শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
Dhaka Prokash

ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব-৪৯

নেই দেশের নাগরিক

‘নবী!’ শব্দটা দুম করে আপনাআপনি আতিফের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। যেন কথাটা ঠোঁটের কোণে কোনোরকমে ঝুলছিল।

‘নাহ, সে ব্যাপারে কিছু জানা গেল না। কোনো নামই প্রকাশ করা হয়নি। আর জে এফ’এর তরফ থেকেও কোনো মুজাহিদের নাম বলা হয়নি। নামটাম জানতে গেলে আরও কিছুক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ মিনমিন করে কথাগুলো বেরিয়ে এল সাদ্দামের মুখ থেকে।

আতিফ টিপটিপ করে তাকিয়ে থাকল নদীর দিকে। মনের উঠোনে দুদ্দাড় করে জড়ো হতে লাগল, চিন্তা দুশ্চিন্তার বেড়াজাল। নবী কি শহিদ? না, যে পালিয়েছে সে নবী? যে ধরা পড়েছে সেও তো নবী হতে পারে! নবী যে ধাতের মুজাহিদ তাতে সে জান থাকতে ধরা দেবে না। তবে কি নবী আজরাইলের হাতে ধরা দিয়ে দিয়েছে? চিন্তার ছাল-পাতা-শেকড় আতিফকে পেঁচিয়ে ধরে। আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ায়। আতিফ মনে মনে দোয়া করে, আল্লাহ আল্লাহ করে যে পালিয়েছে সে যেন নবীই হয়। আতিফ জানে, ট্রেনিংএর সময় তাদের বারবার বলে দেওয়া হয়, তাদের নিজেদের মধ্যে একটাই পরিচয়, তারা পরস্পরের মুজাহিদভাই, প্রত্যেকে সমান সম্মানের অধিকারী। কেউ ছোট বড় নেই। কাজ হাসিল করার সময় প্রত্যেককে সমান মর্যাদা দিতে হবে। সমান গুরুত্ব দিতে হবে। রক্তের এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখানে নগণ্য। এ সব কাজে মায়া মমতা থাকতে নেই। ওসব মনকে দুর্বল করে দেয়। মনকে মোমের মতো গলিয়ে দেয়। এ লোহা-লক্কড় আর গুলি-বারুদ দিয়ে ঘষামাজা করা মন তো আর মোমের মতো গলে গেলে হবে না? এই মনকে শান দেওয়া অস্ত্রের মতো নিষ্ঠুর হতে হবে। হাজার হত্যাতেও যেন এতটুকু বিচলিত না হয়। চোখের জল এখানে হারাম। নিজেকে আল্লাহর হাতে বানানো একটা অস্ত্র ছাড়া অন্যকিছু ভাবাই যাবে না। এ দেহের, এ মনের, এ ভাবনার একজনই মালিক, আর তিনি হলেন মহান আল্লাহপাক। মনের মধ্যে ভালো করে পুষে নিতে হবে যে, আমাদের চোখই তার চোখ, আমাদের ভাবনাই তার ভাবনা, আমাদের জীবন তারই দান করা রুহু। আল্লাহর পথে আমরা উৎস্বর্গিত প্রাণ, এটাই আমাদের একমাত্র আত্মিকসম্পর্ক। এই আত্মিক টানের যেন কোনো ভেদাভেদ না থাকে। ভেদাভেদ দেখা দিলে, লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে না। মিশন বিফলে যাবে। কিন্তু আর জে এফ’এর ধার্মিক এবং তাত্ত্বিক নেতারা যতই এসব কথা বলুন, কোথাও একটু হলেও বন্ধুত্বের টান যেন উগলে ওঠে। উথলে পড়ে দরদ। হাজার নিষেধ সত্যেও সে টান কোনোভাবেই দমে না। আতিফ জানে নবীর সাথে যারা এই মিশনে গেছেন, তারাও তার নিকটজন, মুজাহিদভাই। জন্মভূমি উদ্ধারের কাজে তাদেরও সমান অবদান। আল্লাহর কাছে তারাও সমান কৃতিত্বের অধিকারী। সমান নেকির ভাগিদার। তবুও এই কটা বছর নবীর সাথে তার যে মাখামাখি সম্পর্ক, মিলমিশ, তাতে তারা দুজন হরিহর আত্মা হয়ে উঠেছে। এক পেট, দুই মানুষ। এক ভাবনা, দুই শরীর। সুতরাং কিছু একটা ঘটলে নবীর কথাই তো চট করে মাথায় খেলবে? নবী যে তার হৃদয়ে ছায়ার মতো মিশে থাকে।

