ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৬

নেই দেশের নাগরিক

২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০৫ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০১ পিএম


নেই দেশের নাগরিক

‘হে আল্লাহ! তুমি এসব কী শাস্তি দিচ্ছ! খাবার আনিয়েও চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে চলে গেলে! আমরা কী এমন পাপ করেছিলাম যে এমন আজাব দিচ্ছ!’ ডুকরে উঠলেন হালেমা। নৌকোর পাটাতনের উপর থপ করে বসে পড়লেন। বুড়ো থুত্থুরে দেহটা আলুথালু হয়ে এলিয়ে পড়ল! ছুটে এল আরিফা। দুই হাত বেড় দিয়ে খাড়া করে ধরল শাশুড়িকে, ‘মা, ভেতরে চলেন। আল্লাহ আমাদের উপর থেকে চোখ তুলে নিয়েছে। আমাদের কথা আর শুনতে পায় না।’

‘কেন আমাদের কথা শুনতে পাবে না? বান্দার কাঁদনে তারও যে অন্তর কাঁদে যে গো! আল্লাহ যে রহমানের রহিম।’ মাথার ঘোমটাটা পুবালি হাওয়ায় সরে যায়। আরও ডুকরে উঠেন, ‘আমরা যে আল্লাহর পিয়ারা নবী মোহাম্মদের উম্মত, আমাদের ডাক খোদাতায়ালা কী করে অস্বীকার করবে? ঠিকমতো ডাকলে সাড়া তাকে দিতেই হবে।’

‘কই আর সাড়া দিচ্ছে? আর কত কী করে ডাকব? আমরা কি একাই ডাকছি? গোটা রোহিঙ্গা জাতি জান খুলে প্রাণ খুলে ডাকছে। আল্লাহ তো এতটুকুও আইচাই করছে না!’ আরিফার ভেতরটা হাহা করে উঠে।

‘মা, আল্লাহর দোষ দিও না। আল্লাহ আমাদের দিকে না তাকালে গতরাতের ঝড়ে আমরা কি কেউ বেঁচে থাকতাম? সবকটা পানির কোন তলায় তলিয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাদের হেদায়েত করেছিল বলেই না আজ আমরা এখনো দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি। আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই আছে গ।’ চোখ মুছল মতি। গামছার আঁচলটা চোখের জলে আধভেজা। এই সাড়ে চারহাত গামছাটায় কত যে কষ্টের ছাপ লেগে আছে তার ইয়াত্তা নেই। মনের কষ্ট চোখ দিয়ে বেরিয়ে এই গামছাতে গিয়েই তো সবুর হয়। জিরোয়। গামছা একদিন ন্যাকড়া হয়ে যাবে, কিন্তু কষ্টগুলো আবারও মাঝে মধ্যে দলা পাকিয়ে হৃদয় ডুকরে অশ্রু হয়ে বেরিয়ে আসবে। তখন আবারও সুতির কোনো নতুন গামছা সে কষ্ট মোছার জন্যে ঘাড়ে এসে জড়ো হবে। গামছা যেন মানুষের কষ্টের ব্লটিংপেপার।

