header Ad
Header Ad

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই

ছবি: সংগৃহীত

আজ ১ জুলাই। দিনটি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান’-এর সূচনাদিবস হিসেবে। এক বছর আগে এই দিনে দেশের শিক্ষাঙ্গনে শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের নতুন ঢেউ, যা পরিণত হয়েছিল ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

“কোটা না মেধা, মেধা মেধা” স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে শিক্ষাঙ্গন। আন্দোলনকারীরা সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন, যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ৩৬ দিনের এক বিরল গণআন্দোলনে। ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও, ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধেই ১ জুলাই ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সেদিন শিক্ষার্থীরা কলাভবন, শ্যাডো, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ও হলগুলো ঘুরে ভিসিচত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে সমবেত হন। সেখানে তারা উত্থাপন করেন চার দফা দাবি: ১) ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বহাল রাখা, ২) মেধাভিত্তিক নিয়োগ অব্যাহত রাখা, ৩) কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, এবং ৪) কেবল সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্যই সুযোগ রাখার প্রস্তাব।

আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট বার্তা দেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। ২ জুলাই ঢাবি থেকে গণপদযাত্রা এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষাবর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৪ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারের উচিত আমাদের দাবির চূড়ান্ত আইনি সমাধান ঘোষণা করা।’ তিনি জানান, একইসাথে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজেও গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ওইদিন আন্দোলনে সরব ছিলেন। তারা জানিয়ে দেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে ভিজে বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেন। তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট—"১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, অথচ আজও আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। চাকরিতে কোটা নয়, নিয়োগ হতে হবে মেধার ভিত্তিতে।"

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে জাবির প্রধান ফটকে গিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় দিক বন্ধ রেখে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তারা—৪ জুলাইয়ের মধ্যে রায় বাতিল না হলে এই মহাসড়ক পুরোপুরি অবরোধ করে রাজধানী অচল করে দেওয়া হবে।

একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নেন। তারা রায়সাহেব বাজার হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিক ভবনের সামনে এসে সমবেত হন। সেখান থেকে তারা ঘোষণা দেন, প্রয়োজনে রক্ত দিয়েও কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ঘোষণা করেছে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ নামের দেশব্যাপী কর্মসূচি। আজ সকালে রংপুরের পীরগঞ্জে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে এ কর্মসূচি। এরপর গাইবান্ধা ও রংপুর সদরে পথসভায় অংশ নেবেন দলটির নেতারা।

অন্যদিকে বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির উদ্যোগে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এবং আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবার।

Header Ad
Header Ad

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাবে ৬৯ কোটি টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সোমবার (৩০ জুন) প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে সিন্ডিকেট এর ১০৪তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এই বাজেট উপস্থান করেন। একই সঙ্গে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের সরকারি বরাদ্দের ভিত্তিতে ৭৫ কোটি ৬৯ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট চাহিদা ৯২ কোটি ৭০ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা হলেও প্রায় ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার বাজেট ঘাটতি নিয়েই পাশ হয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট।

পাশকৃত বাজেটে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই খাতে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল দুই কোটি ৬১ লক্ষ টাকা। এছাড়া মোট বাজেটের ৬২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। পণ্য ও সেবা বাবদ সহায়তায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ, গবেষণা অনুদান খাতে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে মূলধন খাতে।

বাজেট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, '২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে বাজেট ছিল এক কোটি ১০ লক্ষ টাকা, সেখান হতে আজকের বাজেট বৃদ্ধি পেয়ে দাড়িয়েছে ৭৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। আশার কথা হলো গত বছরের তুলনায় নিজস্ব অর্থায়ন হ্রাস করে সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা গেছে। ভবিষ্যৎ-তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চাহিদা অনুযায়ী সর্বমোট বাজেট বৃদ্ধি পাবে।'

তিনি আরো বলেন, 'ইউজিসির বরাদ্দ চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। তবে সংশোধিত বাজেটে ইউজিসির সাথে আলোচনা করে বাজেট আরও বৃদ্ধি করা হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, 'সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রেখে বাজেট ব্যয় করা হবে।'

Header Ad
Header Ad

সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ খালি রয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২০২৪ সালের সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে বর্তমানে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১১১টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর বিপরীতে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৮৯১ জন কর্মরত আছেন; খালি আছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ২২০টি পদ।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭টি, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩৩৮টি, ২০২০ সালে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৫৫ এবং ২০২১ সালে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৬টি এবং ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৭৩ হাজার একটি পদ ফাঁকা ছিল।

এখন সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৫৭টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৯০ হাজার ৭৭৩ জন। ফাঁকা আছে ৬৮ হাজার ৮৮৪টি পদ।

১০ থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) ৩ লাখ ৬২ হাজার ২৮৯টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন। ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ১৬৬টি পদ।

১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) ৭ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৪টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৬ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৫ জন। ফাঁকা আছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৯টি পদ।

অন্যদিকে ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) ৫ লাখ ১৯ হাজার ৮১২টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ লাখ ৪ হাজার ৫৭৭ জন। ফাঁকা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৫টি পদ।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১৬ হাজার ১১৬টি পদ থাকলেও এসব পদের বিপরীতে কাজ করছেন ৭ হাজার ৮৯০ জন। ফাঁকা রয়েছে ৮ হাজার ১৩৬টি পদ।

প্রথম থেকে ১২তম গ্রেডের গেজেটেড পদগুলোতে নিয়োগ দেয় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আর ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৬ হাজার ৬৪টি এবং অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে ২ লাখ ৯৬ হাজার ১১২টি পদ ফাঁকা রয়েছে। আর বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ১৫ হাজার ২৯টি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে ফাঁকা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ১৫টি পদ।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বছর ঘুরে ফিরল গণঅভ্যুত্থানের জুলাই
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার বাজেট পাস
সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি
পুলিশ পরিচয়ে ব্যবহার করা যাবে না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম: আরপিএমপি কমিশনার
ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
টাঙ্গাইলের নির্ধারিত স্থানে মডেল মসজিদ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন (ভিডিও)
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনালাপ
চুয়াডাঙ্গায় ট্রেন থেকে ফেলে পাউবো কর্মচারীকে হত্যা, পরিবারের মামলা
দেশে নতুন করে আরও ২১ জনের করোনা শনাক্ত
ঢাকার প্রতিটি ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
লুঙ্গি পরে রিকশায় প্যাডেল মেরে ঢাকা থেকে বিদায় নিলেন জার্মান রাষ্ট্রদূত
ইসরায়েলের ৩১ হাজারেরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান (ভিডিও)
ইরানের সাথে আলোচনা করছি না, তাদের কিছু দিচ্ছিও না: ট্রাম্প
আসিফ মাহমুদের অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন ‘আইনটা দেখিনি’
নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন: মির্জা ফখরুল
বিপিএলে নোয়াখালীর অভিষেক, আসছে ‘নোয়াখালী রয়্যালস’
হোটেল থেকে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার, ময়নাতদন্তে যা জানা গেল
আমাদের ডিভোর্স হয়নি, হিরো আলম অভিমান করেছিল: রিয়ামনি
সরকারি উদ্যোগেও কমেনি ইলিশের দাম, খালি হাতেই ফিরছেন ক্রেতারা
মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, বন্ধ থাকবে সব লেনদেন