‘অত মনমরা হলে হবে না, আতিফ। যদি সত্যি সত্যি কুখ্যাত বালুখালি চৌকি নবীরা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, তাহলে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমাদের আনন্দে নামাজ পড়া উচিত। আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে বলা উচিত, হে আল্লাহ তোমাকে শতকোটিবার সিজদাহ। একবার ভাবত, ওই বালুখালি চৌকিতে কত রোহিঙ্গার জীবন গেছে! কত নিরীহ মানুষকে নিষ্ঠুর বার্মা সেনারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আজ বদলা নেওয়ার দিন। প্রতিশোধের দিন। বার্মা সেনারা জানুক, আর জে এফ’এর ছোবল কত বিষাক্ত। আর জে এফ’এর মুজাহিদদের দাঁতে কত বিষ। নখের আঁচড়ে কত যন্ত্রণা।’ আগুনে ফোটার মতো টগবগ করে ফুটছে সাদ্দাম। প্রতিহিংসার আগুনের আঁচ আতিফের মনেও লাগল। আতিফ আচমকা বলে উঠল, ‘ইস! আজ আমি যদি ওখানে থাকতে পারতাম, আমার জাতিকে বুক ফুলিয়ে বলতে পারতাম, এই দেখো, তোমাদের শরীরের একটা দগদগে ক্ষত’কে সমূলে উপড়ে ফেলে দিলাম। দুনিয়ার একটা দোযখ’কে নিশ্চিহ্ন করে দিলাম। আজ আমার বুক গর্বে ভরে উঠছে, নবী আমার বন্ধু। আত্মার আপনজন। নবী, তুই যেখানেই থাক, তুই স্বয়ং আল্লাহর সঙ্গে আছিস।’ ফোটা ফোটা জল লেগে থাকা কড়াই যেমন আচমকা গনগনে আগুনে পুড়ে তপ্ত হয়ে ওঠে, আর তার ওপর পড়ে থাকা জল ফোটাগুলো চিড়বিড় করে বাষ্পিভূত হয়ে যায়, ঠিক তেমনই প্রতিহিংসার আগুনে ছ্যান ছ্যান করে জ্বলে তার চোখ থেকে কাঁদনের অশ্রু উবে গিয়ে চোখদুটো গোলা পাকিয়ে ওঠে আতিফের। সে কণ্ঠ বেলফাটার শব্দের মতো কড়া করে বলল, ‘আমাকে এখানে আর পড়ে থাকলে হবে না, সাদ্দাম। দ্রুত ফিরে যেতে হবে। মনে হয় না, এভাবে হুটপাট করে আর আব্বাদের খুঁজে পাব। তা ছাড়া সামনেই আমার বড় কাজ পড়ে। সে কাজে আমাকে সফল হতেই হবে। শয়তান মায়ানমার সরকারকে কোনোভাবেই আর খাড়া হয়ে দাঁড়াতে দেওয়া যাবে না। একটা ঘা খেয়ে উল্টে পড়ে যাওয়ার পর, আর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগেই আরেকটা জুতসই ঘা দিতে হবে। যাকে বলে, চড়ের পর চড়, থাপ্পড়ের পর থাপ্পড়।’ দাঁত চিড়বিড় করল আতিফ। সঙ্গে সাদ্দামের দিকে একবার মায়াবি দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, ‘তুই কী করবি?’