‘চাড্ডে খাবার পাওয়ার একটা সুযোগ ছিল, সেটাও হাত ফসকে গেল! এবার কী যে হবে!’ চোখ ছোট হয়ে এল নুহুর।
‘আবারও হেলিকপ্টার আসতে পারে।’ মতির বুকে আশার ঢেউ।
‘তার কি কোনো গ্যারেন্টি আছে। না আসতেও তো পারে।’
‘না না, ঠিক আসবে, তুই দেখে নিস। একটা হেলিকপ্টারে কি আর ত্রাণ বিলি করে? কত শরণার্থী! দেখ না ক্যানে, এই হেলিকপ্টারটাই হয়তো আবার চক্কর দিতে দিতে এই দিকে ঘুরে আসবে। নাহলে নতুন কোনো কপ্টার।’
‘ওই ভরসা ছাড়ো। এখন একটাই উপায়, যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, নয়াপাড়া ঘাটে পৌঁছতে হবে।’ কথাটা শেষ করেই বৈঠাটা শক্ত করে ধরে বসল নুহু। রোদ দিগন্তের কলি ফুঁড়ে ঝলমলে হতে শুরু করেছে। ঝড়ঝাপ্টা সামলানো নৌকোটা রাতের যন্ত্রণা মুছে সে রোদে রোদ-ছায়া খেলছে। ছইয়ের মটকা বেয়ে সুড়সুড় করে নামছে সদ্য ভূমিষ্ঠ বেলা। তিরতির করে বয়ে চলা নাফ নদীর গা যন্ত্রণা ঝেরে গোলাপি হয়ে উঠছে। দিগন্তের রঙ তার গা’এ মিশে তাকে করে তুলছে আঠারোর যৌবনা। নদীর উচ্ছ্বলা শরীরে যেন বসন্তের পলাশ চুমু দিয়ে উঠছে। একটা মোহমোহি সকাল নদীকে কামনার কামড় দিচ্ছে। দিগন্তের হলুদ-গোলাপি রঙ মেখে মিস্টি সকাল আরও উদ্দাম যৌবনাময়ী হয়ে উঠছে। নুহু ঘুঁত ঘুঁত করে বৈঠা টেনে যাচ্ছে।

শক্ত করে হাল ধরে বে-খেয়াল হয়ে বসে আছে মতি। ভেতরের রক্ত উঠা ‘খক’ ‘খক’ কাশিটা
আচানক গতি পেল! মতি ধড়ফড় করে ছইয়ের দিকে এগিয়ে গেল, ‘কী হলো?’
‘কাশি যে আর থামছেই না! কফ নয়, শুধু দলা দলা রক্ত উঠছে এবার!’ আরিফার চোখে-মুখে উদ্বেগ।
‘এবার মনে হয় আল্লাহ ওকে তুলে নেবে রে......।’ নির্লিপ্ত চোখে আকাশের দিকে তাকালেন হালেমা।
বারো ‘এত নৌকো!’ গাদাগাদি নৌকোর কলোনি দেখে আতিফের চোখ কপালে উঠার জোগাড়। চোখ পানসে করে বলল, ‘এই ঠাসাঠাসি ভিড়ে আমাদের নৌকোটা খুঁজে পাওয়াই তো দুষ্কর!’
‘হ্যাঁ, নৌকোর দেশ।’ বলল সাদ্দাম।
‘হ্যাঁ, তাই তো দেখছি!’ আতিফের চোখে বিস্ময়।
‘আলাদা কোনো চিহ্নোত রয়েছে কি?’ জানতে চাইল সাদ্দাম।
‘আলাদা কোনো চিহ্নোত বলতে গেলে, আমাদেরটা তো ‘ঘাটবাড়ি কৌশা’ নৌকো, কিন্তু এখানে তো অনেকগুলোই ‘ঘাটবাড়ি কৌশা’ নৌকো দেখছি! আলাদা করে চিহ্নিত করা তো খুবই মুশকিল।’
‘তা ছাড়া নৌকোগুলো এমনভাবে গায়ে গা লাগিয়ে আছে ভেতরে ঢোকাও অসম্ভব।’
‘সে তো আরেক খিটকেল। এখন কী করা যায় বল তো।’ সাদ্দামের কাছে বুদ্ধি চাইল আতিফ।
‘তুই বোট থেকে নেমে নৌকোয় হেঁটে হেঁটে যা।’
‘ওভাবে আর কতটা ভেতরে যেতে পারব। মাঝে মধ্যে তো বড়ো বড়ো ফাঁকও রয়েছে। তা ছাড়া সব নৌকোয় তো আমাকে উঠতেও দেবে না।’
‘আর তো কোনো উপায়ও দেখছি নে।’
‘কিছু তো একটা করতেই হবে।’