‘আমি কী করব মানে? যা করছি তাই করব। ওই মগজধোলাইয়ের কাজ। মুজাহিদ সাপ্লাইয়ের কাজ। আমি সাপ্লাই না দিলে তো আর জে এফ সংকটে পড়ে যাবে!’ বুকের ছাতি ফুলে উঠল সাদ্দামের। আতিফ ভ্রূ কুচকাল, ‘কিন্তু, তুই আজ যা কাণ্ড করলি, তাতে করে তুই কি আর নিরাপদে এই চত্বরে থাকতে পারবি? বি জি বি তো তোকে ফাঁসিতে ঝুলাবে।’
‘সে তো ঠিক কথাই, কিন্তু উপায় কী? আমার কাজটা তো অন্য কেউ করতে পারবে না।’
‘তোর ধারণা ভুল। পৃথিবীতে কোনো কাজ কারো জন্যে পড়ে থাকে না। কোনো জায়গা ফাঁকাও থাকে না। একজন গেলে আরেকজন ঠিক চলে আসে। তবে হ্যাঁ, তুই এতদিন ধরে এই এলাকায় থেকে যে পজিশন তৈরি করেছিস, যে প্রভাব তৈরি করেছিস, সোর্সের যে জাল বিছিয়েছিস তা হয়ত অন্যজন হুট করে এসে সে সব করতে পারবে না, কিন্তু কাজটা বন্ধ থাকবে না। একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে আগের জায়গাটা ঠিক ফিরে আসবে। তোর তৈরি করা রাজত্বে অন্যজন এসে রাজত্ব করবে, এটাই তো সময়ের নিয়ম। ‘স্বাধীন রাখাইন’ তো আর একদিনে আসবে না। তিল তিল করে ভিত তৈরি করে তবেই তো একদিন চরম শীর্ষে পৌঁছাব। আর সে ভিত একটু একটু করে আমাদেরকেই তো তৈরি করে যেতে হবে। মনে রাখিস, আমরা হচ্ছি এক একটা গাঁথনি। তোকে সে কাজে আমাদের বড্ড দরকার। এত দ্রুত তোকে হারালে চলবে না। তুই এক কাজ কর।’
‘কী কাজ?’
‘তুই, আমার সঙ্গে বান্দরবান চল। আর জে এফ’এর ওপর তলার কর্তাদের বলে, তোকে অন্য কাজে পোস্টিং করে দেব। এই বি জি বি’র হ্যাপা তো থাকবে না।’
‘কিন্তু আমি এ জায়গা ছেড়ে কোত্থাও যাব না। বিপদ ছাড়া তো আমাদের জীবন হতে পারে না। আমাদের তো সবসময় মৃত্যুকে হাতে নিয়েই কাজ করতে হয়। মুজাহিদদের ওসব ভয় থাকতে নেই। আরে সাড়ে তিন হাত শরীরে ‘এই আছি এই নাই, ফুড়ুৎ করে উড়ে যাই’ গোছের তো জীবন। তাতে আর অত মৃত্যুভয় মেখে কী লাভ। বরং ওসব মাথার মধ্যে থাকলে, মাথাটাই একটা ভোঁতা লাউ হয়ে যাবে। কোনো করিৎকর্মে লাগবে না। এক কোপ খেতে না খেতেই ‘ভুষ’ করে ফেসে যাবে! ওসব ভূতিলাউএর মতো জীবন বানানো কী দরকার? ওসব চায়লে তো মুম্বাই শহরে গিয়ে অন্ধকার দুনিয়ার একজন কুখ্যাত খুনি হয়ে উঠতে পারতাম। অথবা, লক্ষ্যহীন উদ্দেশ্যহীন দুনিয়া কাঁপানো যেকোনো জঙ্গিসংগঠনের হয়ে কাজ করে কাড়ি কাড়ি ইনকাম করতে পারতাম। জীবনকে বাজি রেখে এই ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবিরে পড়ে থাকতাম না। মনে রাখিস, এই তামাটে রঙের রক্ত-মাংসের দেহের ভেতরে যে রুহুটা আছে, সেটার মালিক আর এখন আমি নই, সেটার মালিক অসহায় শেকড়হীন রোহিঙ্গা জনজাতি। তাদের জন্যেই এ জীবন উৎসর্গীকৃত। তাদের জন্যেই এ জীবন অন্যসব পার্থিব সুখ আহ্লাদ ত্যাগ করে এই নির্বাসনের জীবন কাটাচ্ছে। আমার এই বাইরের খোলটা ঠোঙা মাত্র। এর কোনো জ্বালাপোড়া নেই। ভেতরের রুহুটাই আমার রাখাইন, আমার রোহিঙ্গা। তা ছাড়া সত্যি করে একটা জিনিস ভেবে দেখ, আমি এখানে যত অল্প সময়ে কাজ হাসিল করতে পারব, অন্যরা সেটা পারবে না। শহিদ তো একদিন হতে হবেই। তা না হয়, এখানেই হব।’ একনাগাড়ে বলল সাদ্দাম। তার চোখ ঘোলাটে হয়ে উঠছে। যেন দেহের ভেতরের সেই ‘রোহিঙ্গা রুহু’টা ছিটকে বেরিয়ে আসছে। অন্তরের সেই ‘রুহু’টাই যে বজ্রনির্ঘোষ হুঙ্কার গর্জে উঠছে, তার আঁচ পড়ছে দুইচোখে। ভেতরের সেই জোয়ারি-স্রোত সমস্ত গা-গতর ফুঁড়ে বাইরে হামলে পড়ছে। নাকে মুখে লাগছে হৃদয়ে বারুদ পোড়ার ঝাঁঝ। শান্ত মাথার সাদ্দাম যে আর জে এফ’এর হেলাফেলা মুজাহিদ নয়, সে যে আর জে এফ’এর একজন সাহসী মুজাহিদ, তা তার শরীরের ভেতরের হাড়ের সঙ্গে হাড়ের কটমট দেখে বোঝাই যাচ্ছে। আতিফ সাদ্দামের সেই গনগনে আগুনের মতো জ্বলে ওঠা হৃদয়ে ঘি’এর ছিটা দিল, ‘সবকটা শয়তান বার্মিজ সেনাদের ভিটে ছাড়া করে ছাড়ব, তখন শালোরা হাড়ে হাড়ে টের পাবে, পায়ের তলার মাটি আর মাথার ওপরের ছাদ না থাকার যন্ত্রণা কাকে বলে।’