‘আতিফ, হেলিকপ্টার! বোট লুকোতে হবে, বোট!’ মাথার উপরে ‘ভু’ ‘ভু’ করে একটা হেলিকপ্টার চক্কর কাটতে দেখে আঁতকে উঠল সাদ্দাম। আতিফ, বোটের পিঠে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর লোগো আর জাতীয় পতাকা আঁকা জায়গাটায় উপুড় হয়ে শুইয়ে আড়াল করার চেষ্টা করল, যাতে হেলিকপ্টার থেকে সেসব দেখা না যায়।
সাদ্দামরা ভাবল, হেলিকপ্টারটা মনে হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর। মেজর মহম্মদ আসলামের খুনের কথা জেনে, খুনিকে ধরার জন্যে নদীতে চক্কর কাটছে। কারণ এতক্ষণে বিজিবি’র সেনা কর্মকর্তারা জেনে গেছেন যে সাদ্দামই মেজর আসলামকে খুন করেছে। সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে একটা ধাংড়া নৌকোর গা ঘিষে লাগাল। যাতে করে, হেলিকপ্টার থেকে তাদের নজরে না পড়ে। মাথা গুঁজে চুপ মেরে থাকল সাদ্দাম আর আতিফ। আতিফ তো একেবারে লাশের মতো উপুড় হয়ে শুয়ে থাকল। তারা অপেক্ষা করতে থাকল, হেলিকপ্টারটার এখান থেকে চলে যাওয়ার। কিন্তু কপ্টারটা কোথাও না গিয়ে মাথার ওপরেই ‘ভু’ ‘ভু’ করে চক্কর কাটতে লাগল।

সাদ্দাম মনে মনে গাল দিতে লাগল, শালা হেলিকপ্টারটা এখান থেকে ফুড়ুৎ কাটবে না তো ‘ভু’ ‘ভু’ করে মাথার উপরে কী ফন্দি করছে! সাদ্দামরা দুশ্চিন্তা আর ভয়ের ঠেলায় বুঝতেই পারেনি যে হেলিকপ্টারটাকে চক্কর কাটতে দেখে সমস্ত নৌকোর মানুষেরা হৈ হৈ করে হুল্লোর বাঁধিয়েছে! হাজার হাজার মানুষ চিল-চিৎকার করছে। নৌকোর পাটাতনে ব্যাঙের মতো তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে উপরের দিকে হাত বাড়িয়ে খাবার চাইছে। হাজার হাজার মানুষের খলবল করা হাতগুলোর নড়ানো দেখে মনে হচ্ছে, কোন সমুদ্রের উপকূলে ফুলের উদ্যানে বকফুল হাওয়াতে খিলখিল করে পাপড়ি মেলছে।

নৌকোয় আটকে পড়া মানুষগুলোর হাঁকডাক শুনে শুকনো ঢোক গিলে সাদ্দাম বলল, ‘এ তো রাষ্ট্রসংঘের ত্রাণ বিলিকারি হেলিকপ্টার রে!’
‘তাইই তো মনে হচ্ছে।’ গিরগিটির মতো বুক তুলে মিনমিন করে বলল আতিফ।
‘মনে হচ্ছে না, তাইই। দেখছিস ন্যা, হেলিকপ্টারটার বুকের কাছে রাষ্ট্রসংঘের লোগো আঁকা।’
আতিফ চিলের মতো চোখ ফেড়ে তাকাল। বলল, ‘হ্যাঁ, তাইই তো।’
বলতে বলতে হেলিকপ্টারটার দরজা দিয়ে ঝাঁক ঝাঁক শুকনো খাবারের প্যাকেট নৌকোগুলোর উপরে পড়তে লাগল। হাফ ছেড়ে বাঁচল সাদ্দামরা। সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে কালো রঙের বড় নৌকোর খোল থেকে সরিয়ে নিয়ে ভেতরের দিকে ঢোকার চেষ্টা করল। কানে ভেসে আসছে, ধপাধপ শব্দ। প্যাকেট প্যাকেট খাবার আছড়ে পড়ছে নৌকোর পাটাতনে। কেউ খপ করে ধরে নিচ্ছে, আবার কেউ ঝপাং করে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নদীতে ছিটকে পড়া খাবারের প্যাকেটগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে। একেবারে হুটোপুটি লেগে গেছে। যেন প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত পারে খাবার কুড়িয়ে নেয়।

‘লোক কত রে! লোকে লোকারণ্য!’ ভ্রু টান করল আতিফ।
‘তুই কী ভাবছিলি, ছিটেফোঁটা কয়েকটা নৌকো হবে? আধখানা রাখাইন এই নাফ নদীতেই ভেসে আছে।’ বলল সাদ্দাম।
‘তাই তো দেখছি, নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের থেকে নদীতেই বেশি লোক!’
‘কী আর করবে, ছিন্নমূল মানুষগুলোর কাছে এই আন্তর্জাতিক সীমানার নাফ নদীটাই একমাত্র ভরসা। নদী পেটের ভাত না দিতে পারুক, একটুখানি ঠাঁই তো দিয়েছে। এই ঠাঁইটুকু পাওয়ার জন্যেই তো আমরা এতকিছু করছি।’ কথাটা বলে একবার নদীর দিকে ভ্যালভ্যাল করে তাকাল সাদ্দাম। তারপরে বলল, ‘তুই ভালো করে খুঁজে দেখ, তোদের নৌকোটা এই ভিড়ের মধ্যে কোথাও আছে কি না।’

‘এপাশ ওপাশ তো খোঁজা হয়ে গেল, দেখতে তো পাচ্ছি নে। পাড়ঘাটের দিকে একবার ভালো করে দেখে আসি। দক্ষিণ দিক ঘুরিয়ে বোটটা লাগা। ওই দিকে একটা নৌকোকে ওরকম মনে হচ্ছে।’ আতিফের কথা মতো সাদ্দাম স্পিডবোটটাকে দক্ষিণ দিকে দিয়ে পাড়ঘাটের দিকে নিয়ে গেল। সকাল ততক্ষণে হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে পাড়ঘাট থেকে নদীতে নেমে এসেছে। তাম্বুল তাম্বুল নৌকোগুলোর ছায়া ধীরে ধীরে ছোট হতে শুরু করেছে। হেলিকপ্টারটাও তার কাজ সম্পূর্ণ করে আকাশে মিলিয়ে গেছে।

আতিফ তন্য তন্য করে খুঁজল, কিন্তু নাহ, তাদের নৌকোটার নাগাল পেল না! অনেককে জিজ্ঞেস করল। অনেকের কাছেই খোঁজখবর নিল। কিন্তু নাহ, তার আব্বা, ভাইদের কেউ কোনো হদিস দিতে পারল না। নৌকোর ভিড় ঠেলে ফাঁকার দিকে এগোতে থাকল স্পিডবোটটা। নৌকোকলোনিতে ততক্ষণে সকালের সংসার শুরু হয়ে গেছে। ভেসে আসছে, হাঁড়িকুড়ির হাতাখুন্তির টুংটাং, ঠংঠং শব্দ। কোনো কোনো নৌকোয় রান্নাবান্না চলছে, কোনো কোনোটাই চলছে হেঁসেল গোছানোর কাজ।

নৌকোগুলোতে আর কোনো পশুপাখি নেই। ছাগল-মুরগি যা ছিল সেসব নদীতে ফেলে দিয়ে নৌকো ভার মুক্ত হয়েছে। এরা যখন বাড়ি ছেড়ে ছিল তখন প্রায় সবারই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল কিছু না কিছু নৌকোতে তুলেছিল। ভেবেছিল, বাংলাদেশের কোনো শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিয়ে সেগুলোকে লালন-পালন করবে। খাইয়ে পুষে বড় করবে। এই আপদের দিনে হাতে দুটো পয়সা আসবে। কিন্তু গরু-ছাগলের ঠাঁই তো দূরের কথা নিজেদেরই ঠাঁই না হওয়ায়, একসময় বাড়ির পোষা পশু-পাখিগুলোকে নদীর জলে জীবন্ত ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছে। মন না চাইলেও, হৃদয় না চাইলেও পরিস্থিতি তাদেরকে এই করুণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।