সাদ্দাম ‘দপ’ করে জ্বলে উঠল, ‘ভিটে ছাড়া কী বলছিস রে! বল, দুনিয়া ছাড়া। সব শালোদেরকে আগুনের গোলায় ছুঁড়ে ফেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারব। বুঝবে, জাহান্নামের আযাব কাকে বলে।’
‘দুম’ করে একটা বিকট আওয়াজ নদীর দিক থেকে ভেসে এল! সাদ্দাম থতমত করে বলল, ‘এখানে আর দেরি করা একদম ঠিক হবে না, আতিফ। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পাহারাদাররা মনে হয় টের পেয়ে গেছে যে আমরা এই চোরা বর্ডার দিয়ে পাড়ে উঠে এসেছি।’
‘ওই জন্যেই কি ফায়ারিং করছে!’ চোখদুটো ড্যাবড্যাব করে নদীর দিকে তাকাল আতিফ।
‘সেটাই মনে হচ্ছে। চল, এখান থেকে দ্রুত কেটে পড়ি।’ পা চালাল সাদ্দাম। পলিমাটির আলপথ। চারপাশে ইতস্তত কাশফুলের বুনো ঝাড়। হাওয়াতে ফিনফিন করে দুলছে। নদীর পাড় ছুঁয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা সাদাবালির ওপরে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করেছে। বালির স্তর যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকেই নরম পলিমাটির ওপরে ঝোপ ঝোপ দুব্রো ঘাসের ঝোপ। দূর থেকে মনে হচ্ছে, একটা সবুজ সিঁথি চুল খাড়া করে শুয়ে আছে। আর সেই সিঁথিতে হাওয়ার দোলা লেগে, ধিনধিন করে নেচে উঠছে ঘাসগুলো। দুব্রো ঘাসের আড়ালে মুখ লুকিয়ে আছে হলুদ চাপাটি ঘাস। ডানার মতো থোড় পাতা ছড়িয়ে দিয়েছে মোথা ঘাস। মাঝে মাঝে দঙ্গল বেঁধে ফুটে আছে জংলি ঝুমকা লতা ফুল। কাঁধে কাঁধ মিলে আছে বককন গাছ। দুপুরের ছায়া এদের গোড়ায় ঝুপ মেরে গেছে। পাশের বালির আস্তরণ থেকে একটা মিহি গরম ভাপও গায়ে লাগছে। দূরে নদীর জলও সূর্যের আলো পেয়ে ঝিলমিল করছে।

বি.দ্র. সৌরভ হোসেনের ‘নেই দেশের নাগরিক’ উপন্যাসটি এবারের একুশে বইমেলায় মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উপন্যাসটি ‘মাওলা ব্রাদার্স’ এর স্টল থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।

আগের পর্বগুলো পড়ুন>>>

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৫
নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৪০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-৩০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৯

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৮

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৭

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৬

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৫

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৪

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২৩

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২২

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২১

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-২০

নেই দেশের নাগরিক: পর্ব-১৯

Header Ad

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত

কোটা আন্দোলনে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের হাতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দল।