গৃহপালিত পশু-পাখি কোনো অংশে নিজের সন্তানের থেকে তো কম নয়? সন্তানের মতোই গায়েপিঠে বেড়ে উঠে। মায়ার টানে একদিন দুদিন অনেকেই নৌকোতে নিরীহ পশু-পাখিগুলোকে বেঁধে রেখেছিল। কিন্তু যখনই খাবারের জোগানে টান পড়তে শুরু করল তখনই পশু-পাখিগুলোর উপর কোপ পড়ল। তা ছাড়া ততক্ষণে তারা বুঝে গেছে যে তাদেরকে বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী কোনোমতেই আর কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশের ভেতর ঢুকতে দেবে না। ফলে যতদিন না সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে, এই নদীতেই তাদেরকে দিন কাটাতে হবে। চোখে সহ্য হবে না বলে, রাতের অন্ধকারে ঝপাং ঝপাং করে পশু-পাখিগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল নদীর গর্ভে। ‘ভ্যা’ ‘ভ্যা’ করে ভেবিয়ে, ‘হাম্বা’ ‘হাম্বা’ করে হামলে, ‘পক’ ‘পক’ করে ডেকে পশু-পাখিগুলো ছটফট করে ডুবে মারা গেল। অনেকে জবেহ করে খেলো। কখনো কখনো এভাবেই একটা জীবনকে বাঁচাতে আরেকটা জীবনকে বলি হতে হয়। একজনকে ডাঙায় উঠানোর জন্য আরেকজনকে জলে ডুবে মরতে হয়। তখন এক জীবন আরেক জীবনের পরম শত্রু হয়ে উঠে।

‘সমুদ্রের দিকে কি আর যাবি?’ জিজ্ঞেস করল সাদ্দাম।
‘সে তো অনেক দূর। কিন্তু যেতে তো হবেই। লোকটা ফোনে যখন বলেছে, এদিকটাই আছে, তখন নিশ্চয় আশেপাশে কোথাও আছে ওরা। চল, নামুর দিকে যাই।’
‘চল, কিছু দূর তো যাই।’ সাদ্দাম স্পিডবোটটার পিকআপ তুলল হাইয়ে। ‘স্যাত’ ‘স্যাত’ করে জল কেটে ছুটতে লাগল দ্রুতগতির জলযানটা। কিছুটা বেগবান গতিতে যাওয়ার পরেই ‘কচ’ ‘কচ’ করে ব্রেক কষল সাদ্দাম। আতিফ জিজ্ঞেস করল, ‘কী হলো?’
‘বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টহলদারি লঞ্চ! এদিকেই আসছে!’ চোখে আতঙ্কের বলিরেখা সাদ্দামের।
আতিফ মাথা তুলে দেখল আগত লঞ্চটাকে। চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তাই তো!’
‘শুধু কী লঞ্চ, সঙ্গে গুচ্চের স্পিডবোটও আছে!’ সাদ্দাম সতর্ক হলো।
‘ওগুলো তো লঞ্চটাকে গার্ড করে আসছে। এখন উপায়?’
‘আমাদেরকে বোট ঘুরিয়ে নিয়ে আবার উত্তর দিকেই পালাতে হবে। তা ছাড়া তো কোনো পথ নেই। সামনের দিকে গেলেই নির্ঘাত ধরা পড়ে যাব!’
‘আরও পূবদিক ঢলে যাওয়া যাবে না?’
‘সে তো আরেক বিপদ। মায়ানমার সেনাদের খপ্পরে পড়ে যাব। তখন কুকুর থেকে বাঁচতে বাঘের মুখে পড়ার মতো হবে ব্যাপারটা।’
সাদ্দামের কণ্ঠ কাঁপল। তারপর বোটটাকে পেছনের দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলল, ‘অত কিছু ভাবার এখন সময় নেই। আগে নিজের জান বাঁচাই, তারপরে চাচাদের জান বাঁচাতে নামব।’
চলবে...

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৫
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯


বিভাগ : সাহিত্য



খালেদা জিয়াকে নিয়ে তুরস্কের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ

০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২২ এএম


খালেদা জিয়াকে নিয়ে তুরস্কের গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া । ফাইল ছবি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে তুরস্কের গণমাধ্যম। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদুলু এজেন্সি ‘বিরোধীদলীয় নেতাকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোমবার (২ অক্টোবর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও দুইবারের প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের বরাতে বলা হয়, গত ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ফরোয়ার্ড করা আপিলকে ‘না’ জানিয়ে বলেছেন, মন্ত্রণালয় বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তাকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দিতে পারে না।‌ সরকারের আইনগত অনুমতি দেওয়ার সুযোগ নেই। সব কাজ আইনি কাঠামো অনুযায়ী করতে হবে। আইনকে বাইপাস করা, যে কোনো ক্ষেত্রেই একটি খারাপ উদাহরণ তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা আরও বলা হয়, ৭৮ বয়সী বেগম জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন গত ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং উচ্চ লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।

প্রতিবেদনে গত শনিবার ভয়েস অব আমেরিকায় প্রচারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসার অনুমোদন নেওয়ার আগে খালেদা জিয়াকে অবশ্যই কারাগারে ফিরে যেতে হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, জিয়ার দল অবশ্য তার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করেছে এবং খালেদা জিয়াকে তার অবস্থা গুরুতর উল্লেখ করে অবিলম্বে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছে।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বরাতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড লিভার ট্রান্সপ্লান্টের সুপারিশ করেছে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে বিদেশে একটি উন্নত মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। কোভিড মহামারি চলাকালে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ, বর্তমান সরকার তাকে একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাড়িতে থাকা এবং দেশ ছেড়া যাবে না এই দুই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়।

 


রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২২ এএম


রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে এতে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

এই ভূমিকম্পের উৎসস্থল ভারতের মেঘালয় রাজ্য। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।

গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনবার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।

এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত–মিয়ানমার সীমান্ত। এ ছাড়া ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা।

আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি অনুভূত হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এর আগে ১৪ আগস্ট আরেকবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তবর্তী সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়।


কোভিড-১৯ টিকার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন দুই বিজ্ঞানী

০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২৬ পিএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:২২ এএম


কোভিড-১৯ টিকার জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন দুই বিজ্ঞানী
নোবেল পুরস্কারজয়ী কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইজম্যান

চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান রাখায় এ বছর নোবেল পুরস্কার জিতলেন কাতালিন ক্যারিকো ও ড্র ওয়াইজম্যান। সুইডেনের নোবেল অ্যাসেমব্লি অ্যাট ক্যারোলিনস্কা ইন্সটিটিউট সোমবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে তাদের নাম ঘোষণা করে।

নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, নিউক্লিওসাইড বেজ মডিফিকেশন সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইজম্যানকে। তাদের এ আবিষ্কারের ওপর ভর করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবন করা হয়।

১৯০১ সাল থেকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এ যাবত ১২ জন নারী চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন।

চিকিৎসায় সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী হরেন ফ্রেডরিক জি. ব্যান্টিং। তিনি ইনসুলিন আবিষ্কারের জন্য ১৯২৩ সালে নোবেল পেয়েছিলেন। চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি বয়সী নোবেলজয়ীর নাম পেটন রৌস। তিনি ৮৭ বছর বয়সে এ পুরস্কার পান।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।

নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রের পুরস্কারটি সোমবার সুইডেনের স্টকহোমে ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে পদার্থবিজ্ঞানের পুরস্কার। বুধবার রসায়ন ও বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার।

আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।


বিভাগ : সারাবিশ্ব

বিষয় : নোবেলজয়ী


অনুসরণ করুন