এ সময় নিহত আবু সাঈদের বৃদ্ধ বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। সেই সময় ভিসি স্যার আমার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন। আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমি স্যারকে বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হয়। ভিসি স্যার আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ না কেউ খোঁজ রেখেছেন।

এ ছাড়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই সহায়তা করছেন বলেও জানায় আবু সাঈদের পরিবার।

মকবুল হোসেন আরও বলেন, আমার কলিজার টুকরা ছিল আবু সাঈদ। তার প্রাইভেট পড়ানোর (টিউশনের) জমানো টাকায় আমার সংসার চলতো। সন্তান হারিয়েছি, এ শোকের কোনো সান্ত্বনা নেই। বাবা হয়ে সবচেয়ে ভারী কাজ হলো সন্তানের লাশ কাঁধে নেওয়া।

এখন শুধু সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চান বৃদ্ধ এ বাবা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি মহোদয়ের নির্দেশে আবু সাঈদের বাবা-মায়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় যোগাযোগ রাখছে। ভিসি স্যার নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন, পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে আজকে সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্ক মোড়ে কোটা সংস্কারে দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মিছিলের সম্মুখে থেকে বুক পেতে দেওয়া আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনার পর আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলাজুড়ে। নিহত আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০৯টি। নাশকতা ও সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ২০৯টি মামলায় ২৩৫৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সারাদেশে সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে ঢাকায় ৬৩ ও ঢাকার বাইরে ২০৩ জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

এদিকে আজ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত অনেকবার গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পুলিশের কারণে তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদান-প্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক বলেছেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধা কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ রেখেছে। এটি মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু পরিষ্কার হওয়া দরকার, বাকি পদে কাদের নেওয়া হবে। আমরা বাকি ৯৫ শতাংশ কোটা নিয়ে আদালতের সঙ্গে আইনি প্রক্রিয়ায় বোঝাপড়া করব।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে নরসিংদীর পাঁচদোনায় সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন পরিদর্শন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনাসভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এই পাঁচদোনা মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্মৃতিধন্য এই স্থানে নির্মাণ করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। দুঃখের বিষয়, সেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সেই হামলা চালানো হয়েছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী ও বিএনপির ক্যাডাররা মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সেই গর্বের ধন আজ পরাজিত শক্তির কাছে আক্রান্ত হচ্ছে।

এসময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রস্তুত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, কোটার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত গ্রহণের জন্যও আদালতকে অনুরোধ জানানো হবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, যারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে, তারা কখনো ছাত্র হতে পারে না। বিএনপি, জামায়াত ও রাজাকারের দল এ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের কার্যকলাপে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যারা আঘাত করেছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি বিএনপি, জামায়াত, শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান খান, নরসিংদী সদর আসনের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরো, পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক চেয়ারম্যান হেলাল মোর্শেদ প্রমুখ।

সর্বশেষ সংবাদ

আবু সাঈদের পরিবারকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
সহিংসতার অভিযোগে ঢাকায় ২০৯ মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটার বাইরে বাকি ৯৫ শতাংশ নিয়ে আদালতে বোঝাপড়া করব’
কোটা আন্দোলনে নিহত রুদ্রের নামে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকের নামকরণ
সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসা-রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী
এক সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ কোটি টাকা লোকসান
পাকিস্তানের ইসলামাবাদ-পাঞ্জাবে ১৪৪ ধারা জারি
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুরুল হক নুর
ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই সরকারের: মির্জা ফখরুল
নরসিংদী কারাগার থেকে লুট হওয়া ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার
বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারত
মোবাইল ইন্টারনেট কবে চালু হবে, জানাল বিটিআরসি
পুলিশকে দুর্বল করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা-ধ্বংসযজ্ঞ: ডিবি হারুন
মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে
অলিম্পিক উদ্বোধনের আগেই প্যারিসে উচ্চগতির রেল নেটওয়ার্কে ভয়াবহ হামলা
তারেক রহমানের নির্দেশেই রাষ্ট্রের ওপর হামলা হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শিক্ষার্থীদের হত্যা করে সরকারের ওপর দায় চাপানো হয়েছে: ওবায়দুল কাদের
‘বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ত ঝরছে’, মমতাকে কড়া বার্তা দিল্লির
বাজারে সরবরাহ বাড়লেও সবজির দামে এখনো অস্বস্তি